ফ্যাটি লিভারের সমস্যা যে কেবল অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার জন্য হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। সকলেই ভাবেন, বেশি ভাজাভুজি খেলে বা জাঙ্ক ফুড খেলে লিভারের রোগ হয়। তা যেমন ঠিক, তেমনই আরও কিছু কারণ রয়েছে, যা লিভারের দফারফা করে দিচ্ছে। ফ্যাটি লিভারের সূত্রপাত তো হচ্ছেই, ধীরে ধীরে রোগ বেড়ে লিভারে ক্ষত বা সিরোসিসের পর্যায় চলে যাচ্ছে। লিভারের অসুখ যে হারে বেড়ে চলেছে, তাতে সতর্ক থাকারই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
কী কারণে লিভারের রোগ বাড়ছে?
পেনকিলার বা ব্যথানাশক ওষুধই নাকি আসল খলনায়ক। অসুখ হল কি হল না, ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ ওষুধ খেয়ে ফেলার অভ্যাস কমবেশি সকলেরই আছে। জ্বর- জ্বর ভাব হলেই প্যারাসিটামল, ব্যথা-বেদনা হলেই আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ মুঠো মুঠো খেয়ে ফেলতে দেখা যায়। সঠিক ডোজ় না জেনেই, যে কোনও ব্যথানাশক ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক অথবা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেয়ে ফেলার যে প্রবণতা, তা-ই কিন্তু লিভারের জটিল অসুখ ডেকে আনছে। এমনটাই দাবি ব্রিটেনের কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের।
আরও পড়ুন:
ব্যথানাশক ওষুধ যে কতটা ক্ষতিকর, তা নিয়ে বহু দিন ধরেই গবেষণা চলছে। যখন-তখন এই ধরনের ওষুধ খেতে বারণও করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু কম সময়ে চটজলদি হাতের নাগালে পাওয়া যায়, এমন ওষুধেই বেশি ভরসা রাখেন লোকজন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে ওষুধ ক’জনই বা খান! আর এই প্রবণতাই ফ্যাটি লিভার ও লিভার সিরোসিসের মতো মারাত্মক রোগের কারণ হয়ে উঠছে বলে দাবি গবেষকদের।
ফ্যাটি লিভার রোগটিকে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়— নন-অ্যালকোহলিক এবং অ্যালকোহলিক। নাম থেকেই স্পষ্ট, অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে লিভারে ফ্যাট জমলে তাকে বলা হয় অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। তা ছাড়াও কিন্তু লিভারে মেদ জমে। আর সেটা হতে পারে নানা কারণে, যেমন খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, অতিরিক্ত তেল ও মশলা দেওয়া খাবার খাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া এবং না জেনেবুঝেই ভুল ডোজ়ে ওষুধ খেয়ে ফেলা। ব্যথানাশক ওষুধের জন্য যে লিভারের রোগও হতে পারে, সে নিয়ে দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’-এরও গবেষণাপত্র রয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, কয়েক রকম ক্রনিক রোগের ব্যথা, মাইগ্রেন, পিঠ-কোমরের ব্যথায় যথেচ্ছ পরিমাণে ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। সে কারণে ওষুধ আর ঠিকমতো কাজই করছে না শরীরে। দেখা গিয়েছে, ব্যথানাশক ওষুধ বেশি খেলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে খেতে থাকলে ঘন হলুদ রঙের প্রস্রাব, তলপেটে তীব্র যন্ত্রণা— লিভার খারাপ হওয়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জির সমস্যাও বাড়তে পারে।
৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সিদের উপর একটি সমীক্ষাও চালানো হয় ব্রিটেনে। তাতে দেখা গিয়েছে, কথায় কথায় ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস যাঁদের রয়েছে, তাঁদেরই পরবর্তী সময়ে পেপটিক আলসার ধরা পড়েছে। এমনকি, কিডনির ক্রনিক রোগেও আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। হার্টের অসুখ ও হাইপারটেনশন ধরা পড়েছে বেশ কয়েক জনের। আসলে ওষুধ যদি নির্দিষ্ট ডোজ়ে খাওয়া হয়, তখনই তা সঠিক ভাবে কাজ করে। কিন্তু যদি বেশি ডোজ়ে বিধি না মেনে খাওয়া হয়, তা হলে ক্ষতি হতে পারে। আর সেটাই বিপদের কারণ হয়ে উঠছে।