তুলসীগাছকে ঘিরে ‘ঐশ্বরিক’ বিশ্বাসের জেরে ভারতীয় বহু বাড়িতেই তা থাকে। আবার এ দেশের মানুষ তুলসীর আয়ুর্বেদিক গুণেও বিশ্বাসী। সর্দি-কাশি-জ্বর হলে আজও তুলসীপাতা চিবিয়ে খান অনেকে। কিন্তু তুলসীপাতা এর বাইরেও আরও অনেক ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে। যেমন শরীরে বাড়তি মেদের বোঝা কমাতেও সাহায্য করতে পারে তুলসী। অন্তত এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গবেষণালব্ধ ফল সে দিকেই স্পষ্ট ইঙ্গিত করছে।
সমাজমাধ্যমে সম্প্রতি কয়েকজন যাপন-প্রভাবীকে বলতে শোনা গিয়েছে, তুলসী পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ভাবে, নির্দিষ্ট পরিমাণে তুলসীপাতা বা তার রস বা তুলসীর ট্যাবলেট খেলে কমতে পারে ভুঁড়ি। বিষয়টি বাস্তবে কতটা কার্যকর, তার সন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেল এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে এবং তাতে ফল এসেছে ইতিবাচক। অর্থাৎ গবেষকেরাও বলছেন, শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে তুলসী কার্যকরী হতে পারে।

তুলসী খেলে মেদ কমতে পারে, মানছেন পুষ্টিবিদেরাও। — ফাইল চিত্র।
কী ভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে তুলসী?
এ ব্যাপারে সাম্প্রতিকতম গবেষণাটি হয়েছে পাকিস্তানে। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজ়িওলজি বিভাগের ওই গবেষণা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ‘বায়োসাইট’ জার্নালে। তাতে বলা হচ্ছে, তুলসীপাতা যে শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরল, লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। পরীক্ষাটি করা হয়েছিল ইঁদুরের উপর। দেখা গিয়েছে তুলসীর পাউডার খেয়ে হাই-ফ্যাট ডায়েট অর্থাৎ বেশি স্নেহপদার্থ যুক্ত খাবারও রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড, কোলেস্টেরল, লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা বাড়তে দেয়নি সে ভাবে।
একই পরীক্ষা ভুবনেশ্বরের এমসও করেছিল প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের উপরে। গবেষণাগারে ৩০ জনকে রেখে তাঁদের মধ্যে ১৫ জনকে আট সপ্তাহ ধরে দিনে দু’বেলা খালি পেটে তুলসীর ট্যাবলেট খাওয়ানোর পরে দেখা যায়, মানবদেহেও একই ধরনের প্রভাব ফেলেছে তুলসী। তুলসীর ট্যাবলেট খাওয়া ১৫ জনের ট্রাইগ্লিসারাইড, লাইপোপ্রোটিনের মাত্রায় উন্নতি হয়েছে। শরীরে কার্বোহাইড্রেটকে ভাঙতে সাহায্য করে যে ইনসুলিন, উন্নতি হয়েছে তার কাজেও। শরীরে ‘ভাল’ কোলেস্টেরল বা এইচডিএলের মাত্রা বেড়েছে। ফলে উচ্চতা অনুযায়ী ওজনের যে হার হওয়া উচিত, তা বজায় থেকেছে তুলসী খাওয়া ১৫ জনের। বাকিদের তা হয়নি।

অনেকেই বিশ্বাস করেন, তুলসী বিপাকের হার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ছবি: শাটারস্টক।
এই ফলাফল কেন তাৎপর্যপূর্ণ?
শরীরে মেদ বৃদ্ধির নেপথ্যে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ট্রাইগ্লিসারাইড আদতে শরীরে জমা চর্বির প্রাথমিক রূপ। ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি থাকলে এবং তার সঙ্গে যদি কোলেস্টেরলও খানিক বেশি মাত্রায় থাকে তবে শরীরে নিয়মিত বেশি ক্যালোরির খাবার গেলে, তা থেকে চর্বি জমে বেশি। অন্য দিকে, লাইপোপ্রোটিন ঠিক করে দেয়, শরীরে চর্বি কী ভাবে জমবে। তাই লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা বাড়লেও শরীরে মেদ জমে বেশি। তুলসী প্রাথমিক পর্যায়েই বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে শরীরে মেদ জমতে পারে না।
বিপাকের হারেও সাহায্য করে তুলসী
অনেকেই বিশ্বাস করেন, তুলসী বিপাকের হার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিপাকের হার বেশি হলে তা খাবারকে দ্রুত ভেঙে শক্তিতে পরিণত করে। তাই তা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, যেহেতু তুলসীপাতা মানবদেহের লিপিড প্রোফাইল ভাল রাখে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, তাই তার প্রভাব পড়ে বিপাকের হারে। কেউ যদি ওজন ঝরাতে চান, তবে তিনি নিশ্চিন্তে তুলসীপাতা রাখতে পারেন তঁর তালিকায়।

এ দেশের মানুষ তুলসীর আয়ুর্বেদিক গুণেও বিশ্বাসী। — ফাইল চিত্র।
কী ভাবে খাবেন তুলসী?
১। ওজন কমানোর জন্য তুলসী খেলে তুলসী পাতার চা খেতে পারেন। গরম জলে ৮-১০টি তুলসীর পাতা ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। খালি পেটে দিনে দু’বার ওই চা খান।
২। কাঁচা পাতাও খাওয়া যেতে পারে। চিবিয়ে অথবা স্যালাডে দিয়ে খেলে তা হজমেও সাহায্য করবে।
৩। বাজারে তুলসীর ক্যাপস্যুল বা তুলসীর রস সরাসরি প্যাকেটজাত অবস্থায় কিনতে পাওয়া যায়। তা-ও খাওয়া যেতে পারে। তবে খাওয়ার আগে কতটা পরিমাণে খাবেন, তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে খাওয়াই ভাল।