বর্ষবরণের দিন পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া হবে না, তা হয় নাকি। আর ভূরিভোজ মানেই ভুঁড়ি বাড়বে অবধারিত ভাবেই। আগে থেকেই যদি গ্যাস-অম্বলের সমস্যা থাকে তা হলে তো কথাই নেই। ঝালে-ঝোলে-অম্বলে খাওয়ার পরে যদি গলা-বুক জ্বালা করতে শুরু করে, তা হলে আনন্দটাই মাটি হবে। দিনভর যদি ভালমন্দ খাওয়ার পরিকল্পনা থাকে, তা হলে শরীর ডিটক্স করে নিতেই হবে। তার জন্য নরম পানীয় নয়, বরং বাড়িতে বানিয়ে নিন কিছু ডিটক্স পানীয়।
ডিটক্স করা ঠিক কাকে বলে? এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর মত, “ডিটক্স মানে হল ‘ডিটক্সিফিকেশন’। প্রতি দিন যে খাবার আমরা খাই তা ঠিকমতো হজম না হলে তার থেকে দূষিত পদার্থ জমা হয় শরীরে। আর যদি বাইরের খাবার, ভাজাভাজু, জাঙ্ক ফুড বেশি খাওয়া হয়, তা হলে সেইসব প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা রাসায়নিক টক্সিন হিসেবে জমতে থাকে যা গ্যাস-অম্বল, পেটের সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে। অ্যালকোহল বা বিভিন্ন রকম ওষুধের উপাদানও এই বিষ প্রবেশের কারণ হতে পারে। সুস্থ থাকার জন্য এই সব টক্সিন বা বিষ শরীর থেকে বার করা প্রয়োজন। তার জন্য অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ নয়, বরং কিছু ভেষজ পানীয়ই উপকারে আসতে পারে। তবে, ইন্টারনেট ঘেঁটে বা বাজারচলতি কিছু ডিটক্স পানীয় কিনে খেলে কিন্তু লাভ হবে না। কারণ, সকলের শরীরে সব রকম পানীয় কার্যকরী না-ও হতে পারে। তাই কী ধরনের পানীয় খাবেন, তা জেনে রাখা খুব জরুরি।
শশার ডিটক্স
· শসার খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে নিন।
· পাতিলেবু ছোট ছোট টুকরো করে কেটে রাখুন।
· কাচের পাত্রে পরিমাণ মতো জল নিয়ে শসা এবং লেবু ভিজিয়ে রাখুন। সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে পারলে ভাল হয়।
· চাইলে এক মুঠো পুদিনা পাতাও ছড়িয়ে দিতে পারেন। পরের দিন সকালে সেই জল খেয়ে নিন।
পুদিনা-মশলার ডিটক্স
পুদিনা পাতা, ধনে পাতা, মশলার মধ্যে আদা, দারচিনি, গোটা হলুদ, লবঙ্গ ইত্যাদি ভিজিয়েও ডিটক্স পানীয় তৈরি করা যায়। এই পানীয় ওজন তো কমাবেই, এতে এত বেশি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
আমলকির রস
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর আমলকির রস। হজমশক্তি উন্নত করা থেকে বিপাকহার বাড়িয়ে তোলা— সবই সম্ভব আমলকির গুণে। ব্লেন্ডারে আমলকি মিহি করে বেটে নিন। তার সঙ্গে অল্প জল, গোলমরিচের গুঁড়ো এবং বিটনুন মিশিয়ে নিন। শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করতে সাহায্য করে এই পানীয়।
আরও পড়ুন:
জোয়ান-জিরের জল
ভারী কিছু খাওয়ার পরে পেট ফাঁপা, পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা কমাবে। গ্যাস-অম্বলের ধাত যাঁদের বেশি, তাঁরা এই পানীয় খেতেই পারেন। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা থাকলেও খাওয়া যেতে পারে জোয়ান-জিরের জল। দু’কাপ জলে এক চামচ জোয়ান ও এক চামচ গোটা জিরে দিয়ে কম আঁচে ফোটান। জল ফুটে গেলে গ্যাস বন্ধ করে কিছু ক্ষণ ঢাকা দিয়ে রাখুন। তার পর ছেঁকে এই জলটা খেতে হবে।
পুদিনা-ধনেপাতার রস
গ্যাস, অম্বল, পেটফাঁপা কিংবা হজম সংক্রান্ত সমস্যা হলে এই পানীয় দারুণ কাজের। ব্লেন্ডারে একমুঠো ধনে এবং পুদিনা পাতা একসঙ্গে দিয়ে ভাল করে বেটে নিন। এ বার ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিয়ে খেয়ে নিন। এই পানীয় সকাল সকাল খেলেই সবচেয়ে ভাল হয়। প্রয়োজনে সামান্য মধু এবং লেবুর রসও মিশিয়ে নিতে পারেন।