মূত্রনালিতে সংক্রমণ বা ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন' (ইউটিআই) যে কোনও বয়সেই হতে পারে। শিশু যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করে, তখন শৌচাগার থেকে সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা বেশি থাকে। আবার স্কুলে থাকার সময়ে দীর্ঘ ক্ষণ জল কম খেলেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। এমনকি এ-ও দেখা গিয়েছে, সদ্যোজাত শিশুও ভুগছে মূত্রনালির সংক্রমণে। তারও কিছু সুর্নিদিষ্ট কারণ আছে, যা বাবা-মায়েরা বুঝতে পারেন না বেশির ভাগ সময়েই। মূত্রনালির সংক্রমণ হলে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। তার জন্য লক্ষণ চেনাও জরুরি। ছোটরা অনেক সময়েই বলতে পারে না, কী সমস্যা হচ্ছে। তাই বাবা-মায়েদেরই এই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। কোন কোন লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হবেন, তা জেনে নিন।
কখনও গরম, আবার কখনও বৃষ্টি পড়ছে। খামখেয়ালি আবহাওয়ায় রোগজীবাণুর বাড়বাড়ন্ত হয়। জ্বর, পেটখারাপ, টাইফয়েড, মূত্রনালিতে সংক্রমণের মতো রোগের প্রকোপ বাড়ে। ই কোলাই, এন্টেরোকক্কাস ফেকালিস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস স্যাপ্রোফাইটিকাসের মতো ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে মূত্রনালির সংক্রমণ বেশি হয়। সেই সঙ্গে জল খাওয়া কম হলে বা শরীর থেকে অতিরিক্ত ফ্লুইড বেরিয়ে গেলে তখন মূত্রনালির সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। প্রস্রাব চেপে রাখাও আর একটা কারণ। ক্লাস চলাকালীন অনেক শিশুই তা করে। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল বলছেন, “শিশুরা অনেক সময়েই বলতে পারে না, তাদের প্রস্রাবের জায়গায় জ্বালা বা যন্ত্রণা হচ্ছে কি না। কিন্তু দেখবেন, তারা প্রস্রাব করতে যেতে ভয় পাচ্ছে। প্রস্রাব করার সময় কাঁদছে বা বলছে, তলপেটে খুব ব্যথা হচ্ছে। তখন বুঝতে হবে, সমস্যাটা গুরুতর। দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।”
আরও পড়ুন:
আর কী কী লক্ষণ চিনবেন?
প্রস্রাব করার সময়ে তলপেটে যন্ত্রণা হবে।
কিছু খেলেই বমি ভাব থাকবে, শরীর খুব দুর্বল হয়ে যাবে।
বারে বারে প্রস্রাবের বেগ আসবে, প্রস্রাবের সময়ে জ্বালা হবে।
প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হবে, প্রস্রাব ঘোলাটে বা লালচে হতে পারে।
চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল জানাচ্ছেন, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে। প্রস্রাবের সংক্রমণ-জনিত জ্বর হলে সে ক্ষেত্রে সর্দিকাশি বা গলা ব্যথা থাকে না। তখন বুঝে নিতে হবে, এই জ্বর কোনও সংক্রমণজনিত কারণে হচ্ছে।
মূত্রনালির সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বেশি করে জল খাওয়াতে হবে শিশুকে। স্কুলের থাকাকালীন কতটা জল খাবে, তা শিখিয়ে দিন সন্তানকে। নাইলন বা সিন্থেটিকের বদলে সুতির ঢিলেঢালা অন্তর্বাস পরাতে হবে। শিশু যেন ভেজা অন্তর্বাস না পরে থাকে, তা খেয়াল রাখতে হবে। স্কুলের শৌচাগার ব্যবহারের আগে কমোডে বসার জায়গাটা ভাল করে ধুয়ে এক বার ফ্লাশ করে নিতে হবে। সন্তানকে সেই পদ্ধতি শিখিয়ে দিন।
যে কোনও রকম সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে পারে প্রোবায়োটিক। প্রোবায়োটিকের অন্যতম উৎস হল দই। তা ছাড়া পনিরেও প্রোবায়োটিক থাকে। ইডলি, দোসা— এই খাবারগুলি তৈরির সময় চাল এবং ডাল গেঁজিয়ে নেওয়া হয়। তার ফলে এতেও প্রোবায়োটিক পাওয়া যায়। ছোটদের খাবারে রোজ প্রবায়োটিক রাখা খুবই জরুরি।