E-Paper

মেয়েদের সিক্স প্যাক অ্যাবস বানানোর খুঁটিনাটি

সিক্স প্যাক অ্যাবস বানাতে নিয়মিত ফিটনেস বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ একত্রে নেওয়া প্রয়োজন

কোয়েনা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৩ ০৯:০৬
চেষ্টা করলেই মেয়েরাও পেতে পারে টোনড ও অ্যাবসসমৃদ্ধ শরীর।

চেষ্টা করলেই মেয়েরাও পেতে পারে টোনড ও অ্যাবসসমৃদ্ধ শরীর। Sourced by the ABP

সুন্দর, সুঠাম শরীর পেতে সকলেই চান। সারাদিনের ব্যস্ততার পরেও তাই শারীরচর্চা চালিয়ে যান অনেকেই। রুপোলি পর্দায় সলমন খান কিংবা টাইগার শ্রফের মতো নায়কদের সিক্স প্যাক সমৃদ্ধ শরীর দেখে সে রকম অ্যাবস বানানোর স্বপ্ন দেখেন অনেক ছেলেই। কিন্তু জেন্ডার ইকুয়ালিটির এই যুগে দাঁড়িয়ে সিক্স প্যাক অ্যাবসের স্বপ্ন দেখার অধিকার কি একমাত্র ছেলেদেরই রয়েছে? চেষ্টা করলেই মেয়েরাও পেতে পারে টোনড ও অ্যাবসসমৃদ্ধ শরীর। রুপোলি পর্দায় বহু নায়িকাও এখন সিক্স প্যাক অ্যাবস বানান।

ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাসের কথায়, “সাধারণত ছেলেদের মতোই মেয়েদের ক্ষেত্রেও দেহের মাঝের অংশ অর্থাৎ পেটের দিকে মেদ বেশি থাকে। ওখানকার মেদ ঝরানোই সবচেয়ে জরুরি এবং কঠিনও বটে। কিন্তু অসম্ভব নয়। নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম এবং ডায়েট মেনে চললে কুড়ি থেকে ছাব্বিশ দিনের মধ্যেই মেয়েরা পেতে পারেন সিক্স প্যাক অ্যাবস।’’ ক্রাঞ্চেজ়, বাইসাইকল ক্রাঞ্চেজ়, রাশিয়ান টুইস্ট, প্ল্যাঙ্ক, হলো হোল্ড ইত্যাদি নানা শারীরচর্চাই পৌঁছে দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।

কী খাবেন? কেন খাবেন?

পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরীর মতে, শারীরচর্চার সঙ্গে অবশ্যই মেনে চলতে হবে নির্দিষ্ট কিছু ডায়েটও। অ্যাবস বানাতে শরীরে দরকার প্রোটিনের জোগান। প্রোটিনের মধ্যে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড আকর্ষক পেশি তৈরিতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে শরীরের প্রয়োজনের জন্য দেওয়া হয় ল্যাকটোজ়, ফ্রুকটোজ়ের মতো কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। মাসল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিনস, মিনারেলসও পর্যাপ্ত পরিমাণে দেওয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মূলত লিকুইড ডায়েট অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ফলের রস, নানা ধরনের সবজি কিংবা চিকেন সুপ, ডালের জল দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে। কোয়েলের পরামর্শ অনুযায়ী, সলিড খাবারের মধ্যে রাখতে পারেন গ্রিলড চিকেন বা পনির, ডিমের সাদা অংশ, নানা ধরনের স্প্রাউটস ইত্যাদিও। লিউসিন, আইসোলিউসিন, ভ্যালাইন ইত্যাদি ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিডও পেশি তৈরিতে প্রয়োজন হয়। কোয়েলের মতে, আজকাল সে সবের জন্য হোয়ে প্রোটিন সহ নানা ধরনের সাপ্লিমেন্টসও বাজারে পাওয়া যায়। তবে, এই ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টস অতিরিক্ত নিলে অনেক সময়েই শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই এ ধরনের ডায়েট অনুসরণ করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

সমস্যা কী কী?

