তিল ভারতীয় রান্নায় ব্যবহার হয়ে আসছে বহু যুগ ধরে। শুধু রান্নাই বা কেন, আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি, এমনকি পূজাপাঠেও তিলের ব্যবহার হয়। সাদা এবং কালো এই দু’ধরনের তিলের মধ্যে ভারতে এক সময়ে কালো তিলের ব্যবহারই হত বেশি। বিশেষ করে রান্না, ওষুধ তৈরির ব্যাপারে কালো তিল বেশি কার্যকরী বলে মনে করা হত। মৃদু স্বাদের সাদা তিল দিয়ে বানানো হত মিষ্টি। যা আজও হয়। কিন্তু নানা কাজে ব্যবহার হওয়া তিল ঝিমিয়ে থাকা মেজাজও ভাল করতে পারে, জানতেন কি?
সচরাচর শীতকালেই বাজারে তিলের চাকতি, তিলের নাড়ু, তিল দিয়ে তৈরি আরও নানা সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। তবে তিল শুধু শীতের জিনিস নয়। বছরভরই পাওয়া যায় এবং খাওয়া যায়। তিলে রয়েছে এমন কিছু অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস আর পুষ্টিগুণ, যা মন ভাল রাখার পাশাপাশি শরীরও ভাল রাখতে পারে।
নিয়মিত তিল খেলে কী কী উপকার হতে পারে?
বাঙালি রান্নাঘরে সাদা এবং কালো দু’ধরনের তিলই ব্যবহার হয়। ছবি: সংগৃহীত।
১। মেজাজ ভাল করা
চারপাশে যখন মনখারাপ করা নানা ঘটনা ঘটে চলেছে, তখন মনকে চাপমুক্ত এবং মেজাজ ভাল রাখা নেহাত সোজা কথা নয়। তিলকে বলা হয় প্রাকৃতিক ‘মুড বুস্টার’ বা মেজাজ ভাল করার খাবার। তিলে রয়েছে ট্রিপ্টোফান নামে এক ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড, যা দ্রুত মেজাজ ভাল করতে পারে। পাশাপাশি, তা উদ্বেগ, হতাশার মতো সমস্যাও কমাতে সাহায্য করতে পারে।
২। নাছোড় অসুখ দূরে রাখে
তিলে রয়েছে সেসামলিন এবং সেসামিন নামের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। এই দুই অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টই শরীরকে নানা নাছোড় অসুখের সমস্যা থেকে দূরে রাখে। ভাল রাখে সার্বিক স্বাস্থ্য।
চালের বদলে খাওয়া যেতে পারে তিলের ‘ভাত’। ছবি: সংগৃহীত।
৩। চুল পড়া কমায়
গরমে মাথায় ঘাম বসে চুল পড়ার সমস্যা প্রতি দু’জনে এক জনের হয়েই থাকে। তিলে থাকা তৈলাক্ত উপাদান মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। চুলকে রাখে আর্দ্র। তিলে রয়েছে চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি ভিটামিন বি। বিশেষ করে বি১ অর্থাৎ থিয়ামিন, বি ৩ অর্থাৎ নায়াসিন এবং বি৬। যা চুলের বৃদ্ধির জন্য জরুরি। এ ছাড়া তিলে থাকা কপার চুলের গাঢ় রং বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
৪। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে
তিলের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস ত্বককে ভিতর থেকে ভাল রাখে এবং অকালে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। এ ছাড়া তিলে থাকা ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে। ফলে ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। তিল থেকে পাওয়া তেল সূর্যের অতিবেগনি রশ্মি থেকেও ত্বককে রক্ষা করতে পারে বলে জানাচ্ছে কিছু গবেষণা।
তিল শুকনো খোলায় নেড়ে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে যে কোনও খাবারের উপরে। তাতে স্বাদ বাড়বে। ছবি: সংগৃহীত।
৫। অস্টিয়োপোরোসিস
তিলে থাকা ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফসফরাস হাড় মজবুত বানাতে সাহায্য করে। অস্টিয়োপোরোসিসের মতো রোগে যে সব রোগীর হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়, তাঁদের জন্য উপকারী তিল।
৬। কোলেস্টেরল কমায়, হার্ট ভাল রাখে
তিলে রয়েছে স্বাস্থ্যকর স্নেহপদার্থ। যার মধ্যে অন্যতম পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। দু’টিই ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল বা এলডিএলের মাত্রা কমিয়ে ‘ভাল’ কোলেস্টেরল বা এইচডিএলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে হার্টের স্বাস্থ্যও ভাল থাকে।
সাদা এবং কালো দু’ধরনের তিল দিয়ে বানানো যেতে পারে তিলের নাড়ু। চিনি খেতে না চাইলে গুড়, মধু অথবা খেজুর বেটেও ব্যবহার করা যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
৭। ওজন কমায়, হজমে সহায়ক
ওজন কমানোর জন্য সব সময় খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখতে বলেন পুষ্টিবিদেরা। তিলে রয়েছে ওট্সের থেকেও বেশি ফাইবার। প্রতি ১০০ গ্রাম তিলে ১২ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি হজমশক্তি বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে তিল। কারণ, তিলে থাকা ফাইবার হজমে সহায়ক মাইক্রোবিয়োমগুলিকে ভাল রাখে।