Advertisement
E-Paper

তিথি হিসেবে জন্মাষ্টমীর গুরুত্ব কতটা

জ্যোতিষের হিসেবে সাধরণত যে কোনও অষ্টমী তিথিকে খুব একটা শুভ দিন বা শুভ তিথি হিসেবে ভাবা হয় না।

অসীম সরকার

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০

জ্যোতিষের হিসেবে সাধরণত যে কোনও অষ্টমী তিথিকে খুব একটা শুভ দিন বা শুভ তিথি হিসেবে ভাবা হয় না। শাস্ত্রমতে আমাদের বাংলায় পারলৌকিক এবং অন্য বিশেষ কিছু ক্রিয়াকর্ম ছাড়া অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ শুভ কর্ম অষ্টমী তিথিতে করা হয়না। যে ভাবে অন্যান্য তিথি মানুষের কাছে মর্যাদা পায়, সেই হিসেবে অষ্টমী তিথি ততটা পায় না। অষ্টমী তিথির গুরুত্ব পাওয়া নিয়ে নানারকম গল্প চালু আছে সারা দেশেই। তার মধ্যে পশ্চিম ভারতের একটা উপাখ্যান এই রকম।

এই ভাবে অবহেলিত হতে হচ্ছে দেখে অষ্টমী তিথির খুব অভিমান হল। তাই অষ্টমী তিথি সিদ্ধান্ত নিল, ভগবান বিষ্ণুর কাছে অভিযোগ জানাবেন। সেই মতো ভগবান বিষ্ণুর কাছে অষ্টমী তিথি অভিযোগ জানালেন। আর বললেন, মর্ত্যে সব তিথি যে ভাবে মর্যাদা এবং কৌলীন্য পায়, তিনিও সমান ভাবে তাই পেতে চান। তিনি আরও বললেন, তার নামে উৎসব যেন জমকালো উৎসবের আকারে হয়।

ভগবান বিষ্ণু জ্যোতিষপঞ্চাঙ্গ ঘেঁটে দেখলেন তিথি, ভারতবর্ষে সব তিথিতেই কমবেশি ভাল রকমের শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান হয় ও সেগুলিকে কেন্দ্র করে মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে। সেই হিসেবে অষ্টমীর প্রার্থনার নিশ্চয় একটা গুরুত্ব আছে। তখন বিষ্ণূ সিদ্ধান্ত নিলেন, এ বার এই অবহেলিত তিথিকে বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে মর্ত্যে তিনি নিজে অষ্টম বার অবতার হিসেবে জন্ম নেবেন। গোকূলে দেবকীর অষ্টম গর্ভে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টম দিনে বা অষ্টম তিথিতে। সেই জন্য এই তিথির আর এক নাম গোকূল অষ্টমী। সেই থেকে সারা ভারতবর্ষে ক্রমশ প্রতি বছর এই জন্মাষ্টমীর গুরুত্ব বেড়ে চলেছে। এখন আবার সারা বিশ্বে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণমার্গী সংগঠনের দৌলতে এই জন্মাষ্টমী ব্রত পালিত হচ্ছে। তিথি হিসেবে যদি পরিসংখ্যান নেওয়া নিলে দেখা যাবে, গুরুপূর্ণিমা তিথি সমগ্র ভারতবর্ষে উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে ব্যাপক হারে চালু। তারপরই জন্মাষ্টমী। এমনও হতে পারে জন্মাষ্টমী ও গুরুপূর্ণিমা দুটোই সমান হারে পালিত হয়।

জ্যোতিষ মতে অষ্টমী তিথি মানে ৮ সংখ্যা। নিউমারোলজিতে ৮ সংখ্যাকে যোগীর সংখ্যা বলে। ৮ আবার শনির সংখ্যা। কিরো ৮ সংখ্যাকে বাধাবহুল সংখ্যা বলেছেন। ৮ সংখ্যার সঙ্গে ভগবান বিষ্ণুর অষ্টবিভূতির কথা জড়িত আছে। শিবের আবার অষ্টসিদ্ধির কথা শাস্ত্রে উল্লেখ আছে। শাস্ত্রে গণেশের ৮ জন বউয়ের কথা বলা হয়েছে। কেউ কেউ ৮ জন বউ মানে অষ্টসিদ্ধির মনে করেন। দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ‘অষ্টমাত্রক’ দেবীর আরাধনার চল আছে। এই অষ্টমাত্রক মানে ৮ জন দেবতার শক্তি বোঝায়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৬৪ গোপিনী আছে। আর ৬৪= ৮ গুণিতক ৮।

খুব সম্ভবত ৮ সংখ্যার এই মিথকে ভাঙার জন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীবিষ্ণূর অষ্টম অবতার হিসেবে দেবকীর অষ্টম গর্ভে কৃষ্ণপক্ষের অষ্টম তিথিতে মর্তধামে জন্ম নিয়েছিলেন।

তামিলনাড়ুতে প্রতি মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিকে শুভ হিসেবে ধরা হয়। কৃষ্ণপক্ষের এই অষ্টমী তিথিকে তামিলনাড়ুতে ‘কালাষ্টম’ যা ‘কালাভৈরব’ বলে চিহ্নিত করা হয়। এই দিনের অধিপতি ভগবান শিব বা ভৈরব। তামিলনাড়ু এবং এ রাজ্য জানে ভৈরব কথার মানে শিবের জলন্ত ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ।

তাই এই অষ্টমী তিথিতে তামিলনাড়ুতে বিশেষ উদযাপনের মাধমে উপবাসে থেকে এই ভৈরবঅষ্টমী তিথিতে কালভৈরবের পূজার্চনা করা হয়ে থাকে যাতে সমস্ত অশুভকে এড়ানো যায়। বিভিন্ন অপশক্তির প্রভাব, নেগেটিভ প্রভাব, তুকতাক, মারণ, উচাটন-সহ সমস্ত প্রতিক্রিয়ামূলক শক্তিকে পরাস্ত করা যায় এর মাধ্যমে। এই শুভ দিনে যে সব শুভ কাজ আরম্ভ করা যায় যেমন, বাড়ি নির্মাণ, ভ্রমণের শুভ সূচনা, পড়াশোনার হাতেখড়ি, যে কোনও নতুন উদ্যোগ যেমন, কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, যৌথ সংস্থা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

Janmastami Rashi Janmashtami Special
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy