দৈনন্দিন জীবনে মানসিক চাপ প্রায় সকলেরই অল্পবিস্তর রয়েছে। অনেকে সেই চাপকে জীবনযাপনের অঙ্গ ভেবেই সঙ্গে নিয়ে চলেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয় না, বরং ক্ষতি হতে পারে। কারণ মানসিক চাপ সরাসরি হার্টের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। বহু গবেষণাতেই এমন দাবি করা হয়েছে। মানসিক চাপ কী ভাবে হার্টের ক্ষতি করছে তা-ও সবিস্তার বলা হয়েছে।
এর মধ্যে ২০২২ সালে ইতালির ক্যাটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেনের উমিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডনের সেন্ট জর্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলিত গবেষণায় স্পষ্ট বলা হচ্ছে, মানসিক চাপ অনেক ক্ষেত্রেই আচমকা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। টানা মানসিক চাপে থাকলে সুস্থ মানুষেরও হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঠিক কী ভাবে হার্টের ক্ষতি করে মানসিক চাপ?
ছবি: সংগৃহীত।
১। রক্তচাপ বৃদ্ধি করে
মানসিক চাপ বাড়লে রক্তচাপ বাড়বে। সেটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু মানসিক চাপ না কাটলে যদি টানা রক্তচাপের মাত্রাও উঁচুর দিকে থাকে, তবে তা থেকে হাইপারটেনশনের সমস্যা, হার্টের রোগ হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, টানা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হার্ট অ্যাটাকেরও কারণ হতে পারে। যে কারণে চিকিৎসকেরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ বা নিঃশব্দ ঘাতক বলেন।
২। অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন
মানসিক চাপে থাকলে স্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের মাত্রা ব্যাহত হয়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময়ে আচমকা হৃৎস্পন্দন বাড়তে পারে। আবার কখনও মুহূর্তের জন্য হৃৎস্পন্দন থমকাতে পারে। এই সবই সরাসরি প্রভাব ফেলে হার্টের স্বাস্থ্যে। ক্ষতি হতে পারে হার্টের পেশিরও, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৩। প্রদাহ
দিনের পর দিন মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে তা শরীরে প্রদাহের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে হৃৎপিণ্ডে রক্ত পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে যে ধমনী, তাতেই প্রদাহ বাড়ে বেশি মাত্রায়। ফলে ধমনীতে ফ্যাট, কোষের বর্জ্য, কোলেস্টেরল, ক্যালশিয়ামের আস্তরণ পড়তে থাকে। এতে হার্টে রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে যায়, যা গোটা শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে প্রভাবিত করতে পারে। এই রোগকে বলা হয় অ্যাথোরোস্কেলেরোসিস। এটি যে কোনও বয়সে শুরু হতে পারে। নিয়ন্ত্রণ না করলে ক্রমশ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে থাকে।
ছবি: সংগৃহীত।
৪। রক্ত জমাট বাঁধা
মানসিক চাপে থাকলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন রক্তকে ঘন করে তার মধ্যে জমাট বাঁধার প্রবণতা তৈরি করে। রক্ত জমাট বেঁধে ধমনীতে ‘ব্লকেজ’ তৈরি করলে তা থেকে হার্ট অ্যাটাক এমনকি স্ট্রোক হতে পারে।
৫। ঘুমের ব্যাঘাত, বদ অভ্যাস
মানসিক চাপে থাকলে অনেকেই রাতে ঘুমোতে পারেন না। ঘুমের অভাব হলে হাইপারটেনশনের সম্ভাবনা বাড়ে, যা হার্টের রোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। আবার অতিরিক্ত মানসিক চাপ কাটাতে অনেকেই ধূমপান বা মদ্যপান করেন। তা-ও পরোক্ষে হার্টের ক্ষতির করে।