যন্ত্রণায় ছটফট করছেন সেলিন ডিওন। ছবি: সংগৃহীত।
‘টাইটানিক’ ছবির ‘মাই হার্ট উইল গো অন’ গানের জাদুতে বুঁদ ছিল গোটা পৃথিবী। এতগুলি বছর কেটে গিয়েছে তবু এখনও সমান জনপ্রিয় এই গান। জগদ্বিখ্যাত এই গানের কণ্ঠ ছিল যাঁর, তিনি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ইদানিং ভুগছেন। ৫৬ বছরের সেলিন ডিওন সম্প্রতি তাঁর একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন যেখানে দেখা গিয়েছে কী ভীষণ শারীরিক যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন তিনি। কেঁপে কেঁপে উঠছে তাঁর শরীর। খিঁচুনি থামছেই না। যন্ত্রণা লাঘব করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন চিকিৎসকেরা।
বিরল স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত সেলিন ডিওন। এমন এক রোগ যা ১০ লাখে এক জনের হয়তো হয়। এই রোগের নাম ‘স্টিফ পার্সন সিনড্রোম’। এক ধরনের ‘অটো ইমিউন’ রোগ যা শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতাকেই তছনছ করে দেয়। ২০২২ সাল থেকেই এই রোগে ভুগছেন সেলিন। যার ফলে একটা সময়ে বাতিল করতে হয়েছিল তাঁর একাধিক ‘লাইভ কনসার্ট’। রোগ ধরা পড়ার পর থেকেই চিকিৎসার মধ্যে রয়েছেন হলিউডের জনপ্রিয় গায়িকা। তবে বছরখানেকের চিকিৎসার পরেও নাকি তেমন কোনও উন্নতি হয়নি গায়িকার শারীরিক অবস্থার। কেমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে তাঁকে প্রায়ই যেতে হয় সেটাই ভিডিয়োতে দেখিয়েছেন সেলিন।
২ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, সেলিনকে চেপে ধরে রয়েছেন চিকিৎসকেরা। খিঁচুনিতে কেঁপে কেঁপে উঠছে তাঁর শরীর। হাত-পা আড়ষ্ট। কাঁপতে কাঁপতে বেঁকে যাচ্ছে ঠোঁট। কথা বলতে গেলে জড়িয়ে যাচ্ছে জিভ। শুধু গোঙানির মতো আওয়াজ বের হচ্ছে গলা দিয়ে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ‘স্টিফ পার্সন সিনড্রোম’ এমন এক রোগ যা মিনিট খানেকের জন্য পঙ্গু করে দিতে পারে গোটা শরীরকে। খিঁচুনি চলতেই থাকে। শরীরের মাংসপেশিতে প্রচণ্ড টান পড়ে। এই রোগ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে অকেজো করে দিতে থাকে। ফলে স্নায়ুর উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন রোগী। শরীরের বিভিন্ন জায়গার পেশিতে যন্ত্রণা শুরু হয়। পেশি শক্ত হয়ে যেতে থাকে। একটা সময়ে গোটা শরীরই অসাড় হয়ে যায়। হাঁটাচলা কিংবা কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলতে পারেন রোগী।
‘স্টিফ পার্সন সিনড্রোম’ কেন হয় তার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে এই রোগের সূত্রপাত হতে পারে। মহিলারাই বেশি ভোগেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই বিরল স্নায়ুর রোগ দেখা দিলে তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক আরও অসুখবিসুখ মাথাচাড়া দিতে থাকে। যেমন ডায়াবিটিস, কিডনির রোগ, এমনকি পার্কিনসন্সের মতো রোগও দেখা দিতে পারে। প্রচণ্ড মানসিক চাপ ও উৎকণ্ঠায় ভুগতে থাকেন রোগী। নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন সমাজ ও আপনজনেদের থেকে। বহু মানুষের সামনে যেতে ভয় পান।
নিজের অসুস্থতার কথা জানাতে গিয়ে আগেও একবার কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন ‘টাইটানিক’ খ্যাত গায়িকা। তিনি জানিয়েছিলেন, এই রোগের নিরাময় সম্ভব নয়। শুধু উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধের পাশাপাশি ‘ফিজিয়োথেরাপি’, ‘হাইড্রোথেরাপি’ করেন চিকিৎসকেরা। বর্তমান সময়ে ‘ইমিউনোথেরাপি’ও করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy