সেই ঘটনার বিবৃতি দিচ্ছেন গওহর খান। মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই
খাটো পোশাক পরার শাস্তি বিরাশি সিক্কার থাপ্পড়। ‘রিয়েলিটি শো’-এর সঞ্চালিকা তথা অভিনেত্রী গওহর খানকে চড় কষানো ইস্তক এমনই যুক্তি দিয়ে আসছেন অকিল মালিক। পুলিশের কাছে তিনি জানিয়েছেন, “অভিনেত্রীরা খাটো পোশাক পরা কমালেই অপরাধ কমবে।” কারণ তাঁর বিশ্বাস, যুব-সম্প্রদায়ের মাথা ঘুরিয়ে দিচ্ছেন গওহরের মতো খোলামেলা পোশাক পরা অভিনেত্রীরা। শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বলিউড। তাঁদের দাবি, পোশাক নিয়ে কোনও নীতিপুলিশি মানা হবে না। কারও আবার প্রশ্ন, “তালিবানি রাজত্বে আছি নাকি?”
বাস্তবিক। গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে নিজের পছন্দের পোশাক পরার অধিকার সকলের রয়েছে। গওহরও তাঁর ব্যতিক্রম নন। কিন্তু পেশায় ‘জুনিয়র আর্টিস্ট’ অকিলের কানে সে সব যুক্তি ঢোকাবে কে? তাঁর সাফ স্বীকারোক্তি তিন দিন ধরে সকলের সামনে গওহরকে খোলামেলা জামা কাপড় পরতে দেখে তিনি নিজেই আকৃষ্ট হচ্ছিলেন। ঠিক যেমনটা প্রত্যেকটি যুবকের হয়ে থাকে। তাঁর নজরে এ ধরনের পোশাক যুব-সম্প্রদায়ের যৌন তাড়নাকে উস্কানি দেয়। তার জেরেই বাড়ে অপরাধ। তা ছাড়া গওহরের ধর্মও এ ধরনের পোশাক পরার অনুমতি দেয় না বলে মনে করেন অকিল। সব মিলিয়ে গওহরকে উচিত ‘শিক্ষা’ দিতেই সকলের সামনে তাঁকে সপাটে চড় কষিয়েছেন তিনি।
সামনে তখন আড়াই হাজার দর্শক। থাপ্পড় খেয়ে বিহ্বল গওহর, মারমুখী অকিল এমন ‘ফুটেজ’ বার বার দেখা গিয়েছে বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে। চাপে পড়ে সংশ্লিষ্ট চ্যানেলটি গওহরকে বলেছিল, চাইলে তিনি সঞ্চালনা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়েই চলে যেতে পারেন। তবে সাহসিনী গওহর রাজি হননি। অপমান সত্ত্বেও অনুষ্ঠানের শু্যটিং শেষ করেন।
তাঁর সাহসের পরিচয় অবশ্য আগেও মিলেছে। এক বার এক নামীদামি সংস্থার ফ্যাশন শোয়ের জন্য র্যাম্পে হাঁটতে গিয়ে দেহের গোপন অংশ অনাবৃত হয়ে গিয়েছিল। গওহর অবশ্য সেই অবস্থাতেই কোনও মতে লজ্জা নিবারণ করে হেঁটে গিয়েছিলেন। তার পর গত মরসুমের ‘বিগ বস’-এর কথা তো এখনও অনেকের মুখে মুখে ফেরে। কী ভাবে সেখানে এক সহ-প্রতিযোগী তথা ‘বিশেষ বন্ধু’র সঙ্গে ক্যামেরার সামনে ঘনিষ্ঠ হয়েছেন তিনি, কখনও বা সেই বন্ধুর হয়ে বিগ বসের সঞ্চালক সলমন খানের সামনে গলা ফাটিয়েছেন, কখনও আবার পুরস্কারমূল্যের কথা ভুলে স্রেফ মনের টানে বিগ বসের আস্তানা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। সবই তো সাহসিকতারই পরিচয়। অনেকে অবশ্য এ সবের পরে গওহরের নাম দিয়েছিলেন ‘ড্রামা কুইন।’
তবে তা বলে রবিবারের ঘটনাকে কেউ নাটক বলছেন না। বরং গওহরের পাশে দাঁড়াচ্ছেন প্রত্যেকে। যেমন অভিনেতা অর্জুন কপূর। ওই রিয়েলিটি শোয়ে হাজির থাকার সুবাদে ঘটনাটি নিজের চোখে দেখেছেন তিনি। তাঁর বয়ানে, “যা-ই বলি না কেন, কম মনে হবে। কোনও ভারতীয় পুরুষ যে এমন ভাবতে পারেন, কল্পনাও করতে পারছি না।” ফারহান আখতার আবার টুইটারে লিখেছেন, “বিবর্তনের নিয়মের কাছে বিনীত অনুরোধ, এ ধরনের গাধাদের নিশ্চিহ্ন করে দাও।” ক্ষোভ জানিয়েছেন মুম্বইয়ের টেলি-তারকারাও। তাঁদের দাবি, খাটো পোশাক কখনও নিগ্রহের ছাড়পত্র হতে পারে না।
গওহর নিজে অবশ্য বিহ্বলতার প্রাথমিক ঘোর কাটিয়ে উঠেছেন। তাঁর বয়ানে, “এর পরেও শান্তির আদর্শের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে আমার। কিন্তু ভাবছি, যদি অভিনেত্রীরাই এ ধরনের মানসিকতার শিকার হন, তা হলে আমজনতার কী হাল? বুঝতে পারছি, এ ধরনের নীতিপুলিশি যে সব মহিলাকে সহ্য করতে হয়, তাঁদের চাপ ঠিক কতটা?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy