বছর পঁচিশের অর্ক। সদ্য একটি কর্পোরেট সংস্থর চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। এক মাসের মধ্যেই হঠাৎ এক দিন অফিসে বুকে ব্যথা। হাসপাতালে নিয়ে গেলে বোঝা গেল মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক। শুধু অর্কই নন, চারদিকে এখন শোনা যাচ্ছে অল্প বয়সিদের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর খবর। ইদানীং হার্টের সমস্যা নিয়ে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই কমবয়সি। জিনগত কারণে বা জন্মগত ভাবে হার্টের অসুখ রয়েছে, এমন মানুষ ছাড়া যাঁদের পরে কোনও কারণে হার্টের অসুখ ধরছে, তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছেন ২০ থেকে ৪০-এর মধ্যের তরুণ-তরুণীরা।
পুষ্টিবিদেরা কিন্তু বার বার বলেছেন, খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে সতর্ক না হলে এই রোগের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব নয়। বাইরের ভাজাভুজি, তেলমশলাদার খাবার, প্যাকেটজাত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার ডায়েট থেকে একেবারে বাদ দিয়ে খেতে হবে বাড়ির খাবার। বাড়ির খাবার হলেও, কোন তেলে রান্না হচ্ছে সেটাও এ ক্ষেত্রে বিচার্য। এ বিষয়ে অবশ্য নানা জনের নানা মত। তবে হার্টের রোগীদের জন্য কোন তেল নিরাপদ?
বাজারে এখন রকমারি তেলের ছড়াছড়ি। তেলের বিজ্ঞাপনগুলি দেখলে মনে হবে সেই তেলটাই বুঝি সবচেয়ে ভাল। তবে বিজ্ঞাপনগুলির ফাঁদে না পড়ে চিকিৎসকেরা কী বলছেন, তার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বললেন, ‘‘হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এমন তেল রোজের ডায়েটে রাখতে হবে, যা ‘আনরিফাইন্ড’ এবং যাতে স্যাচুরেটেড আর ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা কম থাকবে। এর পাশাপাশি তেলটিতে মোনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আর পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি থাকতে হবে।’’
রোজের ডায়েটে তেলের পরিমাণের বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। ছবি: সংগৃহীত।
অলিভ অয়েল
এই তেল হৃদ্রোগীরা খেতে পারেন, তার অন্যতম কারণ এতে ভাল মাত্রায় রয়েছে মোনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আর পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এই ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে দেয় না। কোলেস্টেরল বশে থাকলে হৃদ্রোগের ঝুঁকিও কমে।
বাদাম তেল
চিনেবাদামের তেলে স্যাচুরেটেড তেলের মাত্রা কম থাকে আর মোনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আর পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি থাকে। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা আর প্রদাহ কমাতে এই তেল সাহায্য করে। এই তেলে শরীরে রক্তের প্রবাহমাত্রা সচল রাখতেও উপকারী, তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। যাঁদের পেটের সমস্যা রয়েছে, তাঁরাও এই তেল রোজের ডায়েটে রাখতে পারেন। তবে বাদামে অ্যালার্জি থাকলে সাবধান, এই তেল খাওয়া কিন্তু চলবে না সে ক্ষেত্রে।
সর্ষের তেল
হার্টের সমস্যা থাকলে সর্ষের তেল খাওয়া যায় না! এই ধারণা ভ্রান্ত বলে মনে করেন বহু চিকিৎসক। বরং হার্টের রোগীদের জন্য সর্ষের তেল উপকারী, তেমনই মত। এই তেলেও স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা কম থাকে। মোনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আর পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা বেশি থাকে। সর্ষের তেল রক্তচাপ বাড়তে দেয় না। শরীরে ভাল কোলেস্টেরল এইচডিএল-এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ধমনীতে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমে এই তেলে রান্না করা খাবার খেলে। তবে সর্ষের তেলে ইরিউসিক অ্যাসিড থাকে, যা প্রদাহের কারণ হতে পারে। তাই পরিমাণের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। গাঁটের ব্যথায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্যও রোজ সর্ষের তেলের রান্না করা খাবার খাওয়া উপকারী।
এই তিন প্রকার তেল রোজের ডায়েটে রাখলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের (এলডিএল, বিএলডিএল) মাত্রা কমবে আর ভাল কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) মাত্রা বাড়বে। এই তেলগুলি শরীরে প্রদাহের মাত্রা কমিয়ে হার্টকে ভাল রাখতে সাহায্য করে। তবে উপকারী বলেই এই তেলে ভাজাভুজি খাওয়া শুরু করলে কিন্তু হিতের বিপরীত হতে পারে। পুষ্টিবিদ পম্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে তিলের তেল কিংবা রাইস ব্র্যায়ান অয়েল দিয়ে রোজের রান্না করা যেতে পারে। তবে পরিমাণের বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।’’
রোজের ডায়েটে তেলের পরিমাণের বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। পরিমাণ বাড়লেই কিন্তু হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়তে সময় লাগবে না। শম্পা বলেন, ‘‘যাঁরা ওজন কমতে চাইছেন আর হার্ট ভাল রাখতে চাইছেন, সে ক্ষেত্রে এক জন সুস্থ পুরুষ রোজের রান্নায় ৪-৫ চা চামচ তেল খেতে পারেন আর এক জন সুস্থ মহিলা রোজের রান্নায় ৩-৪ চা চামচ তেল খেতে পারেন। তবে ওইটুকু তেল কিন্তু খেতেই হবে, শরীরের জন্য কিন্তু ওইটুকু তেল প্রয়োজন।’’