সুভাষ দেশমুখ
কালো টাকার কারবারিদের ধরতে জাল পেতেছিলেন নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলিরা। সেই জালে প্রথম যে রাঘববোয়াল ধরা পড়লেন ঘটনাচক্রে তিনি মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকারের সমবায় মন্ত্রী। অন্য দিকে নরেন্দ্র মোদী তাঁর ঘনিষ্ঠদের সুবিধে পাইয়ে দিতেই নোট বাতিল করেছেন বলে দাবি করেছেন তাঁরই প্রাক্তন সহযোগী যতীন ওঝা।
মহারাষ্ট্রের সমবায় মন্ত্রী সুভাষ দেশমুখের গাড়ি থেকে দিন দু’য়েক আগে ৯১ লক্ষ টাকা মূল্যের পাঁচশো–হাজার টাকার নোট উদ্ধার হওয়ায় বেজায় চটেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই ঘটনায় দলের মুখ পুড়ছে বুঝতে পেরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসকে দ্রুত তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গোটা বিষয়টিতে যে গণ্ডগোল রয়েছে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। কারণ প্রথমে ওই অর্থ লোকমঙ্গল সমবায় ব্যাঙ্কের কর্মীদের বেতনের টাকা বলে দাবি করেছিলেন দেশমুখ। কিন্তু পরে তিনি স্বীকার করে নেন গোটাটাই তাঁর ব্যক্তিগত অর্থ।
সুযোগ বুঝে মাঠে নেমে পড়েছে কংগ্রেস ও এনসিপি। বিরোধীদের ধারণা, বিষয়টি নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীকেও প্যাঁচে ফেলা যাবে। কংগ্রেস নেতা তথা মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের দাবি, ‘‘দেশমুখকে পদত্যাগ করতে বলা ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই ফডণবীসের কাছে।’’ আয়কর দফতরকে দিয়ে দেশমুখের গোটা সম্পত্তির তদন্তের দাবি তুলেছে শরদ পওয়ারের দল এনসিপি। দলের নেতা নবাব মালিক বলেন, ‘‘সরকারের কালো টাকা ধরার অভিযানকে এনসিপি স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু দেশমুখের মতো যাঁদের কাছ থেকে কালো টাকা পাওয়া যাচ্ছে তাঁদের যেন গ্রেফতার করা হয়।’’
মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে দেশমুখ সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। দলীয় সূত্রে খবর, তাই সব নিয়মকানুন মেনেই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে চাইছেন ফডণবীস। তবে দোষী প্রমাণিত হলে দেশমুখকে দল থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
বিরোধী দলগুলির আশঙ্কা, দেশমুখের ঘটনাকে চাপা দিতে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে আয়কর দফতরকে সক্রিয় হতে নির্দেশ দিতে পারে মোদী সরকার। বিশেষ ভাবে আশঙ্কায় ভুগছেন মুলায়ম সিংহ যাদব বা মায়াবতীর মতো নেতা-নেত্রীরা। তাঁদের বিরুদ্ধে আয়ের থেকে বেশি সম্পত্তি থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
মোদীর অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে এক খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন গুজরাতের প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক যতীন ওঝা। পেশায় আইনজীবী ওঝা এক সময়ে মোদীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তিনি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ‘রাজনৈতিক গুরু’ হিসেবেও পরিচিত। খোলা চিঠিতে ওঝার দাবি, নোট বাতিলের সুযোগে অমিত শাহের ঘনিষ্ঠরা কালো টাকার কারবারিদের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেছে। ৩৭ শতাংশ হারে ‘মজুরি’ নিয়ে তারা কালো টাকা সাদা করে দিচ্ছে। আবার মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিরা আগেভাগেই খবর পেয়ে কালো টাকা সোনায় বদলে ফেলেছেন। ওঝার দাবি, জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে নোট বাতিল করেননি মোদী। তিনি ঘনিষ্ঠদের লাভের কথাই ভেবেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy