পরিবারের বাকি সদস্যদের শরীর নিয়ে যতটা চিন্তিত থাকেন মহিলারা, নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে সাধারণত ততটাই উদাসীন তাঁরা। অথচ ঘরের কাজ, সংসারের দায়িত্ব কিংবা অফিসের চাপ, সবটাই একা হাতে সামলাতে হয় তাঁদের। শরীরের প্রতি দীর্ঘ দিনের অনিয়ম আর অযত্নের ফলে অজান্তেই জন্ম নেয় নানা ধরনের অসুখ। আর ইদানীং কালে স্তন ক্যানসার ও জরায়ুমুখের ক্যানসারের প্রকোপ অনেক বেড়েছে, এর কারণ যেমন বাড়তে থাকা ওজন, তেমনই জীবনযাত্রায় নানা অনিয়ম। চিকিৎসকেরা তাই বলছেন, বয়স ত্রিশ পেরিয়ে গেলেই এমন কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে রাখতে হবে, যাতে ক্যানসারের আভাস আগে থেকেই পাওয়া যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিতে ক্যানসার গোড়ায় ধরা পড়লে এখন নানা রকম চিকিৎসাপদ্ধতি আছে। তাই আগে থেকেই সতর্ক থাকা জরুরি।
কোন পাঁচ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে ক্যানসারের ভয় থাকবে না?
প্যাপ টেস্ট
জরায়ুমুখের ক্যানসার চিহ্নিত করতে প্যাপ টেস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জরায়ুমুখ থেকে কোষের নমুনা সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপের নীচে পরীক্ষা করা হয়। দেখা হয়, কোষের অস্বাভাবিক বা অনিয়মিত বিভাজন হচ্ছে কি না। সাধারণত ২১ বছর বয়স থেকে শুরু করে ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়মিত প্যাপ টেস্ট করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। প্রতি তিন বছর অন্তর এই পরীক্ষা করিয়ে নিলে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে। জরায়ুমুখের ক্যানসার একেবারে প্রাথমিক পর্বে ধরা পড়লে তার নিরাময় সম্ভব।
ম্যামোগ্রাম
স্তন ক্যানসার শনাক্ত করতে এই পরীক্ষা খুবই জরুরি। ম্যামোগ্রাম হল বিশেষ ধরনের এক্স-রে, যা স্তনের কোষের অনিয়মিত বৃদ্ধি হচ্ছে কি না তার রিপোর্ট দিতে পারে। স্তনের ভিতর গজিয়ে ওঠা মাংসপিণ্ড বা টিউমার শনাক্ত করতেও এই পরীক্ষাটি জরুরি। ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মহিলাদের ম্যামোগ্রাম করিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রতি ১ থেকে ২ বছর অন্তর এই টেস্ট করিয়ে রাখা ভাল।
আরও পড়ুন:
এইচপিভি ডিএনএ টেস্টিং
জরায়ুমুখের কোষে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)-এর উপস্থিতি বুঝতে এই টেস্ট করা হয়। ভাইরাস যদি অনেকটা ছড়িয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে প্যাপ টেস্টের সঙ্গেই এইচপিভি ডিএনএ টেস্টও জরুরি। ৩০ বছর বা তার বেশি বয়সি মহিলাদের ক্ষেত্রে প্যাপ টেস্টের সঙ্গে প্রতি ৫ বছর অন্তর এইচপিভি ডিএনএ টেস্টও করিয়ে রাখলে ভাল। এতে ক্যানসারের ঝুঁকি একেবারেই থাকবে না।
বিআরসিএ১ এবং বিআরসিএ২ জিন টেস্টিং
স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার ধরতে এই দুই পরীক্ষা খুবই জরুরি। ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের তেমন কোনও লক্ষণ ধরা পড়ে না। তাই যদি পরিবারে স্তন ক্যানসার, জরায়ুমুখের ক্যানসার বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হওয়ার ইতিহাস থাকে, তা হলে বয়স ত্রিশ পেরনোর সঙ্গে সঙ্গে এই দুই জিন স্ক্রিনিং করিয়ে রাখা জরুরি।
হিস্টেরোস্কোপি
এই পদ্ধতিতে একটি ক্যামেরা বসানো নল (হিস্টেরোস্কোপ) যোনি এবং জরায়ুমুখের মধ্য দিয়ে জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়। এর ডগায় থাকা ক্যামেরা দিয়ে জরায়ুর ভিতরের অংশ সরাসরি দেখা যায়। জরায়ুর ভিতরের আস্তরণ বা এন্ডোমেট্রিয়ামের ভিতরে কোনও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, পলিপ বা টিউমার হচ্ছে কি না, তা ধরতে এই পরীক্ষা করা হয়।