যে নুন ছাড়া খাবার খাওয়া যায় না, সেই নুনেই লুকিয়ে বিপদ! খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বছরের শুরুতে জারি করা এক নির্দেশিকায় বলে দিয়েছিল, সুস্থ থাকতে হলে দৈনিক নুন খাওয়ার পরিমাণ ৫ গ্রামেরও নীচে নামাতে হবে। কারণ নুনে আছে সোডিয়াম, যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। হু ওই নির্দেশিকা দিয়েছিল টেবিল সল্ট অর্থাৎ সাদা নুন ব্যবহারের ক্ষেত্রে। কিন্তু তার বদলে কি নির্ভাবনায় বিটনুন বা ব্ল্যাক সল্ট ব্যবহার করা যায়?
পুষ্টিবিদেরা বলছেন, সাধারণ নুন এবং বিটনুন— দু’টিতেই প্রায় সমপরিমাণ সোডিয়াম রয়েছে। তবে দু’টি নুন ব্যবহারের সময়ে কিছু পার্থক্য ঘটে যায়, যার ফলে শরীরে তাদের প্রভাবও যায় বদলে।
দুই নুনের পার্থক্য কোথায়?
সাধারণ নুন এবং বিটনুনের মধ্যে সবচেয়ে বড় তফাত হল প্রক্রিয়াকরণে। টেবিল সল্ট অতিরিক্ত বেশি মাত্রায় প্রক্রিয়াজাত। অন্য দিকে, বিটনুনকে খুব বেশি পরিশোধন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না। ফলে টেবিল সল্ট দেখতে হয় সাদা, মিহি, ঝরঝরে। বিটনুনে কিছুটা লালচে ভাব থাকে। তার দানাও সমান হয় না। আর কিছুটা ভিজে ভাব থাকে বিটনুনে। যে জন্য বেশি দিন পড়ে থাকলে জমাট বেঁধে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়।
এর বাইরে স্বাদেও টেবিল সল্ট আর বিটনুন আলাদা। বিটনুনে খানিকটা ডিমের মতো গন্ধ আর টক ভাব রয়েছে। সাধারণ নুন শুধুই নোনতা, তবে খেয়াল করলে খুব হালকা একটা তেতো ভাবও বোঝা যায়।
১০০ গ্রাম সাধারণ সাদা নুনে সোডিয়াম রয়েছে ৩৮ হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম! ছবি: সংগৃহীত।
অবশ্য শুধু রূপে নয়, গুণেও দুই নুন আলাদা। প্রক্রিয়াকরণের জন্য সাধারণ সাদা নুনে কোনও খনিজ অবশিষ্ট থাকে না। তবে তাতে কৃত্রিম ভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয় আয়োডিন। অন্য দিকে বিটনুনে খনিজ থেকে যায়। আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম আর ক্যালশিয়ামের মতো উপকারী খনিজ মেলে বিটনুনে, যা শরীরের জন্য উপকারী। এ ছাড়া বিটনুন গ্যাস-অম্বল এবং পেটফাঁপার মতো সমস্যাতেও সাহায্য করে। বিটনুনে কিছুটা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস থাকায় তা শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করে।
তবে কি বিটনুন বেশি স্বাস্থ্যকর?
যদি নুনে সোডিয়ামের মাত্রা বিচার্য হয়, তবে প্রতি ১০০ গ্রাম বিটনুনে সোডিয়াম রয়েছে ৩৮ হাজার ২০০ মিলিগ্রাম আর ১০০ গ্রাম সাধারণ সাদা নুনে সোডিয়াম রয়েছে ৩৮ হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ, সাধারণ নুনের থেকে বিটনুনে সোডিয়াম রয়েছে সামান্য কম। কিন্তু এখানে একটি মোচড় আছে। ১০০ গ্রামের অনুপাতে বিটনুনে সোডিয়ামের মাত্রার বিশেষ তফাত না থাকলেও এক চামচের হিসাবে অনেক তফাত আছে। চামচের হিসাবে বিটনুনে সোডিয়ামের মাত্রা সাধারণ সাদা নুনের তুলনায় অনেকটাই কম।
অপরিশোধিত বিটনুনের থেকে পরিশোধিত বা রিফাইনড বিটনুন বেশি মিহি এবং কিছুটা ঝরঝরেও। ছবি: সংগৃহীত।
এক চামচ বিটনুনে সোডিয়াম কতটা?
তার আগে জানুন এক চা চামচ সাধারণ সাদা নুনে সোডিয়াম থাকে কতখানি। এক চা চামচ সাদা নুনে সোডিয়াম থাকে ২৩৩০ মিলিগ্রাম। সেখানে এক চা চামচ বিটনুনে সোডিয়ামের মাত্রা থাকে ৪২০ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ, প্রায় এক-চতুর্থাংশ। কী ভাবে তা সম্ভব? এর কারণ বিটনুনের দানার অসমান এবং অমসৃণ গঠন। এক চামচে সাধারণ নুন যে পরিমাণে ওঠে, গঠনগত কারণে বিটনুন ওঠে তার থেকে কম। সেই হিসাবে শরীরে সোডিয়াম কম যেতে পারে।
খেয়াল রাখতে হবে
তবে এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
১। ইদানীং বাজারে এক ধরনের পরিশোধিত বিটনুনও পাওয়া যায়, যা সাধারণ নুনের মতোই মিহি এবং কিছুটা ঝরঝরেও। এই ধরনের নুনের ক্ষেত্রে চামচের পরিমাণে খুব একটা পার্থক্য হবে না। ফলে সোডিয়ামের মাত্রাতেও তফাত হবে না।
২। অপরিশোধিত মোটা দানার বিটনুন ব্যবহার করলেও তা সাদা নুনের সমপরিমাণে ব্যবহার করলে তবেই সোডিয়াম কম যাবে শরীরে। কিন্তু যদি ১ চামচ নুনের বদলে দেড় চামচ বিটনুন ব্যবহার করা হয়, তা হলে বিষয়টি হরেদরে একই দাঁড়াবে।
৩। হু-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী সারা দিনে নুন খাওয়ার মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে ৫ গ্রামেরও নীচে। এক চা চামচে ওঠে ৬ গ্রাম নুন। সেই বিষয় খেয়াল রেখে নুন বা বিটনুন খাওয়ার মাত্রা ঠিক করতে হবে।