জেলাজুড়ে রক্তের সঙ্কট চলছেই। তারই মাঝে, অন্যদিকে জেলার থ্যালাসেমিয়া দফতরে গত ছ’মাস ধরে কোনও চিকিৎসক নেই। এর ফলে কার্যত জেলায় থ্যালাসেমিয়া বাহক চিহ্নিতকরণই বন্ধ। চলতি মাসের ১৪ তারিখ বিশ্ব রক্তদান দিবস। তার আগেই তাই নতুন করে প্রশ্ন উঠে গেল জেলায় রক্ত সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে!
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, জেলায় তিনটি ব্লাড ব্যাঙ্ক থাকলেও থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিট মাত্র একটি। গত ৭ জানুয়ারি ২০১২ সিউড়ি জেলা হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া ইউনিটের উদ্বোধন করেন সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। জেলায় এই ইউনিটটি চালু হওয়ার আগে জেলার সমস্ত থ্যালাসেমিয়া রোগীদের বর্ধমান মেডিকেল হাসপাতাল থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে হত।
জেলার যে তিনটি ব্লাডব্যাঙ্ক, সেগুলি সিউড়ি, রামপুরহাট ও বোলপুরে রয়েছে। এরমধ্যে সিউড়িতেই রক্তের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রতিমাসে গড়ে ৯০০-১০০০ ইউনিট, রামপুরহাটে ৬০০-৭০০ ইউনিট ও বোলপুরে ৫০০-৬০০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। জেলা থ্যালাসেমিয়া ইউনিট সূত্রে জানা যায়, জেলায় এই মুহূর্তে ৩৭২ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর নাম নথিভুক্ত আছে রেজিস্টারে। এ ছাড়াও আরও ৯০-১০০ জন মতো রোগীর নাম এখনও নথিভুক্ত হয়নি। কারণ তাঁরা এখনও থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য ইস্যু করা বই ও পরিচয় পত্র পাননি। বই ও পরিচয় পত্র না পাওয়ার কারণ, এখনও পর্যন্ত তাঁদের এইচপিএলসি (হাই পারফরমেন্স লিক্যুইড ক্রোমেটোগ্রাফি) পরীক্ষা করা যায়নি। গত ছ’মাস আগে খয়রাশোলের নাগরাকান্দা বিপিএইচসিতে বদলি করা হয় দফতরের চিকিৎসক প্রসূনকুমার দাসকে। সেই থেকে থ্যালাসেমিয়া চিহ্নিতকরণ বন্ধ আছে জেলায়।
জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলেন, এই পরীক্ষা মাধ্যমেই একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে চিহ্নিত করা হয় যে, সে কোন ধরণের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। সিউড়ি ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, প্রতিমাসে যে ৯০০-১০০০ ইউনিট রক্ত প্রয়োজন হয়, তা এলাকার বিভিন্ন রক্তদান শিবির থেকে অনেকটাই আসে। ওই সব শিবির থেকে গড়ে মাসে রক্ত সংগ্রহ হয় ৪০০-৪৫০ ইউনিট। যার সিংহভাগই যুগিয়ে থাকেন মহম্মদবাজারের বিডিও তথা থ্যালাসেমিয়ার বাহক সুমন বিশ্বাস। এ কথা স্বীকার করে নেন সিউড়ি ব্লাড ব্যাঙ্কের কাউন্সিলার কৌস্তভ ঘোষ। এ ছাড়াও কম বেশী শিবির মাধ্যমে রক্তর যোগান দিয়ে থাকে এলাকার বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। এখন জেলাজুড়েই জোগান কম।
বোলপুরের বিডিও শমীক পানিগ্রাহী বলেন, ‘‘সমস্যা দূর করতে বোলপুর এলাকার পঞ্চায়েত গুলিতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে।’’ মহম্মদবাজারের বিডিও সুমন বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমি নিজে একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক। আমাদের এলাকায় সারা বছরই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিশ্ব রক্তদান দিবস উপলক্ষে এ মাসের ১১, ১৪ ও ১৫ তারিখ রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে।’’ রক্তের সমস্যা মেটাতে রামপুরহাটেও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান । রামপুরহাট এসডিও উমাশঙ্কর এস।
জেলায় থ্যালাসেমিয়া ইউনিট হওয়ায় যে জেলার সমস্ত থ্যালাসেমিয়া রোগীর নাম নথিভুক্ত হয়েছে তা নয়। অনেকেরই নাম এখনও বর্ধমানে রয়ে গেছে। যেমন বোলপুর গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা ২৬ বছড়ের অনন্ত বিশ্বাসের নাম বর্ধমান থ্যালাসেমিয়া ইউনিটে নথিভুক্ত রয়েছে। অনন্ত বলেন, ‘‘আমার মতো অনেকেরই নাম এখনও বর্ধমানে রয়ে গেছে।’’ কেউ কেউ রক্তের যোগানের জন্যই বর্ধমানে নাম রেখেছেন, এমনও বলছেন।
ঘটনা হল, প্রয়োজনের তুলনায় ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত সংগ্রহ কম হওয়ায় মাঝে মধ্যেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় থ্যালাসেমিয়া-সহ অন্যান্য রোগীদের। একাধিক রোগীর কথায়, ‘‘যে দিন রক্ত প্রয়োজন তার অনেক আগে থেকেই ব্লাড ব্যাঙ্কে নিজেকে বা পরিবারের কাউকে তদারকি শুরু করতে হয়।’’ আর সব থেকে বড় সমস্যা হলো যাঁদেরকে মাসে একাধিকবার রক্ত নিতে হয় তাঁদের। কারণ ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে মাসে একবার রক্ত দেওয়া হয়। তার বেশি বা দ্বিতীয়বার রক্ত পেতে হলে অবশ্যই সঙ্গে ডোনার নিয়ে যেতে হবে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক শ্যামল মন্ডল বলেন, ‘‘রক্তদানের ব্যাপারে জেলায় এক ব্যাতিক্রমী মানুষ হলেন মহম্মদবাজারের বিডিও। তাঁর উদ্যোগে শুধু মহম্মদবাজার এলাকাতেই প্রায় পঞ্চাশটি রক্তদান শিবির হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হবে।’’
চিহ্নিতকরণ না হওয়া প্রশ্নে কী বলছেন সিএমওএইচ ভাস্কর সামন্ত?
ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘মাসখানেক হল এই জেলার দায়িত্বে এসেছি। চিকিৎসকের ঘাটতি তো আছেই। চিহ্নিতকরণও শুরু হয়ে যাবে দ্রুত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy