ছেলের নিথর দেহ দেখে বুক কেঁপে উঠেছিল। যন্ত্রণার অতলে তলিয়ে যেতে যেতেও ১২ বছরের ছেলের অঙ্গদান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন মা। অঙ্গ প্রতিস্থাপন সঠিক সময়ে না হলে যে কত বড় বিপর্যয় হতে পারে, সে অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছে। ক্রনিক কিডনির অসুখে ভোগা ছেলের জন্য সঠিক দাতা পাননি। নিজের কিডনি দিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। ক্রমশ শারীরিক অবনতি হতে হতে মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে ছেলের। তাই অঙ্গদানের প্রয়োজনীয়তার কথা বিলক্ষণ বুঝেই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। কলকাতা বাসিন্দা উমঙ্গ গালাডার শরীর থেকে নেওয়া অঙ্গে তিন জন নতুন জীবন পেয়েছেন।
সাউথ সিটি ইন্টারন্যাশনালের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র উমঙ্গ। মেধাবী ছেলেটির শরীর আচমকাই খারাপ হয়। হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে ধরা পড়ে, কিডনির অসুখে ভুগছে উমঙ্গ। ডায়ালিসিসে কাজ না হওয়ায় কিডনি প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। প্রথমে সঠিক দাতা পাওয়া যায়নি, পরে উমঙ্গের মা নিজের কিডনি দেন ছেলেকে। তবে সেখানেও জটিলতা আসে। প্রথমে মায়ের কিডনি নিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকলেও, পরে ফের শরীরের অবনতি হয় উমঙ্গের। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পরে মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হতে শুরু করে। ২৮ মার্চ তাকে ভর্তি করা হয় সিএমআরআই হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা বোঝেন, ব্রেন ডেথের পথে যাচ্ছে উমঙ্গ।
গত ২০ মে মঙ্গলবার ছেলেটির ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। এর পরেই উমঙ্গের বাবা-মা মরণোত্তর অঙ্গদানের বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করলে তা রিজিয়োনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজ়েশন (রোটো)-কে জানানো হয়। তাদের মাধ্যমেই গ্রহীতার খোঁজ চলে। জানা গিয়েছে, উমঙ্গের কিডনি ও হার্টে সমস্যা থাকায় সে দু’টি অঙ্গ নেওয়া যায়নি। তবে যকৃৎ পাঠানো হয়েছে মুম্বইয়ে, আর দুই চোখের কর্নিয়ায় পৃথিবীর আলো দেখেছেন আরও দু’জন।
আরও পড়ুন:
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কলকাতায় এত কম বয়সি কারও অঙ্গদানের নজির তেমন ভাবে নেই। উমঙ্গের অভিভাবকেরা দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। পুত্রশোকের চেয়েও বড় হয়েছে কর্তব্যবোধ। অঙ্গদানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতার প্রচার চলছেই। তবে সকলে স্বেচ্ছায় এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। পরিসংখ্যান বলছে, মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে, এমন কারও শরীরের নানা অঙ্গের সাহায্যে ১২টি মানুষের প্রাণ বাঁচতে পারে। চিকিত্সাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মানুষের শরীর থেকে কমপক্ষে ১২ রকমের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব৷ যার মধ্যে ফুসফুস, হার্ট, কিডনি, অন্ত্র, অগ্ন্যাশয় এবং যকৃৎ (লিভার) অন্যতম৷ তা ছাড়া স্বাভাবিক মৃত্যু হলে কর্নিয়া, ত্বক, হাড়, শিরা, হার্টের ভালভও দান করা যায়। কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর তিন ঘণ্টার মধ্যে এই সমস্ত অঙ্গ যদি তাঁর শরীর থেকে নেওয়া যায়, তা হলে প্রতিস্থাপন সম্ভব। এ ছাড়া কোনও ব্যক্তির যদি ‘ব্রেন ডেথ’ বা মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটে, তা হলেও এই সমস্ত অঙ্গ প্রতিস্থাপিত করা সম্ভব৷