ক্যানসার মানেই আতঙ্ক। সেই রোগ যদি বাসা বাঁধে চোখে, তা হলে দৃষ্টিশক্তি চিরতরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনই এক রোগের প্রকোপ বেড়ে চলেছে শিশুদের মধ্যে। চোখের ক্যানসারের সবচেয়ে বিপজ্জনক ও বিরল রূপ হল ‘রেটিনোব্লাস্টোমা’। পাঁচ বছরের নীচে শিশুরাই এতে আক্রান্ত হয়। চোখ যেহেতু শরীরের সবচেয়ে স্পর্শকাতর অঙ্গ, তাই সেখানে টিউমার হওয়া মানে যন্ত্রণা যেমন বাড়ে, তেমনই এর অস্ত্রোপচার খুবই জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। শিশুদের ক্ষেত্রে রেটিনোব্লাস্টোমার চিকিৎসা নিয়ে এত দিন নানা গবেষণা চলছিল। এই প্রথম দেশে এমন এক অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি এল, যা যন্ত্রণাহীন পদ্ধতিতে কম সময়ে চোখের ক্যানসার নির্মূল করতে পারবে বলে দাবি করা হয়েছে।
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে (এমস) শিশুদের চোখের ক্যানসার নিরাময়ে নতুন এক অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি নিয়ে আসা হয়েছে যার নাম ‘গামা নাইফ রেডিয়োসার্জারি’। এই পদ্ধতিতে গামা রশ্মির সাহায্য চোখের টিউমার নির্মূল করার চেষ্টা করা হবে।
রেটিনোব্লাস্টোমা কী কারণে হয় তা এখনও সম্পূর্ণ ভাবে জানা যায়নি। জিনগত কারণে এই রোগ হয় বলেই দাবি করা হয়েছে। এই রোগটির বিষয়ে দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল ২০২৩ সালে। গবেষকেরা বলেছিলেন, রোগটি খুবই বিরল। ১৫ থেকে ১৮ হাজার শিশুর মধ্যে হয়তো এক জন এই ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। বংশগত কারণেও হতে পারে এই রোগ। পরিবারে কারও এই রোগ থাকলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন:
কী কী উপসর্গ দেখা দেয়?
রেটিনায় টিউমার হয়। ফলে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে ঝাপসা হতে শুরু করে।চোখ লাল হয়ে ওঠে, চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়তে থাকে।
মণির রং বদলে যেতে থাকে, চোখের চারপাশ ফুলে যাওয়া, চোখের মধ্যে একটানা অস্বস্তি, চোখে ব্যথা— এই লক্ষণগুলি দেখা দিতে থাকে।
রেটিনোব্লাস্টোমার চিকিৎসা সঠিক সময়ে শুরু না হলে দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি চলে যেতে পারে।
এমসের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, চোখের ক্যানসার নির্মূল করতে যদি সাধারণ রেডিয়োথেরাপি করা হয়, তা হলে রেটিনার আশপাশের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে জন্যই গামা নাইফ রেডিয়োসার্জারি এ ক্ষেত্রে কার্যকরী। গামা রশ্মি কেবলমাত্র রেটিনায় থাকা টিউমারকে নষ্ট করবে, চারপাশের সুস্থ কোষগুলিতে এর কোনও প্রভাবই পড়বে না। আরও একটি সুবিধা হল, চোখে কাটাছেঁড়া করার প্রয়োজন হবে না, শুধু রশ্মি দিয়েই ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা যাবে। অস্ত্রোপচারের পরে জটিলতাও কম হবে এবং রোগী তাড়াতাড়ি সেরে উঠতেও পারবেন। এই ধরনের রেডিয়োথেরাপিতে সাফল্যের হারও বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এতে চোখের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম।