Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Scientist

Constellations: নক্ষত্রপুঞ্জের বিবর্তন সন্ধানে নতুন দিশা

দলে আছেন এক বঙ্গসন্তানও। পুণের ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স-এর অধ্যাপক দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়।

ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২২ ০৫:৫৬
Share: Save:

নক্ষত্রপুঞ্জের কেন্দ্রে থাকে এক বিরাট ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। তার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা কণার স্রোতই (জেট) কী ভাবে সেই নক্ষত্রপুঞ্জের তারাদের জন্মের নিয়ন্ত্রণ করছে? মহাকাশের এই রহস্য সমাধানের দিশা দেখিয়েছেন এক দল বিজ্ঞানী। সেই দলে রয়েছেন এক বঙ্গসন্তানও, পুণের ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স (আইইউকা)-এর সহকারী অধ্যাপক দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়। তবে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন নেদারল্যান্ড প্রবাসী আর এক ভারতীয় বিজ্ঞানী সুমা মূর্তি।

ওই দলের গবেষণা দেখিয়েছে, ওই কণার স্রোত বা জেট কী ভাবে নক্ষত্রপুঞ্জের ভিতরে থাকা গ্যাসকে প্রভাবিত করে। মূলত ওই কণার স্রোত প্রবল তাপ ছড়িয়ে নক্ষত্রপুঞ্জের ভিতরে থাকা শীতল গ্যাসকে উত্তপ্ত করে এবং স্রোতে ঠেলে সরিয়ে দেয়। যেহেতু ওই শীতল গ্যাস (যার ভিতরে বিভিন্ন গ্যাসের অণু থাকে) থেকেই তারার উৎপত্তি হয় তাই সেই গ্যাস উত্তপ্ত হলে বা ছড়িয়ে গেলে তারার জন্ম নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। দীপাঞ্জন বলছেন, “এই গবেষণা প্রমাণ করেছে যে নক্ষত্রপুঞ্জের কেন্দ্রস্থল থেকে বেরিয়ে আসা এই স্রোত নিশ্চিত ভাবেই নক্ষত্রপুঞ্জের অন্তরের গ্যাসকে প্রভাবিত করে। তবে তার ফলে সেই গ্যাসের ভিতরে তারাদের সৃষ্টি বৃদ্ধি হয় নাকি ঘাটতি তা বুঝতে হলে আরও বিশদে গবেষণা প্রয়োজন।” এই গবেষণাটি নেচার অ্যাস্ট্রোনমি পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।

ব্রহ্মাণ্ডে বহু নক্ষত্রপুঞ্জ রয়েছে। সেগুলির মধ্যে রয়েছে বহু নক্ষত্র এবং অনেক সময় নক্ষত্রকে ঘিরে থাকে গ্রহদের জগত। আমাদের বাসস্থান পৃথিবী সৌরজগতের অংশ। এই সৌরজগত রয়েছে একটি নক্ষত্রপুঞ্জে। তবে দীপাঞ্জনদের গবেষণায় আহরিত তথ্য এসেছে আমাদের থেকে বহু দূরে থাকা অন্য একটি নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে (বিজ্ঞানীদের কাছে যার নাম বি২ ০২৫৮+৩৫)। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নক্ষত্রপুঞ্জ সৃষ্টির পর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। যাকে নক্ষত্রপুঞ্জের বিবর্তন বলা হয়। এই বিবর্তনের সঙ্গে তার ভিতরে থাকা তারাদের জন্ম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

আইইউকার অধিকর্তা তথা পদার্থবিজ্ঞানী সোমক রায়চৌধুরী বলছেন, নক্ষত্রপুঞ্জের সৃষ্টি এবং বিবর্তন বিজ্ঞানের এক রহস্যময় বিষয়। নক্ষত্রপুঞ্জের ভিতরে তারাদের উৎপত্তি কী ভাবে হয়েছে এবং সেই উৎপত্তি কী ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, সেটাও জানার প্রয়োজন। সেই রহস্যের সমাধানেই দীপাঞ্জনদের গবেষণা নতুন দিক তুলে ধরেছে। তিনি জানান, এই সংক্রান্ত গবেষণার সূচনা মোটামুটি কয়েক দশক আগে। সে দিক থেকে আলোচ্য গবেষণাটি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কী ভাবে ব্ল্যাক হোল থেকে কণার স্রোত বেরিয়ে আসছে এবং চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে নক্ষত্রপুঞ্জের ভিতরে থাকা গ্যাসকে প্রভাবিত করছে সেই সংক্রান্ত তথ্যকে দীপাঞ্জন কম্পিউটারে সিমুলেশনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই বিষয়টি গবেষণায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে বলে
তিনি জানিয়েছেন।

বিজ্ঞানের জগতে নবীন এই বঙ্গসন্তানের যাত্রাপথও কম আকর্ষক নয়। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকের পাঠ শেষ করে কানপুর আইআইটি। সেখানে স্নাতকের পাঠ চুকিয়ে পিএইচডি করেন আইইউকা থেকেই। তার
পরে পোস্ট-ডক্টরেট অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। পরবর্তী কালে ইটালির তোরিনো বিশ্ববিদ্যালয়েও পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো ছিলেন। ২০১৯ সালে আইইউকা-য় যোগ দেন দীপাঞ্জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Scientist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE