ক্যানসারে আক্রান্ত আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাইডেনের দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, তিনি প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। গ্লিসন স্কোর গ্রেডিং ব্যবস্থা অনুযায়ী বাইডেনের ক্যানসার ১০-এর মধ্যে ৯ নম্বর পর্যায়ে রয়েছে। যা বলে দিচ্ছে যে, শরীরের অবস্থা বেশ কঠিন। কিন্তু কী এই গ্লিসন স্কোর, যার থেকে বোঝা গেল যে ক্যানসার কঠিন পর্যায়ে গিয়েছে।
প্রস্টেট ক্যানসার কী?
পুরুষদের প্রস্টেট গ্রন্থির (পুরুষদের বীর্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই গ্রন্থির মুখ্য ভূমিকা রয়েছে) কোষে এই ধরনের ক্যানসার জন্ম নেয়। আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ জানাচ্ছে, চলতি বছরেই আমারিকায় প্রায় ৩ লক্ষ ১৫ হাজার প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করা হবে।
চিকিৎসার সুযোগ
প্রস্টেট ক্যানসার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্কদের শরীরে দেখা দেয়। এই ধরনের ক্যানসার ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধে। তাই অনেক সময়েই রোগীরা লক্ষণ দেরিতে বুঝতে পারেন। তবে দেখা গিয়েছে, সঠিক সময়ে ধরা পড়লে, এই ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসা সম্ভব। চিকিৎসার পর রোগী প্রায় ৫ বছর বেঁচে থাকেন। সে ক্ষেত্রে রোগীদের আয়ুষ্কালের শতকরা হার প্রায় ৯৮ শতাংশ। এই ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসা সম্ভব। প্রস্টেট ক্যানসারকে হারিয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে গিয়েছেন, এ রকম বহু উদাহরণ রয়েছে।
আরও পড়ুন:
‘গ্লিসন স্কোর’ কী?
প্রস্টেট ক্যানসার দেহে কতটা ছড়িয়ে পড়েছে, তা নির্ণয় করা হল গ্লিসন স্কোরের মাধ্যমে। তবে এই পরীক্ষায় ক্যানসারের ক্ষতিকারক দিকগুলি বা তার ফলাফল নিয়ে কোনও অনুমান করা হয় না।
মূলত প্রস্টেটের বায়োপসি থেকেই এই গ্লিসন স্কোর-এর সাংখ্যমান নির্ধারণ করা হয়। এই পর্যবেক্ষণের পদ্ধতিতে মূলত ৬ থেকে ১০ পর্যন্ত মাত্রাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সেখানে ৬ মানে আশঙ্কা কম। ৭-এর অর্থ ক্যানসার কোষের উপস্থিতি বেড়েছে এবং তা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ৮ থেকে ১০-এর মধ্যে নম্বর থাকলে, সেই ক্যানসারকে ‘মারাত্মক’ বলা যেতে পারে। অর্থাৎ, তা শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যেমন, জো বাইডেনের ক্ষেত্রে ক্যানসার অস্থি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। প্রস্টেট ক্যানসারের গ্লিসন স্কেল যদি ৮-এর বেশি হয়, তা হলে ক্যানাসার কোষের পরিবর্তন, তা কতটা মৌলিক, সে দিকগুলিও চিকিৎসার অধীনে চলে আসে। বাইডেনের ক্ষেত্রে ক্যানসারের গ্লিসন স্কোর এসেছে ৯। অর্থাৎ, তা ‘অ্যাগ্রেসিভ’। অর্থাৎ, দ্রুত ছড়াচ্ছে।
ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের মতে, প্রস্টেট ক্যানসার শণাক্তকরণের পর, চিকিৎসার উপর নির্ভর করে রোগী দুই থেকে আট বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। তিনি বললেন, ‘‘রোগীর বায়োপসি রিপোর্টে গ্লিসন স্কেলের উল্লেখ থাকে। ৮ পর্যন্ত মাত্রা খুব ভয়ের কারণ হয় না। কিন্তু ৯ বা ১০ হলে তখন অবশ্যই বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন। তবে তারও চিকিৎসা সম্ভব।’’
চিকিৎসা পদ্ধতি
গৌতমবাবু জানালেন, প্রস্টেট ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রথমে রোগিকে হরমোন ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাতে উপকার পাওয়া যায়। পরিস্থিতি আরও জটিল হলে তখন রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।’’ এই ধরনের ক্যানসার দেহের অস্থির মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। গৌতম বললেন, ‘‘যদি কোনও কারণে রোগীর শরীরে বা হাড়ে ব্যথা হয়, তখন প্রাথমিক ভাবে তাকে আরাম দেওয়ার জন্য রেডিয়েশন দেওয়া হয়।’’