E-Paper

স্তনের কর্কট রোগ দ্রুত চিহ্নিত করতে চিকিৎসা পরিকাঠামোর বিকেন্দ্রীকরণে নজর

স্তনের কর্কট রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি ও উচ্চ মৃত্যুহার জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গভীর উদ্বেগের বিষয়। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, কিন্তু তা হচ্ছে কই?

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫ ০৯:৪৭

স্তনের কর্কট রোগের চিকিৎসায় সব চেয়ে জরুরি, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়া। চিকিৎসকেরাজানাচ্ছেন, যত দ্রুত রোগ ধরা পড়বে, ততই বাড়বে সুস্থতার হার। প্রথম পর্যায়ে রোগের ধরা পড়ার জন্য নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এর ফলে স্তনে কোনও পরিবর্তন ঘটলে দ্রুত ধরা পড়তে পারে।

কী ভাবে করতে হয় এই পরীক্ষা?

কর্কট রোগের শল্য চিকিৎসক সৈকত গুপ্ত জানাচ্ছেন, প্রতি মাসে ঋতুস্রাব শেষ হওয়ার কয়েক দিন পরে এই পরীক্ষা করা যেতে পারে। এর জন্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতেহবে, স্তনের আকার বা চামড়ায়কোনও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে কিনা। এর পরে শুয়ে পড়ে আঙুলের ডগা দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে স্তনে কোনও পিণ্ড বা অন্য পরিবর্তন বোঝা যাচ্ছে কিনা।

কী কী লক্ষণ দেখা গেলে সতর্ক হতে হবে?

স্তনে যন্ত্রণাহীন পিণ্ড বা লাম্প দেখলে, বৃন্ত থেকে রক্তক্ষরণ হলে, বৃন্ত ভিতরের দিকে ঢুকে গেলে,স্তনের চামড়া ভিতরের দিকে চলে যাওয়া বা ডিম্পলিং হওয়া কর্কট রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলির অন্যতম, জানাচ্ছেন শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার। এর মধ্যে কোনওটি দেখা গেলে দ্রুত যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে। কর্কট রোগের টিউমারে সাধারণত ব্যথা থাকে না বলে অনেকেই যথেষ্ট গুরুত্বদেন না। এই বিষয়টি নিয়ে তাই সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। ব্যথাযুক্ত টিউমারের চেয়ে অনেক বেশি চিন্তার কারণ ব্যথাহীন টিউমার। পরীক্ষায় রোগ নির্ণয় হলে রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী শুরু হবে চিকিৎসা।

তবে চিকিৎসা পেতে পরিকাঠামোগত এবং আর্থ-সামাজিক বাধাও রয়েছে। শহরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্কট রোগের আধুনিক চিকিৎসামিললেও গ্রামাঞ্চলে সেই পরিকাঠামো এখনও যথেষ্ট নয়। সেখানকার বাসিন্দাদের তাই যেতে হয় জেলা হাসপাতালে বা কলকাতায়।দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে চিকিৎসা করানো বহু দিক থেকেই কষ্টসাধ্য বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কারণ, দরিদ্র পরিবারে রোগিণীকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া মানে একদিনের কাজের টাকা না পাওয়া, ঘরবাড়ি দেখাশোনার কেউ না থাকা। আবার সরকারি পরিকাঠামোয় চিকিৎসা বিনামূল্যে মিললেও হাসপাতালে যাতায়াত, বাইরেখাওয়ার খরচটুকু জোগাতেও হিমশিম খায় বহু পরিবার। এই সব বাধায় কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা মাঝপথে থমকে যায়। নিম্নবিত্ত পরিবারের বহু মহিলা নিজেরাও চিকিৎসার দিকটি অবহেলা করেন। কারণ, তাঁরা পরিবারের খরচ বাড়াতে সঙ্কোচ বোধ করেন।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আবার কিছু ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু করিয়েও খরচ টানতে না পারায় মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসা। টাকা জোগাড় করে পুনরায় চিকিৎসা শুরু করলেও তত দিনে রোগ ছড়িয়ে পড়ে আরও। অতএব, স্তনের কর্কট রোগে মৃত্যুর হার কমাতে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ একান্ত প্রয়োজন বলে মত চিকিৎসকদের।

দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, ‘‘স্তনের কর্কট রোগের চিকিৎসা দ্রুত শুরু করতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। সেই প্রয়োজন মেটাতে এ রাজ্যে স্ক্রিনিং কয়েকটি ধাপে করায় জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ১৫ হাজার আশাকর্মীকে এর জন্যপ্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেল্ফ এগজ়ামিনেশনের পাঠ দিচ্ছেন মহিলাদের। তাতে সমস্যা ধরা পড়লে কাছাকাছি ব্লক হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে বলা হচ্ছে। কর্কট রোগ ধরা পড়লে জেলা হাসপাতালে শুরু হবে চিকিৎসা। ৩৭টি জেলা হাসপাতালে এখন প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার চলে কর্কট রোগের বহির্বিভাগ।সেখানে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, বায়োপসি ও সিটি স্ক্যানের সুবিধা মিলবে।অর্থাৎ, জেলা স্তরেই শুরু হয়ে যাবে চিকিৎসা।

এর পাশাপাশি, এসএসকেএমকে কেন্দ্র হিসাবে ধরে তৈরি হয়েছে ‘পিঙ্ক করিডর’। এই ব্যবস্থায় গ্রাম থেকে এসএসকেএম পর্যন্ত পৌঁছে চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে থাকবে না কোনও বাধা। গ্রাম থেকে ব্লক হাসপাতাল, সেখান থেকে জেলা হাসপাতাল হয়ে প্রয়োজনে এসএসকেএম পর্যন্ত রোগীর পৌঁছতে যাতে সমস্যা না হয়, তা দেখবেন আশাকর্মীরা। রোগীকে দেওয়া হবে একটি ক্যানসাররেজিস্ট্রি আইডি-ও। তাঁর যাবতীয়তথ্য, প্রেসক্রিপশন তোলা হবে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থায়। প্রয়োজনে এসএসকেএমে বসেই সেখানকার চিকিৎসকেরা সেই প্রেসক্রিপশন দেখে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারবেন। এই ব্যবস্থায় দূরত্বের কারণেকারও চিকিৎসায় দেরি হওয়া,চিকিৎসা মাঝপথে থমকে যাওয়ার মতো সমস্যা অনেকটাই আটকানো যাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন চিকিৎসকেরা।

আগামী দিনে স্তনের কর্কট রোগ আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে রোগীরা দ্রুত ও যথাযথ চিকিৎসা যাতে পান, তা নিশ্চিত করতে পরিকাঠামোর উন্নয়ন ও বিকেন্দ্রীকরণ তাই একান্ত জরুরি।

(শেষ)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy