Advertisement
E-Paper

ন’বছর পরে মুম্বই ট্রেন-বিস্ফোরণে রায়

আট জনের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন সরকারি আইনজীবী রাজা ঠাকারে। বুধবার মুম্বইয়ের বিশেষ (মোকোকা) আদালতের বিচারক যতীন ডি শিন্ডে ৭/১১-য় দোষী সাব্যস্ত ১২ জনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দিলেন পাঁচ জনকে। বাকি সাত জনের যাবজ্জীবন।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:০৯
মুম্বই বিস্ফোরণে দোষী কামাল আনসারি। বুধবার। ছবি: এএফপি।

মুম্বই বিস্ফোরণে দোষী কামাল আনসারি। বুধবার। ছবি: এএফপি।

আট জনের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন সরকারি আইনজীবী রাজা ঠাকারে। বুধবার মুম্বইয়ের বিশেষ (মোকোকা) আদালতের বিচারক যতীন ডি শিন্ডে ৭/১১-য় দোষী সাব্যস্ত ১২ জনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দিলেন পাঁচ জনকে। বাকি সাত জনের যাবজ্জীবন।

ন’বছর আগে ২০০৬ সালের ১১ জুলাই সন্ধেবেলা মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৮৮ জন। সেই তালিকায় এ বছর জুড়েছে আরও একটি নাম। পরাগ সবন্ত— বিস্ফোরণে আহত হয়ে দীর্ঘ ন’ববছর কোমায় থাকার পরে গত ৭ জুলাই হার মানতে হয় তাঁকেও। তাই সব মিলিয়ে হতের সংখ্যা এখন ১৮৯। বাণিজ্য নগরীর লাইফলাইনকে সে দিন মাত্র দশ মিনিটে তছনছ করে দিয়েছিল জঙ্গিরা। ওইটুকু সময়ে পর পর সাত বার বিস্ফোরণে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি জখম হয়েছিলেন আটশোরও বেশি লোক।

এত বড় হত্যাকাণ্ডের পিছনে যারা, তাদের ‘মৃত্যুর কারবারি’ ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না— আদালতে এমন কড়া মন্তব্যই করেছিলেন সরকারি আইনজীবী রাজা ঠাকারে। মামলা চলাকালীন আট জনের ফাঁসির পক্ষে সওয়াল করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সমাজতত্ত্ববিদ থেকে সাধারণ মানুষ— প্রত্যেকের কিন্তু একটাই প্রশ্ন। সরকারের বোঝা বাড়িয়ে এবং সৎ করদাতা নাগরিকের অর্থ ব্যয় করে দোষীদের আরও ৪০-৫০ বছর জেলবন্দি রাখা হবে কেন?’’

বিচারক শিন্ডে যদিও এহতেশাম সিদ্দিকি, আসিফ খান, ফয়জল শেখ, নাভিদ খান, কামাল আনসারি নামে পাঁচ দোষীকে ট্রেনে বোমা রাখার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত তনভির আনসারি, জামির আহমেদ শেখ, সাজিদ আনসারি, মহম্মদ সফি, শেখ আলম শেখ, মুজ্জামিল শেখ এবং সোহেল শেখকে আমৃত্যু সাজা ভোগ করতে হবে এবং কোনও ক্ষেত্রেই তা ৬০ বছরের কম হবে না বলে জানিয়েছেন সরকারি কৌঁসুলি। বিস্ফোরণে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত এই ১২ জন জঙ্গির প্রত্যেকেই নিষিদ্ধ সংগঠন সিমি-র সদস্য।


সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

আজ রায় ঘোষণার পরে বিরোধী পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এটা বিচারের অপমৃত্যু। মোকোকা আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে বম্বে হাইকোর্টে যাবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বিরোধী প্রবীণ আইনজীবী যুগ চৌধুরির কথায়, ‘‘ছেলেগুলো নিরপরাধ। ওদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই।’’ গত ১১ সেপ্টেম্বর মোকোকা আদালতে ১২ জন অপরাধী দোষী সাব্যস্ত এবং এক জন বেকসুর খালাস হওয়ার পর পরই বিরোধী পক্ষের আইনজীবীরা নজিরবিহীন ভাবে ফের ন’জন সাক্ষীর বক্তব্য শোনার কথা বলেছিলেন। সেই বক্তব্য শোনার পরে ২১ সেপ্টেম্বর আইনজীবী যুগ চৌধুরি আদালতে জানান, পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন কী ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে দোষীদের। এক ভুল চিকিৎসক জোর করে তদানীন্তন অভিযুক্তদের নার্কো অ্যানালাইসিস টেস্ট করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার দু’দিন পরে চূড়ান্ত যুক্তি দেওয়ার সময়ে সরকারি আইনজীবী বিচারককে বলেন, অপরাধীদের কেউই এমন কোনও প্রমাণ পেশ করতে পারেনি যাতে তাদের সাজা লঘু করার কোনও পরিসর থাকে।

বিরোধী আইনজীবী যুগ চৌধুরি অবশ্য যুক্তি দেন, লস্কর জঙ্গি আজিম চিমাই এই ধারাবাহিক বিস্ফোরণের মূল চক্রী। এই মামলায় অভিযুক্ত চিমা-সহ বাকি ১৭ জন পাকিস্তানি জঙ্গি অবশ্য এখনও পলাতক। চৌধুরি জানান, দোষীরা শুধু চিমার নির্দেশ পালন করেছে। সরকারি আইনজীবীর পাল্টা যুক্তিতে এই সব তথ্য ধোপে টেকেনি। রাজা ঠাকারে দোষীদের মৃত্যুর কারবারি আখ্যা দিয়ে আট দোষীর মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন। বিচারক পাঁচ জনকে সেই সাজা দিয়েছেন।

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন) ধারা এবং মোকোকা ৩(১) (পরিকল্পিত অপরাধ) ধারায় পাঁচ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১১ জন দোষীর প্রত্যেককে ১১ লক্ষ টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। কেবল ফয়জল শেখকে জরিমানা দিতে হবে ১৫ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। বিচারক শিন্ডে যখন রায় শোনাচ্ছিলেন তখন দোষীদের চোখেমুখে শূন্য দৃষ্টি। পরে আদালতের বাইরে অনেকেই বলেছেন, ‘‘নিম্ন আদালতে এর বেশি কিছু হবে না, জানতাম। আমরা যে নিরপরাধ, সেটা আশা করি বম্বে হাইকোর্টে প্রমাণ হবে।’’

মুম্বই সন্ত্রাস দমন শাখা (এটিএস)-র প্রাক্তন প্রধান কে পি রঘুবংশী অবশ্য এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘‘আমাদের দলের ১৫ জন অফিসারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এটা সবার চেষ্টার ফল।’’ সন্ত্রাস সংক্রান্ত অন্তত ন’টি মামলায় সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে লড়েছেন যিনি, সেই উজ্জ্বল নিকম আজ রায় শুনে বলেছেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে লড়তে হয়েছে সরকারি আইনজীবীকে। অভিযুক্তদের অপরাধ সফল ভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন তিনি। সে দিক থেকেই ব্যতিক্রমী এই মামলা।’’

লোকাল ট্রেনে খার রোড-সান্তাক্রুজ, বান্দ্রা-খার রোড, যোগেশ্বরী-মাহিম জংশন, মীরা রোড-ভায়ান্দর, মাতুঙ্গা-মাহিম জংশন এবং বোরীভলীর স্টেশনে পর পর বিস্ফোরণ ঘটেছিল সেই অভিশপ্ত সন্ধেয়। ওয়েস্টার্ন লাইনের দাদার থেকে ভায়ান্দর স্টেশনের মধ্যে ছিন্ন হয়ে যায় রেল যোগাযোগ। ১১ জুলাই সন্ধেয় অফিস ফেরতা মানুষের ভিড়ে ঠাসা কোনও ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামরা উড়ে গিয়েছিল আরডিএক্সে। কোথাও বা রেললাইনের অংশ। কোথাও স্টেশনে হামলা।

দীর্ঘ ন’বছর আগের সেই তিক্ত স্মৃতি কোনও দিনই ভুলতে পারবে না মুম্বই। বার বার বিস্ফোরণের অভিঘাতের পরেও ফের উঠে দাঁড়ানো শহরটায় স্বজনহারাদের একটাই আর্জি, নিম্ন আদালতের এই রায় যেন উচ্চতর আদালতে গিয়ে বদলে না যায়।

Mumbai train blasts bombers train
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy