রোজ কম্পিউটারে কাজ করার সময়ে কনুইয়ের কাছে ব্যথা টের পাচ্ছেন, কিন্তু তাকে কোনও রোগের উপসর্গ বলে আগে খেয়াল করেননি। এই ব্যথাই কিন্তু বাড়তে বাড়তে টেনিস এলবোয় পরিণত হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলে ‘ল্যাটারাল এপিকনডাইলাইটিস’। এ রোগে সাধারণত কনুইয়ের হাড়ের বাইরের দিকে ব্যথা হয়। সেই ব্যথা কব্জি অবধিও পৌঁছোতে পারে। দিনে দিনে সেই ব্যথা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেল যে, ভারী কোনও কাজ করা দূর-অস্ত, হাতের মুঠোয় শক্ত করে কিছু ধরাই অসম্ভব। কনুইয়ের হাড়ে এ ধরনের ব্যথা হওয়া, কনুইয়ে ভর দিতে না পারা, মুঠো করতে না পারা, ভেজা জামা-কাপড়ের জল নিংড়াতে না পারা বা রুটি বেলতে না পারা, এ সবই ‘টেনিস এলবো’র লক্ষণ হতে পারে।
কেন হয়?
রিস্ট এক্সটেনশন পেশিগুলি থেকে এই ব্যথার সূত্রপাত হয়। এর পিছনে অনেক কারণ কাজ করে। মূলত রিপিটেটিভ ক্রনিক ইনজুরি থেকে এই ব্যথা হয়। বার বার একই কাজ করে গেলে সেই চোট বাড়তে থাকে। কখনও কখনও আর্থ্রাইটিসের সূত্রপাত হয় এই ব্যথা থেকে। গাউট, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হতে পারে। কখনও এই মাস্ল টেন্ডন জংশনে প্রদাহ দেখা দিলে তা থেকেও ল্যাটারাল এপিকন্ডিলাইটিস হতে পারে।
কী করলে সারবে ব্যথা?
আগে বুঝতে হবে রোগের কারণ কী। সেই কারণ ধরে রোগের চিকিৎসা শুরু করতে হবে। যদি দেখা যায়, রিপিটেটিভ ইনজুরি থেকে ব্যথা হচ্ছে, তা হলে সেই ধরনের কাজ বন্ধ রাখতে হবে। এর সঙ্গে ওজন তোলাও বন্ধ রাখতে হবে। এই রিপিটেটিভ বিহেভিয়ার অন্তত তিন-চার মাস ধরে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা হলেই অনেকটা সুফল পাওয়া যায়। তবে যদি কোনও প্রদাহজনিত কারণে সমস্যা শুরু হয়ে থাকে, তা হলে বিশ্রাম দরকার। আর তার পাশাপাশি ইনফ্ল্যামেশনের চিকিৎসাও করতে হবে। চিকিৎসকের পরমার্শ নিয়ে ওষুধ ও ফিজ়িয়োথেরাপি করাতে হবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ ক্রনিক হয়ে যায়। তখন কিন্তু অস্ত্রোপচার করাতে হতে পারে।
কী করবেন না?
ব্যথার উপর ব্যায়াম নয়। ব্যথা কমাতে গিয়ে সকাল-সন্ধ্যা ব্যায়াম করছেন? ব্যথা তো কমবেই না, উল্টে বেড়ে যাবে। দীর্ঘ দিন একই জায়গায় যন্ত্রণা হওয়ার ফলে পেশি ফুলে যেতে পারে। ব্যথা বাড়তে পারে। তাই ব্যায়াম করতে হলে চিকিৎসক আর দক্ষ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রাথমিক ভাবে কিছু দিন সব রকম ভারী কাজ বন্ধ রাখতে হবে। ঠান্ডা এবং গরম সেঁক দিয়ে ব্যথা কমাতে হবে। ওই জায়গায় ব্যথা কমানোর মলমও লাগানো যেতে পারে। না কমলে অবশ্যই চিকিৎকের পরামর্শ নিতে হবে।