লিভারের বেশির ভাগ রোগ সহজে সারতেই চায় না। বরং দীর্ঘ দিন ধরে কুরে কুরে লিভারকে নিঃশেষ করতে থাকে। শেষে গিয়ে প্রতিস্থাপন ছাড়া আর কোনও গতি থাকে না। লিভারের বেশির ভাগ রোগই জানান দিয়ে আসে না। তলে তলে বাসা বাঁধে এবং বছরের পর বছর উপসর্গহীন ভাবেও থেকে যেতে পারে। ঠিক যেমন ফ্যাটি লিভার এবং লিভার সিরোসিস। এই সব রোগ কেবল লিভারের নয়, শরীরের অন্য অঙ্গগুলিরও ক্ষতি করে। বিশেষ করে কিডনির ক্রনিক অসুখের কারণও হয়ে উঠতে পারে এই অসুখগুলি। লিভারের রোগ হওয়া মানেই জীবনভর গাদা গাদা ওষুধ খেয়ে চলা। আর কিডনি বিকল হলে তো কথাই নেই। ডায়ালিসিস ছাড়া গতিই থাকবে না। কাজেই আগে থেকে যদি শরীরের একটু যত্ন নেওয়া যায়, তা হলে লিভার ও কিডনির অসুখ থেকে বিপদ ঘটার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
লিভার ভাল রাখতে পুষ্টিকর খাওয়া, রোজের শরীরচর্চার উপরেই বেশি জোর দিতে বলেন চিকিৎসকেরা। খাওয়াদাওয়ায় অনেক বিধিনিষেধ এসে যায়। তবে একটা সময়ে, যখন এত ওষুধ খাওয়ার চল ছিল না, তখন ঘরোয়া কিছু উপায়েই রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করা হত। লিভার ও কিডনি ভাল রাখার সেই উপায়গুলি কী কী?
পেটের বিশেষ অংশে মালিশ
সোজা হয়ে বসেও করতে পারেন বা চিত হয়ে শুয়ে। ডান হাতের তালু লিভারের অংশে অর্থাৎ, পেটের উপরের ডান দিকে রাখতে হবে। আলতো ভাবে চাপ দিয়ে ঘড়ির কাঁটার দিকে বৃত্তাকারে মালিশ করতে হবে টানা ৫ মিনিট। এই সময়ে গভীর ভাবে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। শ্বাস নেওয়ার সময় পেটের পেশিগুলিকে শিথিল রাখুন। ডান পাঁজরের নীচ থেকে শুরু করে নিচের দিকে এবং বাম দিকের পাঁজরের নীচে অবধি মালিশ করতে পারলে ভাল হয়।
আরও পড়ুন:
এই মালিশের উপকারিতা অনেক। এতে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়, পেটের পেশিগুলির নমনীয় হয় এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়ে।
হলুদ জলে গার্গল
শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটি অতি পুরনো টোটকা। ঈষদুষ্ণ জলে এক চিমটে হলুদ মিশিয়ে সেই জল দিয়ে গার্গল করতে হবে ৩০ সেকেন্ড। এই ভাবে তিন থেকে চার বার রোজ করলে লিভারে জমা টক্সিন বেরিয়ে যাবে।
হলুদে কারকিউমিন নামে যৌগ আছে, যা প্রদাহনাশক। হলুদ জলে গার্গল করলে শরীরের ভেগাস স্নায়ু সক্রিয় হবে। এই স্নায়ুর কাজই হল বিপাকক্রিয়া ও হজমে সাহায্য করা। হলুদ জলে গার্গল করলে স্নায়ুর কার্যকারিতা বাড়বে, লিভারের রোগের আশঙ্কাও কমবে।
ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে মালিশ
তুলোয় করে বা পরিষ্কার সুতির কাপড়ে সামান্য ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে নাভির চারপাশে ও পেটের উপরের দিকে ডান দিকে বৃত্তাকারে মালিশ করতে হবে। তার পর সেই তুলো বা কাপড় পেটের উপরেই রেখে তার উপর গরমে জলে ভেজানো তোয়ালে বা হিট প্যাড রেখে দিন মিনিট পাঁচেকের জন্য। এই পদ্ধতিতে লিভার থেকে টক্সিন বেরিয়ে যাবে দ্রুত।
আকুপ্রেশার
লিভার ও কিডনি ভাল রাখতে আকুপ্রেশার করতে পারেন নিজেই। লিভারের জন্য যে পয়েন্টটি চাপ দিতে হবে তার নাম ‘লিভার ৩’ (এলভি ৩), এই পয়েন্টটি থাকে পায়ের বুড়ো আঙুল ও দ্বিতীয় আঙুলের সংযোগস্থলে যে হাড় আছে, তার ঠিক দেড় থেকে ২ ইঞ্চি পিছনে। ওই জায়গায় চাপ দিয়ে বৃত্তাকার গতিতে ১-২ মিনিট মালিশ করতে পারলে লাভ হবে।
কিডনির জন্য যে পয়েন্টটি আছে তার নাম ‘কিডনি ১’ (কেআই ১)। এই পয়েন্টটি থাকে পায়ের পাতার ঠিক মাঝখানে। ওই জায়গায় ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট চাপ দিলে কিডনি ভাল থাকবে।
কাঁচা মৌরি চিবনো
খাওয়ার পরে কেবল মুখশুদ্ধি হিসেবে নয়, মৌরির গুণ অনেক। ভরপুর ভূরিভোজের পরে খানিকটা মৌরি মুখে ফেললেই দেখবেন গা গোলানো ভাবটা কমে যাবে। খাওয়াদাওয়ার পরে কাঁচা মৌরি চিবিয়ে খেলে তার রস হজমে সহায়তা করবে। তবে এক চামচের মতো মৌরিই খেতে হবে, এর বেশি নয়।