Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উধাও ডর্নিয়ের খুঁজে আনল যে ডুবুরি

এ-ও ডুবুরি! এক জোড়া চোখ নিয়ে সাগরের তলায় খুঁজে বেড়াচ্ছে লক্ষ্যবস্তুকে। চোখে পড়তেই বাড়িয়ে দিল হাত। নিপুণ কায়দায় সেই সব জিনিস তুলে আনল ‘ঝোলায়’। তার পর উঠে এল সাগরের জলে ভাসতে থাকা জাহাজে।

উদ্ধার হওয়া সামগ্রী।

উদ্ধার হওয়া সামগ্রী।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৫ ১৭:০৫
Share: Save:

এ-ও ডুবুরি! এক জোড়া চোখ নিয়ে সাগরের তলায় খুঁজে বেড়াচ্ছে লক্ষ্যবস্তুকে। চোখে পড়তেই বাড়িয়ে দিল হাত। নিপুণ কায়দায় সেই সব জিনিস তুলে আনল ‘ঝোলায়’। তার পর উঠে এল সাগরের জলে ভাসতে থাকা জাহাজে।

তবে এ ডুবুরি ঠিক রক্তমাংসের মানুষ নয়। বরং আদ্যোপান্ত একটি যন্ত্র। পোশাকি ভাষায়, যার নাম ‘রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকল’। উড়তে উড়তে উধাও হয়ে যাওয়া একটি ডর্নিয়ের বিমান এবং তার পাইলট, কো-পাইলট, নেভিগেটরকে খুঁজতে এমনই একটি যন্ত্রকে নিয়ে এসেছিল ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী। সাগরের প্রায় ৯৯৬ মিটার গভীর থেকে বিমানের ধ্বংসাবশেষ এবং অফিসারদের দেহাবশেষ তুলে আনার পর উদ্ধারকাজের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তাতেই ফুটে উঠেছে এই যন্ত্র-ডুবুরির কাজকর্ম।

কী রয়েছে সেই ভিডিও-য়?

অতল গভীরে একটি আলোর রেখা ছুটে চলেছে। তাতেই যন্ত্র-ডুবুরির চোখে উঠে আসছে সাগরের তলার দৃশ্য। খুঁজতে খুঁজতে ক্রমশই এগিয়ে চলেছে সে। এক সময় চোখে পড়ল ডাঁই করা ধ্বংসাবশেষ। সেখানে গিয়ে খুঁজতেই বোঝা গেল, একটি বিমানের ভাঙা অংশ। আশপাশে পড়ে রয়েছে আরও যন্ত্রপাতি টুকরো। এ বার সেই জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল যন্ত্র-ডুবুরি। তার পর লোহার হাত (দেখতে অনেকটাই সাঁড়াশির মতো) বের করে সেই সব ধ্বংসাবশেষ অর্থাৎ ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার, ককপিট ভয়েস রেকর্ডার ইত্যাদি তুলে আনল সে। উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, এর পরেই দৃশ্যটা দিন তিনেক পরের। সন্ধানী চোখে ধরা পড়েছিল কতগুলো মানুষের হাড়ের টুকরো। সেগুলিও তুলে এনে ঝোলায় পড়েছে সে।


উদ্ধার হওয়া ঘড়ি

গত ৮ জুন চেন্নাই উপকূলে উড়তে উড়তে উধাও হয়ে গিয়েছিল উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি বিমান। সেই ঘটনার পর উপকূলরক্ষী বাহিনী ও নৌসেনার জাহাজ, ডুবোজাহাজ, বিমান তল্লাশিতে নামলেও কোনও সূত্র খুঁজে পায়নি। তার পর রিল্যায়েন্স সংস্থা এই যন্ত্রবিশিষ্ট অলিম্পিক ক্যানিয়ন নামে একটি ছোট মাপের জাহাজ উপকূলরক্ষী বাহিনীকে দেয়। বাহিনীর এক কর্তা বলছেন, সাধারণত জলের তলায় সংস্থার পাইপলাইনে নজরদারি এবং রক্ষণাবেক্ষণে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে ওই সংস্থা। সাগরের তলায় ডর্নিয়েরের ধ্বংসাবশেষ এবং অফিসারদের দেহ সন্ধানে তাই ওই যন্ত্র-ডুবুরির উপরেই ভরসা করা হয়েছিল। ‘‘বাহিনীর ভরসার মর্যাদা অবশ্য দিয়েছে ক্যানিয়ন। যন্ত্র-ডুবুরি যে কাজ করেছে, তা মানুষ ডুবুরি দিয়ে হত না’’ বলছেন ওই উপকূলরক্ষী-কর্তা।

কী ভাবে কাজ করেছে এই যন্ত্র?


ক্যামেরায় ধরা পড়েছে ধ্বংসাবশেষ

উপকূলরক্ষী বাহিনী সূত্রের খবর, বঙ্গোপসাগরের যে এলাকায় বিমানটিকে শেষ বারের জন্য রেডারে দেখা গিয়েছিল, সেই এলাকায় জাহাজটিকে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর জাহাজ থেকে জলে নামানো হয় ওই যন্ত্র-ডুবুরিকে। জলের তলায় ডুবুরির চোখ অর্থাৎ ক্যামেরায় যে দৃশ্য ধরা পড়েছে, তা চলে এসেছে জাহাজে থাকা কন্ট্রোল রুমে। সেখানে বসে থাকা ইঞ্জিনিয়ারেরা সেই দৃশ্য দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করেছেন। অর্থাৎ কোথায় দাঁড়াবে, কী ভাবে তার সাঁড়াশি হাত দিয়ে ধ্বংসাবশেষ তুলে আনবে, সেই নির্দেশ গিয়েছে যন্ত্র-ডুবুরির কাছে। ক্যামেরায় তার কাজ শেষ হওয়ার পরে তাকে জলের তলা থেকে তুলেও এনেছেন ইঞ্জিনিয়ারেরা।

ছবি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সৌজন্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE