Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Acidity and Alcohol

গ্যাসট্রাইটিস থাকলে নো অ্যালকোহল প্লিজ!

বাঙালি এখন দেশকালের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক হয়ে গিয়েছে। ‘জিন, শেরি, শ্যাম্পেন’-এর ফোয়ারা ছাড়া আনন্দ উৎসব জমে না। তাই নিউ ইয়ার ইভের আগে লিকার শপের লাইন এটিএম বা ব্যাঙ্কের লাইনের থেকে কম দীর্ঘ নয়। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপানের ‘অনুপানে’ পেট রোগা বাঙালির অম্বলের অসুখ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কী করলে অ্যাসিডিটির হাত থেকে রেহাই মিলবে জানালেন খ্যাতনামা গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট সুজিত চৌধুরী।উৎসবমুখর দিনে অ্যাসিডিটি প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখুন।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৫:১৮
Share: Save:

গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের গুঁতোয় শীত কাবু। কিন্তু পৃথিবীর সূর্য প্রদক্ষিণ তো আর থেমে নেই। গুটিগুটি পায়ে ডিসেম্বর গুডবাই করছে। শীত না থাকলেও বর্ষশেষের আনন্দ উৎসবে কিন্তু ভাঁটা পড়েনি বিন্দুমাত্র। ইদানীং আবার মদ্যপান ছাড়া পার্টি জমে না। কিন্তু একথাও সমান ভাবে সত্যি, মদ্যপান ছাড়াও দারুণ ভাবে আনন্দ করা যায়। সে যাই হোক। মদ্যপান নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। নইলে আনন্দ উৎসব নিরানন্দে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা ষোলোআনা।

স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা যে সব খাবার খাই, তা হজমের জন্য পাকস্থলী থেকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নিঃসৃত হয়। মদ্যপান করলে পাকস্থলী থেকে অ্যাসিড নিঃসরণ বেড়ে যায়। আর অ্যালকোহলের সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রচুর ভাজাভুজি খাওয়ার চল আছে। এক দিকে চিকেন, মাটন, প্রন। তাও আবার ডুবো তেলে ভাজা (ডিপ ফ্রাই)। একেই অ্যানিম্যাল প্রোটিন, তার সঙ্গে ডিপ ফ্রাই। অ্যাসিডিটি অবধারিত। এমনিতেই প্রাণীজ প্রোটিন অ্যাসিড সিক্রেশন বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে ভাজা খাবারও হাইপার অ্যাসিডিটির কারণ। অবশ্য তার মানে এই নয় যে, খালি পেটে মদ্যপান করবেন। তাহলে কিন্তু সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। আর যাদের গ্যাসট্রাইটিসের সমস্যা আছে তাদের কাছে মদ্যপান বিষপানের সমতূল। যদিও সোশ্যাল ড্রিঙ্কিং নিয়ে কোনও ছুঁৎমার্গ না থাকাই ভাল। তবু একটা কথা মনে রাখা উচিত যে, মাত্রাছাড়া মদ্যপান কখনওই কাম্য নয়। নিজেদেরই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ষাট মিলিলিটারের বেশি অ্যালকোহল গ্রহণ করবেন না। অনেকে সেলিব্রেশনের আনন্দে এর দ্বিগুণ পান করে বিপদে পড়েন। অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে প্রবল অ্যাসিডিটি, বমি, ব্রেন ফাংশন এলোমেলো হয়ে মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

উৎসবমুখর দিনে অ্যাসিডিটি প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখুন:

ভাজার পরিবর্তে সেঁকা, বেকড অথবা গ্রিলড স্ন্যাক্স খেলে অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা কমবে।

ফ্রুট স্যালাড বা যে কোনও স্যালাড অথবা সেঁকা বাদাম, ড্রাই ফ্রুটস সহযোগে মদ্যপান করতে পারেন।

অনেকে অ্যাসিডিটি প্রতিরোধে প্যান্টাপ্রাজোল জাতীয় প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর খেয়ে নেন। জেনে রাখুন এই ধরনের ওষুধ কিন্তু চটজলদি কাজ করতে পারে না। এই ওষুধ কার্যকর হতে চার পাঁচ দিন সময় লাগে। আর কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ দিন এই ধরনের ওষুধ খেতে হয়। তাই দরকার হলেই একটা প্যান্টাপ্রাজোল খাবেন না। সাধারণ অ্যান্টাসিড বেশি উপযোগী।

খালি পেটে মদ্যপান একেবারেই নয়।

মদ্যপানের আগে বা পরে ব্যথার ওষুধ খাবেন না। এতে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ফ্যাটি লিভার থাকলে সংযত জীবন যাপন করা উচিত। নইলে লিভার ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ে।

ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যা থাকলে এক পেগের বেশি মদ্যপান অনুচিত। তাও যদি রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে তবেই।

মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানে হার্টের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

মদ্যপানের সঙ্গে ধূমপান করলে আচমকা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ে।

কোনও ক্রনিক অসুখের কারণে যারা স্টেরয়েড খাচ্ছেন তারা মদ্যপান করবেন না।

ক্রনিক হাঁপানি থাকলে মদ্যপানের ঝুঁকি নেওয়া অনুচিত।

চার পেগের বেশি মদ্যপানে শুধু যে শারীরিক অসুবিধে হয় তা নয়, নানান সামাজিক সমস্যা ও দূর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে।

নতুন বছর ভাল কাটুক, সবাই ভাল থাকুন।

ছবি: সংগৃহীত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

New Year Eve New Year Party Alcohol New Year 2017
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE