অনেক শিশুই দেরিতে হাঁটতে শেখে। তবে যদি শিশুর তিন থেকে পাঁচ বছর বয়স অবধি দেখা যায় সে পায়ের আঙুলগুলিতে ভর দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছে, মাটিতে পায়ের পাতা ফেলতে পারছে না, তা হলে সতর্ক হতেই হবে বাবা-মাকে। অনেক শিশুই খেলার ছলে এমন ভাবে হাঁটে। তবে দেখতে হবে যদি শিশুর সর্ব ক্ষণের হাঁটাচলাই তেমন হয়, সে ক্ষেত্রে তা স্বাভাবিক নয় বলেই দাবি করেছেন গবেষকেরা। পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে হাঁটা, দৌড়নো বা হাঁটাচলার সময়ে শরীরের ভারসাম্য রাখতে না পারা অটিজ়মের লক্ষণ।
ক্যালিফোর্নিয়ার ‘অটিজ়ম রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর গবেষকেরা জানিয়েছেন, জন্মের পর থেকে প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যেই অটিজ়মের নানা লক্ষণ ধরা পড়ে, যেমন— শিশু ঠিকমতো কথা বলতে পারবে না, বুদ্ধির বিকাশ হবে না, স্বাভাবিক মেলামেশার ক্ষমতা থাকবে না, মনের ভাব প্রকাশ করতেও পারবে না। এর সঙ্গেই যে লক্ষণ দেখা দেবে তা হল, হাঁটাচলায় অস্বাভাবিকতা। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অন্যান্য লক্ষণ তেমন ভাবে প্রকাশ না পেলেও হাঁটাচলা দেখে গোড়াতেই বাবা-মা বুঝতে পারবেন যে, সন্তান অটিস্টিক কি না। তার জন্য দেখতে হবে, শিশু ঠিক কী ভাবে হাঁটছে। যদি দেখা যায়, হাঁটার সময়ে পড়ে যাচ্ছে, সব সময়েই পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে হাঁটা বা দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তা হলে বুঝতে হবে, লক্ষণ স্বাভাবিক নয়। সমীক্ষা বলছে, অটিজ়মে আক্রান্ত ২৫-৪৫ শতাংশ শিশুই এমন ভাবে হাঁটার চেষ্টা করে।
আরও পড়ুন:
অটিজ়মে শরীরের পেশির গঠনেও অস্বাভাবিকতা থাকে অনেক সময়েই। ‘ভেস্টিবিউলার সিস্টেম’ অকেজো হয়ে পড়ে। অর্থাৎ শরীরের ভারসাম্য রক্ষাকারী কোষ-কলাগুলি দুর্বল হয়। তখন হাঁটাচলা করা, দৌড়নো, ওঠা বা বসার সময়ে শরীরের ভঙ্গিমা কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে সঙ্কেত পাঠাতে পারে না মস্তিষ্ক। ফলে স্নায়বিক সমস্যাও দেখা দিতে থাকে।
অটিজ়ম ঠিক কী কারণে হয়, তা এখনও বিজ্ঞানীদের অজানা। এর মধ্যে যেমন জিনঘটিত কারণ আছে, তেমনই অনেক অসুখ থেকেও অটিজ়ম হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রোমোজোমের সংখ্যার হ্রাস বা বৃদ্ধির কারণেও এই রোগ হয়। গবেষকেরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন কোষের পারস্পরিক সংযোগ কমে যাওয়া অথবা স্নায়ু থেকে নিঃসৃত কিছু রাসায়নিক পদার্থের অভাবের কারণেও অটিজ়ম হতে পারে। পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে হাঁটার চেষ্টা তেমনই একটি লক্ষণ। তাই সতর্ক থাকতেই হবে।