বেদ, পুরাণ থেকে জানা যায়, প্রভাতকালে ও সন্ধ্যাকালে আরতি করার কথা এবং শঙ্খধ্বনি করার কথা। আবার বিজ্ঞানসন্মত ভাবে বলা যায় যে, শঙ্খধ্বনির ফলে বিভিন্ন জীবাণুর বিনাশ ঘটে থাকে। তাই প্রতিটি গৃহের পক্ষেই এটা মঙ্গলজনক। মুসলিমদের ক্ষেত্রে যেমন নির্দিষ্ট সময়ে আজান দেওয়া হয় অর্থাৎ সকলকে জানিয়ে দেওয়া যে, উপাসনা করার সময় হয়ে গিয়েছে। তেমনই হিন্দু বা সনাতন পদ্ধতিতে সন্ধ্যার উপাসনা করার ইঙ্গিত দেওয়া হয় শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে।
এখন দেখে নেওয়া যাক আরতি করার ফল-
যম বলেছেন, যে সকল জাতক-জাতিকা নিয়মাবলম্বী হয়ে সন্ধ্যার উপাসনা করেন, তারা সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়ে অক্ষয় ব্রহ্মলোকে গমন করেন।
মনু বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রাতঃকালে ও সায়ংকালে উপাসনা না করে, সে ব্রাহ্মণ হয়েও শূদ্রের ন্যায়। সেই ব্রাহ্মণকে দ্বিজাতির সকল কার্য থেকে বাইরে রাখবে।
আবার ঋষিদের উদ্দেশে বলেছেন, ঋষিগণ অধিক ক্ষণ সন্ধ্যার উপাসনা করেন বলে তারা ইহলোকে দীর্ঘায়ু, যশ, কীর্তি ও ব্রহ্মতেজ সমম্বিত।
যাজ্ঞবল্ক বলেছেন, রাত্রিকালে কিংবা দিনমানে অজ্ঞানকৃত যত কিছু পাপই হোক না কেন, ত্রিকাল সন্ধ্যা দ্বারা (প্রাতঃ, মধ্যাহ্ন, সায়ংসন্ধ্যা) সে সকল পাপ থেকে মুক্ত হয়ে থাকে।
উল্লেক্ষিত ফলগুলি শাস্ত্রবাক্য। কিন্তু বর্তমান কলিকাল অর্থাৎ এই কলিযুগে নানারকম বিকারগ্রস্থ মানব মনের উদয় থাকবে যা বিশ্বাসের অভাব। ‘কলিযুগে লীলাচিন্তা বড় লঘু পায়/ চিন্তয়ে সতই সেই সেই তাঁরে পায়’। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু, যবন হরিদাস, শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ সকলেই কলিযুগে উদ্ধার পাওয়ার উপায়স্বরূপ হরিনামের কথা বলে গিয়েছেন।
এখনও যদি মানুষ একটু সচেতন হয়ে শাস্ত্রকথা অনুধাবন করে থাকেন, প্রতিটি গৃহে সন্ধ্যারতির সময় নির্দিষ্ট ভাবে করা এবং মঙ্গল কামনা করুন ঈশ্বরের কাছে এবং যারা জপ, তপ করতে চান, তারাও একটি নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎ সায়ংকাল যেখানে যে অবস্থায় আছেন বা থাকেন উচ্চস্বরে না হোক মনে মনে দশবার বলুন—
‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে’।
এই আটমাত্রা বত্রিশ অক্ষর শব্দটি। তা হলে নিজের পরিবারের, প্রতিবেশীর, শহর বা গ্রাম, রাজ্যবাসীর তথা রাষ্ট্রবাসীর এবং বিশ্ববাসীর অবশ্যই উপকার হবে এবং ত্রিতাপ জ্বালা থেকে আপনিও মুক্ত হতে পারবেন। অতএব সন্ধ্যারতি গৃহের পক্ষে মঙ্গলজনক তারসঙ্গে শঙ্খধ্বনিও আবশ্যক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy