নিজেদের সামরিক ঘাঁটি পরস্পরের জন্য খুলে দেওয়ার পর এই প্রথন যৌথ মহড়া ভারত-আমেরিকার। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই মহড়া আয়োজিত হচ্ছে চিন সীমান্তের গা ঘেঁষে।
চিন সীমান্তের খুব কাছে এ বার যৌথ মহড়ায় ভারত ও আমেরিকার সেনাবাহিনী। ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে উত্তরাখণ্ডে চিন সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় ভারত ও মার্কিন বাহিনী শুরু করছে ‘যুদ্ধ অভ্যাস ২০১৬’। দু’সপ্তাহ ধরে এলএসি-র (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা চিন-ভারত সীমান্ত) কাছে ভারত-মার্কিন যৌথ বাহিনীর দৌড়ঝাঁপ এবং পুরোদস্তুর সামরিক কার্যকলাপ চলবে। জলসীমার পর চিনের স্থলসীমার গা ঘেঁষেও যে ভাবে ভারত ও আমেরিকার বাহিনী হাত মিলিয়ে কাজ করতে শুরু করছে, তা নিঃসন্দেহে চিন্তায় রাখবে বেজিংকে।
আমেরিকা ও ভারতের সেনাবাহিনীর এই যৌথ মহড়া বা ‘যুদ্ধ অভ্যাস’ ২০০৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে। প্রতি বছরই এই মহড়া হয়। কখনও ভারতে, কখনও আমেরিকায়। মার্কিন বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দিয়েছে ভারত। পাক সীমান্তের কাছেও মহড়া হয়েছে। কিন্তু চিন সীমান্তের কাছে কখনও যৌথ মহড়া দেয়নি ভারত-আমেরিকা। এ বারের ‘যুদ্ধ অভ্যাস’ চিন সীমান্তের কাছেই আয়োজিত হচ্ছে।
দক্ষিণ চিন সাগরের জলসীমা নিয়ে আমেরিকা সহ আন্তর্জাতিক মহলের এক বিরাট অংশের সঙ্গে চিনের বিবাদ চলছে। ভারতও সে বিবাদে চিনের বিপক্ষেই রয়েছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের রায় মেনে নিয়ে চিনের উচিত দক্ষিণ চিন সাগরের বিতর্কিত এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া, এমনই বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি। এতেই শেষ নয়। ভারতের সামরিক পরিকাঠামো বৃদ্ধি নিয়েও চিন-ভারত টানাপড়েন বেড়েছে। অরুণাচল এবং লাদাখের সীমান্তে যে ভাবে সামরিক পরিকাঠামো বাড়াচ্ছে নয়াদিল্লি, চিন তার বিরুদ্ধে একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এ ছাড়াও একাধিক আন্তর্জাতিক ইস্যুতে চিন-ভারতের পরস্পর বিরোধী অবস্থান গত এক বছরে বেশ প্রকট হয়েছে। বেড়েছে আমেরিকা-চিন দ্বৈরথও। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকাকে সঙ্গে নিয়ে চিন সীমান্তের কাছে ভারতের সামরিক মহড়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা বলছেন, চিনকে কঠোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে এই বার্তার মাধ্যমে। ভারত এবং আমেরিকা যৌথ ভাবেই সেই বার্তা দিতে চাইছে। দক্ষিণ চিন সাগর থেকে সেই বার্তা দেওয়া শুরু হয়েছে। আমেরিকা দক্ষিণ চিন সাগরে একাধিক বার যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। আন্তর্জাতিক জলসীমায় যাতায়াতের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে মাত্র তিন মাস আগে দক্ষিণ চিন সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিল ভারতও। আমেরিকা ভারতের সেই পদক্ষেপকে স্বাগত জানায়। এ বার স্থলসীমান্তেও যৌথ বার্তা দেওয়ার তোড়জোড় চিনকে। মাঝেমধ্যেই সীমান্ত লঙ্ঘন করে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বরাবর চিন যে আগ্রাসন দেখায়, তার বিরুদ্ধেও একটি কঠোর বার্তা হিসেবে উঠে আসতে চলেছে উত্তরাখণ্ডে আয়োজিত এই যৌথ মহড়া।
আরও পড়ুন: ঢাকার পাশে দাঁড়াতে বিশ্বকে আর্জি দিল্লির
উত্তরাখণ্ডের চৌবুটিয়ায় এই মহড়া আয়োজিত হচ্ছে। জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়ি অঞ্চলে চলবে দু’সপ্তাহ ব্যাপী এই মহড়া। ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে পরস্পরের সেনাঘাঁটি ব্যবহার করার যে চুক্তি হয়েছে, তার পর এই প্রথম বার হতে চলেছে ‘যুদ্ধ অভ্যাস’। সামরিক চুক্তিতে পরস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ হওয়ার পরই ভারত-আমেরিকা যে ভাবে চিন সীমান্তবর্তী এলাকাকেই বেছে নিয়েছে মহড়ার জন্য, তা চিনকে চাপে রাখবে। বলছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy