সন্ধে হলেই গরম চা আর সঙ্গে পছন্দের ‘টা’ না হলে বাঙালির মনটা যেন ঠিক ভরে না। অফিসে কাজের মাঝে হোক বা বাড়ি ফিরে ক্লান্তি কাটাতে চা চাই-ই-চাই! তবে এ বার বোধ হয় সে সুখে দাঁড়ি টানার সময় এসেছে। এই অভ্যাসেও লুকিয়ে থাকতে পারে ক্যানসার কাঁটা। প্রতি দিন ফুটন্ত চা পান থেকেই খাদ্যনালিতে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে, এমনই মত চিকিৎসকদের। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটিও ইতিমধ্যেই এই অভ্যাসে লাগাম টানার নিদান দিয়েছে।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ক্যানসার’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীদের দাবি, খাদ্যনালিতে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বহু গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে ফুটন্ত চা খাওয়ার প্রবণতা। প্রায় প্রতি দিনই যাঁরা ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রার চা খান, তাঁদের এই ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় প্রায় দ্বিগুণ।
অনেকেই নানা খাবার গরম খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু গবেষণায় প্রমাণিত, খুব গরম চা যাঁরা খান, তাঁদের এই অসুখের সম্ভাবনা বাড়ে। ক্যানসার চিকিৎসক এসকে বালা বলেন ‘‘যে কোনও গরম পানীয়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে গরম চায়ের ভূমিকা সবচেয়ে ক্ষতিকর। গলা থেকে পাকস্থলীর মধ্যে দিয়ে যখন চা নামে, তখন এর গরম ক্যাফিন খাদ্যনালির কোষগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সেখান থেকেই আলসার ও ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে।’’ একই মত ক্যানসার চিকিৎসক সুকুমার সরকারেরও। তাঁর মতে, “যে কোনও ফুটন্ত গরম খাবারই এড়িয়ে চলতে বলা হয় এই কারণেই। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজে়শন (হু)-ও ৬৫ ডিগ্রির উপরের তাপমাত্রার কোনও পানীয় খেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইতিমধ্যেই। মুখ, গলা ও খাদ্যনালিতে হওয়া ফুয়েল টিউমারই এই ধরনের ক্যানসারকে ডেকে আনে।”
গরম চা খেলে কিন্তু জিভই সতর্কবার্তা দেয়। বেশি গরম চা বা কফি খেলে যেমন জিভ পুড়ে যায়, তেমনই খাদ্যনালিও কিন্তু পুড়ে যেতে পারে। চা-কফি খেতে হলে খানিকটা ঠান্ডা করে খাওয়াই শ্রেয়। এতে স্বাদও ভরপুর পাওয়া যাবে আর ক্যানসারের ঝুঁকিও এড়ানো সম্ভব হবে।