কীর্ণাহারে পুজো। নিজস্ব চিত্র
লকডাউনের জেরে বাংলা নববর্ষের আগেই তালা ঝুলে গিয়েছিল দোকানে দোকানে। প্রস্তুতি নিয়েও হালখাতা করতে পারেননি দোকানদারেরা। মুষড়ে পড়েছিলেন তাঁরা। অক্ষয় তৃতীয়াও কাটল চরম হতাশায় কাটল তাঁদের।
হালখাতা, অক্ষয় তৃতীয়া ও রামনবমী দীর্ঘদিন ধরেই বাঙালির ব্যবসার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ওইসব দিনে ব্যবসার পুরনো খাতা বদলে নতুন খাতা খোলেন ব্যবসায়ীরা। সেই জন্য দিনটি হালখাতা হিসেবে পরিচিত। অধিকাংশ ব্যবসায়ী পয়লা বৈশাখকেই হালখাতা হিসেবে বেছে নিলেও কেউ কেউ অক্ষয় তৃতীয়া বা অনেকে রামনবমীর দিনও হালখাতা করেন।
সারা বছর যাঁরা দোকানে কেনাকাটা করেন হালখাতার দিন চিঠি পাঠিয়ে তাঁদের নিমন্ত্রণ করা হয়। যাদের ধারবাকি আছে তাঁরা পুরো
অথবা আংশিক মিটিয়ে দেন। যাদের বাকি নেই তাঁরাও কিছু টাকা অগ্রিম জমা রাখেন। সারা বছরের হিসেব চুকিয়ে নতুন খাতায় ওইসব ক্রেতাদের নাম নথিভুক্ত করা হয়। মিষ্টিমুখের পাশাপাশি ক্রেতাদের ক্যালেন্ডার সহ বিভিন্ন উপহার দেওয়ার রীতিও প্রচলিত আছে।
হালখাতায় সংগৃহীত টাকা দিয়ে দোকনদারেররা আবার মহাজনের হালখাতা করেন। কিন্তু এ বারে সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে দেশব্যাপী লকডাউন। নিমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে, ক্যালেন্ডার ছাপিয়ে এমনকি মিষ্টির বায়না দিয়েও পয়লা বৈশাখ হালখাতা
করতে পারেননি দোকানদারেরা। একই অবস্থা হয়েছে অক্ষয় তৃতীয়াতেও।
সাঁইথিয়ার বস্ত্র ব্যবসায়ী সুরেন দাস, নানুরের স্টেশনারি দোকানদার অনিমেষ রায়রা বললেন, ‘‘আমরা অক্ষয় তৃতীয়াতেই হালখাতা করি। সারা বছরের বকেয়া টাকা আদায় হয়। সেই টাকায় আমরা মহাজনের টাকা মেটাই। সেই মতো কার্ড ও ক্যালেন্ডার ছাপানো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লকডাউনের জেরে সব আটকে গেল। এখন কী করে বকেয়া আদায় করব আর কী করেই বা মহাজনের টাকা মেটাব তা ভেবে পাচ্ছি না।’’
একইরকম হতাশ পয়লা বৈশাখ যাঁদের হালখাতা ছিল সেইসব ব্যবসাদারেররাও। কীর্ণাহারের বস্ত্র ব্যবসায়ী সুবীর মণ্ডল, ময়ূরেশ্বরের লোহার ব্যবসায়ী ফটিক দে-রা বললেন, ‘‘কার্ড, ক্যালেন্ডার
ছাপিয়েও পয়লা বৈশাখ হালখাতা করতে পারিনি। ভেবেছিলাম নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে অক্ষয় তৃতীয়ায় সেই ঘাটতি পূরণ করে নেব। সেই আশাতেও জল ঢেলে দিল লকডাউন।’’
ক্রেতাদেরও মন খারাপ। আমোদপুরের বিমান প্রামাণিক, কীর্ণাহারের অশোক রায় বলেন, ‘‘প্রতিবার হালখাতায় বাকি মিটিয়ে মিষ্টিমুখের পাশাপাশি ক্যালেন্ডার-সহ বিভিন্ন রকম উপহার মেলে। এ বারে তা হল না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ধার তো মেটাতেই হবে। তবে ওই অনুষ্ঠানের আনন্দটা হবে কি না তার নিশ্চয়তা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy