বয়স ৪০ পেরিয়েছে মানে আপনি জীবনের এক সন্ধিক্ষণে। যেখানে জীবনের নানা দায়িত্ব যেমন আপনার উপরে চেপে বসতে শুরু করেছে, তেমনই নিজের শরীর-স্বাস্থ্যেও চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। কারও কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়ছে, তো কারও ধরা পড়ছে হরমোনের সমস্যা। কারও শরীর ভারী লাগছে, হাঁটতে-দৌড়তে আর আগের মতো জুত পাচ্ছেন না, তো কেউ দিনভর ক্লান্তিবোধ করছেন। এ সব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই নজর দেন হার্টের স্বাস্থ্যে, হজম ঠিক রাখতে নিয়ন্ত্রণ করেন খাওয়া-দাওয়া, এমনকি, ওজন কমানোর কথাও ভাবেন অনেকে। কিন্তু কিডনির স্বাস্থ্য নিয়েও ততটা ভাবেন কি?
বিজ্ঞান বলছে, ৪০ বছর বয়সের পরে প্রাকৃতিক ভাবেই শরীরের জোর একটু একটু করে কমতে শুরু করে। ফলে হার্টের সমস্যা, ডায়াবিটিস, ব্লাড প্রেসার, চোখের জোর কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। কিছু কিছু ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে আগে থেকে রোগের উপসর্গ জানা থাকলে এবং জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে রোগকে দূরে রাখা সম্ভব হলে ক্ষতি কী?
কিডনির ক্যানসার কখন হয়?
কিডনির ক্যানসার, যাকে রেনাল ক্যানসার কারসিনোমা বলা হয়, প্রাথমিক ভাবে শুরু হয় কিডনিতে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি হতে থাকলে। যা পরবর্তী কালে টিউমারের আকার নেয়।

ছবি: শাটারস্টক।
কিডনির ক্যানসারের উপসর্গ কী?
প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনির ক্যানসারের উপসর্গ খুব একটা বোঝা যায় না। তবে ধীরে ধীরে রোগ বাড়তে শুরু করলে ছোটখাটো বিষয় নজরে পড়তে থাকে।
১। প্রস্রাবে রক্ত: প্রস্রাবের রং লালচে বা বাদামি হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হোন।
২। কোমরে নাছোড় ব্যথা: কোমরের
এক পাশে টানা ব্যথা, যা বিশ্রাম নিলেও কমছে না, তা চিন্তার। তা কিডনির কোনও
সমস্যার জন্যও হতে পারে।
৩। হঠাৎ ওজন কমা: খাওয়া-দাওয়ায় কোনও পরিবর্তন আনেননি, খুব একটা কিছু পরিশ্রমও করেননি, তার পরেও ওজন কমছে? কিডনি ক্যানসার বা যে কোনও ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে এটি।
৪। দিনভর ক্লান্তিবোধ: ঘুমিয়ে, বিশ্রাম নিয়েও কি ক্লান্তিবোধ কাটছে না? তবে তা কিডনির রোগ বা যে কোনও রোগের লক্ষণ হতে পারে।
৫। শরীরে অস্বাভাবিক ফোলাভাব: পেটে, পায়ে অথবা গোড়ালির চারপাশ কি অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে থাকছে? তবে তা-ও কিডনির সমস্যার কারণে হতে পারে।
৬। জ্বর অথবা রাতে ঘাম হওয়া: রাতে ঘুমোনোর সময় হঠাৎ অস্বাভাবিক ঘামতে শুরু করেছেন? কিংবা অকারণে জ্বর আসছে কি? এ সবও কিডনির সমস্যার লক্ষণ।
৭। নকটুরিয়া: অর্থাৎ বার বার প্রস্রাব হওয়া, বিশেষ করে রাতে এমন হলে অবশ্যই সতর্ক হোন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

ছবি: সংগৃহীত।
আগে থেকে সতর্ক হওয়া যায়?
জিনগত সমস্যা থেকে উদ্ভূত রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়। তবে জীবনযাপনে বদল এনে কিডনির ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
১। ওজন : স্থূলত্ব ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই খাওয়া-দাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করে ওজন বশে রাখুন।
২। ধূমপান : তামাক কিডনি ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ধূমপান বন্ধ করলে সে ঝুঁকি কমবে।
৩। মদ্যপান : অ্যালকোহল কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অতিরিক্ত মদ্যপানে কিডনির ক্ষতি বাড়ে।
৪। জল : সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যাপ্ত জল খান। সন্ধ্যার পরে জল পান কমিয়ে আনুন। দিনে অন্তত তিন লিটার জল খেলে (যদি না কোনও অসুস্থতার কারণে জল খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ থাকে) কিডনি ভাল থাকে।
৫। রক্তচাপ : উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি করে। কিডনির ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।