Advertisement
E-Paper

আঙুলের ছাপ মেলেনি, রেশন বন্ধ, অনাহারে মৃত্যু

চলতি মাসের মাঝামাঝি সিমডেগা-তে মারা যায় ১১ বছরের মেয়ে সন্তোষ কুমারী। তার পরিবারের দাবি ছিল, দু’মুঠো ভাতের অভাবেই মৃত্যু।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:১৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রথমে আধার কার্ডের গেরো। এ বার আঙুলের ছাপ। আবারও রেশন না মেলার অভিযোগ। আবারও ‘অনাহারে’ মৃত্যু ঝাড়খণ্ডে।

দেওঘরের মনোহরপুরের গ্রামের বাসিন্দা রূপলাল মারান্ডি (৬০) সোমবার সন্ধ্যায় মারা গিয়েছেন। তাঁর মেয়ে মানদী মারান্ডির অভিযোগ, তিন দিন ধরে না খেতে পেয়েই তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে। দিনমজুরি করে দিন গুজরান করত পরিবারটি। কালীপুজো ও দেওয়ালির ছুটি থাকায় গত কয়েক দিন মজুরির কাজ জোটেনি। মানদীর অভিযোগ, ‘‘আঙুলের ছাপ না মেলায় আমাদের রেশন বন্ধ করে দেয় রেশন-মালিক। প্রায় দু’মাস রেশন পাইনি। গত কাল সন্ধ্যায় বাবা খিদের জ্বালায় অসুস্থ হয়ে নেতিয়ে পড়ে।’’

চলতি মাসের মাঝামাঝি সিমডেগা-তে মারা যায় ১১ বছরের মেয়ে সন্তোষ কুমারী। তার পরিবারের দাবি ছিল, দু’মুঠো ভাতের অভাবেই মৃত্যু। আধার কার্ডের সঙ্গে রেশন কার্ডের লিঙ্ক না মেলায় রেশন পাননি। গত শুক্রবার ধানবাদের রিকশাচালক বৈদ্যনাথ রবিদাসের (৪০) মৃত্যুর জন্যও অনাহারকেই দায়ী করেছে তার পরিবার। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ, আধার থাকা সত্ত্বেও মেলেনি রেশন কার্ড।

আরও পড়ুন: এসআই মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত হোক, দাবি গুরুঙ্গের

সুতরাং সব মিলিয়ে প্রশ্নের মুখে ঝাড়খণ্ডের গণবণ্টন ব্যবস্থাই। এমনিতেই রেশন কার্ড এবং আধার লিঙ্ক করার ব্যবস্থা নিয়ে অনেক দিন ধরেই সরব বিরোধীরা। ভারতের মতো দেশে এমন প্রযুক্তির গেরোয় অনেক মানুষই সরকারি পরিষেবা এবং গণবণ্টন ব্যবস্থার আওতা থেকে বঞ্চিত হবেন, এ আশঙ্কা প্রকাশ করেই আসছিলেন তাঁরা। বিজেপিশাসিত ঝাড়খণ্ডে পরপর অনাহারে মৃত্যুর অভিযোগ সেই আশঙ্কাকেই সত্যি করল বলে মনে করছেন অনেকে। সু্প্রিম কোর্টে আধার নিয়ে যে মামলা বিচারাধীন রয়েছে, সেখানেও উঠতে পারে এই প্রসঙ্গ।

রাজ্য প্রশাসন অবশ্য এখনও অবধি কোনও ঘটনাকেই অনাহারে মৃত্যু বলে স্বীকার করেনি। সন্তোষ কুমারীর মৃত্যু প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস এ দিনও বলেন, ‘‘যত দূর জানা গিয়েছে সিমডেগার বালিকার মৃত্যু হয়েছে ম্যালেরিয়ায়।’’ রূপলালের মৃত্যুর পরে দেওঘরের বিডিও অশোক কুমার আজ সকালে মানদীদেবীর বাড়িতে যান। পরে দাবি করেন, ‘‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন রূপলালের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ময়না তদন্তের প্রয়োজন নেই।’’

বিরোধীরা অবিযোগ করছেন, অস্বীকারের পথ নেওয়াটা প্রশাসনের তরফে চেনা কৌশল। অনেকে মনে করাচ্ছেন, বাম আমলে পশ্চিমবঙ্গের আমলাশোলে অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসার পরেও যে হইচই হয়েছিল, অস্বীকারের প্রবণতা দেখা গিয়েছিল সেখানেও।

কিন্তু ঝাড়খণ্ডের বেলায় বারবারই রেশন ব্যবস্থার গণ্ডগোলের দিকে আঙুল ওঠায় সেই বিষয়টি অন্তত খতিয়ে দেখার কথা বলছে প্রশাসন। খাদ্যমন্ত্রী সরযূ রাই বলেন, ‘‘সেপ্টেম্বর মাসেও আঙুলের ছাপ দিয়ে রেশন নিয়ে গিয়েছেন মানদী। কিন্তু এর পর কেন ছাপ মিলল না, তা তদন্ত করে দেখা হবে।’’ রেশন ডিলার ধর্মদেব চৌধুরি বলেন, ‘‘সেপ্টেম্বর মাসে যখন ওঁরা আসেন তখন আঙুলের ছাপ না মেলায় রেশন মেলেনি। যান্ত্রিক গোলযোগ হয়ে থাকতে পারে। আমরা ওই পরিবারকে ফের দু’দিন পরে আসতে বলি। কিন্তু ওঁরা আসেননি।’’

আপাতত স্বাভাবিক ভাবেই উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন কটাক্ষ করেছেন, ‘‘বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর রাজ্যের মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছেন।’’ জবাবে রঘুবর বলেন, বিরোধীরা ‘নোংরা রাজনীতি’ করছে।

Starvation Jharkhand ঝাড়খণ্ড
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy