জিতে সিরিজ় শেষ করল ভারত। টেস্ট সিরিজ়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে চুনকাম হলেও সাদা বলের ক্রিকেটে দাপট দেখাল তারা। সূর্যকুমার যাদবেরা দেখিয়ে দিলেন, সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতকে হারানো কতটা কঠিন। অহমদাবাদে পঞ্চম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সিরিজ় জিতল ভারত। শনিবার ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলঘোষণা। তার আগে এই জয় হাসি ফোটাবে কোচ গৌতম গম্ভীরের মুখে।
অহমদাবাদে প্রথমে ব্যাট করে ২৩১ রান করে ভারত। অর্ধশতরান করলেন তিলক বর্মা ও হার্দিক পাণ্ড্য। রান পেলেন অভিষেক শর্মা ও সঞ্জু স্যামসনও। দক্ষিণ আফ্রিকা রান তাড়ার শুরুটা ভাল করলেও মাঝপথে খেই হারাল। একের পর এক উইকেট পড়ল। বল হাতে ৪ উইকেট নিলেন বরুণ চক্রবর্তী। সিরিজ়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট কেকেআরের স্পিনারের দখলে। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ২০১ রানে শেষ হল দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। ৩০ রানে জিতে সিরিজ় ৩-১ জিতল ভারত।
এই জয়ের মধ্যে কোচ গম্ভীরের চিন্তার কারণ হয়ে থাকল অধিনায়ক সূর্যকুমারের ফর্ম। এই সিরিজ়েও রান পেলেন না তিনি। একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থ হলেন। বিশ্বকাপে এ রকম ফর্মে থাকলে ভুগতে হতে পারে ভারতকে। পাশাপাশি সহ-অধিনায়ক শুভমন গিলের চোট নিয়েও চিন্তা থাকবে গম্ভীরের। শেষ দুই ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। যে তিন ম্যাচে খেলেছেন, তাতেও রান পাননি। অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের ফর্ম ছাড়া চিন্তার আর কোনও কারণ নেই গম্ভীরের।
শুভমন না থাকায় এই ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন সঞ্জু। তা কাজে লাগালেন তিনি। শুরু থেকে হাত খুললেন। তাঁর একটি শটে তো আহতও হলেন আম্পায়ার রোহন পণ্ডিত। ফলে খেলা কিছু ক্ষণ বন্ধ থাকল। অপর ওপেনার অভিষেক নিজের স্বাভাবিক খেলা খেললেন। বোলারকে থিতু হতে দিলেন না। দুই ওপেনারের দাপটে পাওয়ার প্লে-তে ৬৫ রান করল ভারত। পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভারে কর্বিন বশের বলে আউট হলেন অভিষেক। ২১ বলে ৩৪ রান করলেন তিনি।
স্যামসন করলেন ২২ বলে ৩৭ রান। শুভমন ফর্মে নেই। তাঁর জন্য সুযোগ পাচ্ছেন না সঞ্জু। একটি সুযোগ পেয়েই তিনি দেখিয়ে দিলেন কী করতে পারেন। এর পরেও কি শুভমনকেই খেলিয়ে যাবেন গম্ভীর? যদি বিশ্বকাপে শুভমন ব্যর্থ হন, তা হলে তার দায় কিন্তু নিতে হবে গম্ভীরকে।
অধিনায়ক সূর্য নামার পর রানের গতি কিছুটা কমে যায়। মারতে পারছিলেন না সূর্য। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, ছন্দ পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে তুলে মারতে গিয়ে সাত বলে ৫ রান করে আউট হলেন। সূর্য ব্যর্থ হলেও নজর কাড়লেন হার্দিক। বুঝিয়ে দিলেন, এখন সম্পূর্ণ সুস্থ তিনি। শুধু তাই নয়, ফর্মেও রয়েছেন। শনিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ভারতীয় দল ঘোষণার আগে হার্দিকের ফর্ম স্বস্তি দেবে ভারতীয় সমর্থকদেরও।
কটকে প্রথম ম্যাচে ২৮ বলে ৫৯ রান করেছিলেন হার্দিক। মেরেছিলেন ছ’টি চার ও চারটি ছক্কা। ২১০.৭১ স্ট্রাইক রেটে রান করেছিলেন তিনি। ভারতীয় অলরাউন্ডার অহমদাবাদে আরও বিধ্বংসী ব্যাট করলেন। প্রথম বলেই ছক্কা মেরে শুরু করেছিলেন তিনি। তাঁর ছক্কায় আহত হন বাউন্ডারির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ক্যামেরাম্যান। আর থামানো গেল না হার্দিককে। জর্জ লিন্ডের পরের ওভারে জোড়া ছক্কা মারলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারেরা বুঝতে পারছিলেন না তাঁকে কোথায় বল করবেন।
হার্দিক থাকায় সুবিধা হল তিলক বর্মারও। তিনিও চাপ ছাড়া খেললেন। মাত্র ১৬ বলে অর্ধশতরান করলেন হার্দিক। ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধশতরান করলেন তিনি। দ্রুততম যুবরাজ সিংহের ১২ বলে ৫০। অর্ধশতরানের পরেও থামেননি হার্দিক। শেষ ওভারে ছক্কা মারতে গিয়েই আউট হলেন। ২৫ বলে ৬৩ রানের ইনিংস খেললেন ভারতের ডানহাতি অলরাউন্ডার। পাঁচটি চার ও পাঁচটি ছক্কা মারলেন। কটকের থেকেও বেশি স্ট্রাইক রেটে (২৫২) রান করলেন।
অর্ধশতরানের পর গ্যালারিতে বসে থাকা বান্ধবী মাহিকা শর্মাকে চুম্বন ছুড়লেন হার্দিক। কয়েক দিন আগেই মাহিকার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে এসেছে। বান্ধবীকে নিয়ে সমাজমাধ্যমে সরবও হয়েছিলেন তিনি। এ বার ব্যক্তিগত মাইলফলকের পর সেই বান্ধবীকেই চুম্বন ছুড়লেন হার্দিক। পাশাপাশি দর্শকদের দিকেও কয়েকটি চুম্বন ছুড়লেন ভারতীয় ব্যাটার।
এই ম্যাচে আরও একটি নজির গড়লেন হার্দিক। বিশ্বের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসাবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২০০০ রান ও ১০০ উইকেটের মালিক হলেন তিনি। চলতি সিরিজ়েই ১০০তম উইকেট নিয়েছেন তিনি। এ বার হল ২০০০ রানও। হার্দিক ছাড়া বাংলাদেশের শাকিব আল হাসান ও আফগানিস্তানের মহম্মদ নবির এই কীর্তি রয়েছে।
হার্দিকের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে তিলকের ইনিংস ঢাকা পড়লেও তিনি নিজের কাজ করলেন। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৪২ বলে ৭৩ রান। ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে তিন নম্বর জায়গা প্রতি ম্যাচে আরও পাকা করছেন তিনি। তিলক এখন সূর্যের বড় ভরসা। শেষ দিকে তিন বলে ১০ রান করলেন শিবম দুবে। ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৩১ রান করল ভারত।
আরও পড়ুন:
২৩২ রানের লক্ষ্য বড় হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে শুরুটা ভাল করেন কুইন্টন ডি’কক। ভারতের মাটিতে তাঁর রেকর্ড কেন ভাল, তা আরও এক বার দেখিয়ে দিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার। অপর ওপেনার রিজ়া হেনড্রিক্স এই ম্যাচেও রান পেলেন না। ১৩ রান করে বরুণ চক্রবর্তীর শিকার হলেন।
ডি’ককের সঙ্গে ভাল জুটি বাঁধেন ডেওয়াল্ড ব্রেভিস। হাত খুলে খেলছিলেন দু’জনে। বরুণের এক ওভারে ২৩ রান করলেন তাঁরা। ১০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল ১ উইকেটে ১১৮। দেখে মনে হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত লড়াই হবে। ভারতকে খেলায় ফেরালেন জসপ্রীত বুমরাহ। ৩৫ বলে ৬৫ রান করা ডি’ককে আউট করলেন তিনি। পরের ওভারেই হার্দিকের বলে ফিরলেন ব্রেভিস। করলেন ১৭ বলে ৩১ রান।
তার পরেই খেই হারাল দক্ষিণ আফ্রিকা। এক ওভারে এডেন মার্করাম ও ডোনোভান ফেরেইরাকে আউট করলেন বরুণ। ডেভিড মিলারের উইকেট গেল অর্শদীপ সিংহের দখলে। মিলার আউট হওয়ার পর খেলার ভাগ্য স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। স্পেলের শেষ ওভারে জর্জ লিন্ডেকেও আউট করলেন বরুণ। ৪ ওভারে ৪ উইকেট নিলেও ৫৩ রান দিলেন তিনি।
বরুণ রান দিলেও কৃপণ বোলিং করলেন বুমরাহ। অহমদাবাদে পুরনো বুমরাহকে দেখা গেল। দ্বিতীয় স্পেলে ফিলে মার্কো জানসেনকে আউট করলেন তিনি। তত ক্ষণে খেলা দক্ষিণ আফ্রিকার হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শুরুটা গম্ভীর মুখে হলেও শেষ হাসি হাসলেন গৌতিই।