তবে, সমস্যা অন্য জায়গায়। সিক্স প্যাক অ্যাবস বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় শারীরচর্চা কিন্তু মেয়েদের জন্য বেশ ক্ষতিকর। এর মূল কারণ মেয়েদের শারীরিক গঠন। ছেলেদের পেলভিক অংশ সরু। তাই পেটের মেদ কমিয়ে অ্যাবস বানানো তাঁদের পক্ষে সহজ। কিন্তু মেয়েদের পেলভিক অংশটি ছেলেদের তুলনায় অনেক চওড়া। তাঁদের কটিরেখাও ছেলেদের তুলনায় বড়। তাই মেয়েদের কাছে অ্যাবস বানানো যেমন বেশি চ্যালেঞ্জিং, তেমন শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকিও অনেক বেশি। সৌমেন দাস জানালেন, নারীশরীরে হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার্থে তলপেটে অন্তত ২০ শতাংশ ফ্যাটের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সিক্স প্যাক তৈরি করতে ঝরিয়ে ফেলতে হয় সেই ফ্যাটও। আর তা শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি হরমোন ক্ষরণের ভারসাম্যেও ব্যাঘাত ঘটায়।

পুষ্টিবিদ কোয়েল ও ফিটনেস ট্রেনার সৌমেন দাস উভয়ের মতেই, সিক্স প্যাক অ্যাবস বানাতে প্রয়োজনীয় শারীরচর্চা এবং ডায়েট অনুসরণের ফলে প্রোজেস্টেরন এবং এসট্রডায়েল হরমোন ক্ষরণ কম হয়। ফলে মেয়েদের ঋতুস্রাবে সমস্যা হয়। ঠিক ভাবে নিয়মিত ঋতুস্রাব না হওয়ায় চাপ পড়ে মস্তিষ্কেও। বেড়ে যায় মুড সুইংয়ের মতো সমস্যা যা দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। অল্পেতে রাগ, ডিপ্রেশন সহ নানা মানসিক সমস্যাও দেখা দেয়। সঙ্গে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাও থাকে। হরমোনের ভারসাম্যের অভাবের কারণে ছেলেদের মতো মেয়েদের মুখেও দাড়ি-গোঁফের প্রাচুর্য দেখা দিতে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে, ক্লান্তি বেড়ে যাওয়া, পেশির দুর্বলতার মতো সমস্যার উদ্রেকও হয়ে থাকে। পাশাপাশি শরীরে ভিটামিনের অভাব হতে পারে। সৌমেন দাসের কথায়, “এর ফলে, শরীরের হাড় নরম ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। শারীরিক নানা রকম ক্ষতির সম্ভাবনার পাশাপাশি ভবিষ্যতে মেয়েদের সন্তানধারণেও সমস্যা হয়। তাই, সিক্স প্যাকঅ্যাবস বানানো মেয়েদের জন্য যথাযথ নয়।”

খেয়াল রাখতে হবে, সিক্স প্যাক অ্যাবস কিন্তু সাময়িক। দীর্ঘদিন এই ধরনের শারীরচর্চা কিংবা ডায়েট অনুসরণ ছেলে বা মেয়ে দু’জনের জন্যই সমান ক্ষতিকর। তাছাড়া, এই ডায়েট কিংবা শারীরচর্চা ছেড়ে দিলেই দ্রুত ওজন বাড়ে, ফ্যাট শরীরে জমা হতে থাকে। কথা প্রসঙ্গে সৌমেন দাস জানান, সিক্স প্যাকের প্রয়োজনীয় শারীরচর্চা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে ফ্যাট শরীরে জমা হয়, তা ঝরানো কিন্তু কঠিন হয়। মূলত অ্যাথলেটিক্স, ভারোত্তোলন, মডেলিং কিংবা অভিনয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এবং অবশ্যই চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের শারীরচর্চা করা ঠিক নয়।

মনে রাখতে হবে

সিক্স প্যাক অ্যাবস বানাতে নিয়মিত ফিটনেস বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসকএবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ একত্রে নেওয়া প্রয়োজন। কড়া ডায়েট অনুসরণের ফলে এ সময়ে শরীরে এনার্জির ঘাটতি থাকে। তাই সামান্য শারীরিক অস্বস্তিও অবশ্যই ফিটনেস ট্রেনারকে জানাতে হবে। প্রয়োজনে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, না হলে প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে যায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Workout Workout Tips

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy