অ্যাডলফ হিটলার কী করতে পারতেন, তা দুনিয়া দেখেছে। তবে তাঁর ‘অক্ষমতা’ বা বলা ভাল জিনগত অক্ষমতা নিয়ে কিছু তথ্য দিল তাঁরই রক্তে মাখা এক টুকরো কাপড়। যেটি পাওয়া গিয়েছিল বার্লিনে হিটলারের বাঙ্কারের স্টাডি রুম থেকে। যে ঘরের সোফায় বসে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী হয়েছিলেন নাৎসি একনায়ক, কাপড়টি সেই সোফা থেকেই কেটে নিয়েছিলেন আমেরিকার এক সেনাকর্মী। যা সম্প্রতি বিশদে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।
রক্ত মাখা ওই কাপড়ের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, হিটলার এক জিনগত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। যে রোগ থাকলে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের প্রজনন অঙ্গের সম্পূর্ণ বিকাশ হয় না। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা প্রজননে এবং সুস্থ যৌনজীবনেও অক্ষম হন।
রোগের নাম কালম্যান সিনড্রোম। সমীক্ষা বলছে, এই রোগে আক্রান্তদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে এক জনের গোপনাঙ্গ আকারে ছোট অথবা অপূর্ণ থাকে।
বিষয়টি এতটাই বিতর্কিত, যে এ নিয়ে প্রথমটায় কাজই করতে চাননি জিন বিজ্ঞানী টুরি কিং।
হিটলারের জিনে যে এ রোগের বীজ রয়েছে, সে কথা দশ বছর আগেও এক বার জানা গিয়েছিল। হিটলারের সঙ্গে পিতৃসূত্রে জুড়ে থাকা এক আত্মীয়ের লালা পরীক্ষা করিয়ে ২০১৫ সালে ওই তথ্য প্রকাশ্যে আনেন এক বেলজিয়ান সাংবাদিক। সেই নমুনার ডিএনএ পরীক্ষাতেই জিনগত রোগের উপস্থিতির সম্ভাবনার কথা জানা যায়। তবে এ বারের তথ্যটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি খাস হিটলারের রক্তমাখা কাপড় থেকেই ডিএনএ পরীক্ষা করে পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
রক্তমাখা কাপড়টি পরীক্ষা করেছেন এক মহিলা জিনবিজ্ঞানী টুরি কিং। তাঁর সঙ্গে ওই বিশ্লেষণে যোগ দিয়েছিলেন নাৎসি যুগের ইতিহাস নিয়ে চর্চাকারী ইতিহাস গবেষক অ্যালেক্স কে। এঁদের এক ছাতার তলায় এনেছিলেন ব্রিটেনের জনসম্প্রচার মাধ্যম চ্যানেল ৪-এর কর্তৃপক্ষ। হিটলারের রক্তমাখা কাপড়ের ডিএনএ পরীক্ষা তাঁরা কী বুঝলেন এবং তা হিটলারের মনেরজগতে কোনও প্রভাব ফেলেছিল কি না, হিটলারের স্বৈরাচারী হওয়ার নেপথ্যে তাঁর জিনেরও কোনও ‘হাত’ আছে কি না এই সব বিচার বিশ্লেষণ নিয়েই একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছে ওই চ্যানেল। নাম দিয়েছে, ‘হিটলারস ডিএনএ: ব্লুপ্রিন্ট অফ এ ডিক্টেটর’। সেই তথ্যচিত্রের কিছু প্রকাশিত অংশ থেকেই বাইরে এসেছে ডিএনএ বিশ্লেষণের তথ্য।
বিষয়টি এতটাই বিতর্কিত, যে এ নিয়ে প্রথমটায় কাজই করতে চাননি জিন বিজ্ঞানী টুরি। কারণ, তাঁর মনে হয়েছিল এই নিয়ে সমস্যা হতে পারে। নিজ ক্ষেত্রে টুরির কাজের সুনাম রয়েছে। তিনি প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছরের পুরনো জীবাশ্ম থেকে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় রিচার্ডকে। তাই হিটলার সংক্রান্ত গবেষণা নিয়ে তিনি অত্যন্ত সাবধানী ছিলেন। শেষে সিদ্ধান্ত নেন। টুরি বলেছেন, ‘‘ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম কারণ, আমার কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম, আমি যেটুকু করব যথাযথ ভাবে কোনও রকম ফাঁক না রেখে করব।’’ তবে পরীক্ষার ফল হাতে পেয়ে বিস্মিত হন টুরিও। তিনি বলেছেন, ‘‘পরীক্ষার পরে যে ফল হাতে এসেছে, তা দেখলে হিটলার নিজেকেই বোধ হয় গ্যাস চেম্বারে পাঠাতেন।’’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পূর্বপুরুষের শরীরে কোনও রোগ থাকলে জিনে তার বীজ থাকেই।
কী কী রোগের খোঁজ মিলেছে হিটলারের জিন বিশ্লেষণে? ক্যালম্যান সিনড্রোম তো বটেই, অটিজ়ম, স্কিজ়োফ্রেনিয়া থেকে শুরু করে বাইপোলার ডিজ়অর্ডারের মতো মানসিক অসুখের তথ্যও রয়েছে হিটলারের জিনে। তবে তার মানে এই নয় যে এই সব রোগ হিটলারেরও ছিল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পূর্বপুরুষের শরীরে কোনও রোগ থাকলে জিনে তার বীজ থাকেই। ডিএনএ এমনই জিনিস, যাতে জিনের সমস্ত তথ্য মজুক থাকে। কিন্তু সেই জিনের সমস্যা ব্যক্তিবিশেষের শরীরে পড়বে কি না, তা, তাঁর জীবন যাপন এবং আরও অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। পুরোটাই ব্যক্তি বিশেষে বদলে বদলে যায়। একই জিন থাকা ভাইয়ের শরীরে যে রোগ দেখা গেল, তা দাদার শরীরে হল না এমনও হয়েছে। তাই ঠিক কোন একটি বা একাধিক অসুখে হিটলার আক্রান্ত ছিলেন তা শুধু জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় হয়তো। তবে এটাও ঠিক যে, সে সম্ভাবনা আবার পুরোপুরি উড়িয়েও দেওয়া যায় না।