করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনার দৃশ্য। —নিজস্ব চিত্র।
চোখ বন্ধ করলেই যেন ভেসে উঠছে মুহূর্তগুলি। এখনও! অনেক চেষ্টা করেও মন থেকে মুছে ফেলতে পারছি না রাতটাকে। হ্যাঁ, সেই রাতটা, যে রাতে আমাদের বাড়ির সামনেই থরে থরে স্তূপ করে রাখা হচ্ছিল রক্তাক্ত মৃতদেহগুলি। সারা রাত ধরে চলেছিল সেই কাজ। তার পর একটা সময় একের পর এক গাড়িতে মৃতদেহ বোঝাই করে নিয়ে গেল কিছু লোক। গোটা রাত ধরে প্রতি মুহূর্তে অ্যাম্বুল্যান্সের আসা-যাওয়া আর জখম রোগীদের গোঙানির শব্দ। আমার স্বামী গ্রামের লোকজনের সঙ্গে উদ্ধার কাজে ব্যস্ত। বাড়িতে কিছুতেই একা থাকতে পারছিলাম না। গা ছমছম করছিল! বিশ্বাস করুন, কী ভাবে যে রাতটা কেটে ভোর হয়ে গেল, বুঝতে পারিনি! ঘটনার পর দু’দিন কাটলেও, এখনও খাবার মুখে তুলতে পারছি না। ঘুম তো দূরের কথা।
সে দিন তখন সবে বাড়িতে সন্ধে দিচ্ছি। হঠাৎ লরির চাকা ফাটার মতো একটা আওয়াজ পেলাম। খুব জোরে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিটাও কেঁপে উঠল। প্রথমে ভেবেছিলাম, যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। দেখলাম, আমাদের গ্রামের বহু মানুষ রেললাইনের দিকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছেন। আমিও ছুট লাগালাম। রেলগেটের আলোটা তখনও জ্বলছিল। বাহানাগা বাজার স্টেশনের দিকে তাকাতে দেখলাম, সে দিকে গাঢ় অন্ধকার। আর সেই অন্ধকার থেকে ভেসে আসছে আর্তনাদ। অন্ধকারে চোখটা একটু ধাতস্থ হতেই দেখলাম, অনেকগুলি ট্রেনেরকামরা কেমন যেন একে অপরেরউপর উঠে সাপের মতো জড়িয়ে গিয়েছে। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে বহু কামরা। আমি ওই বীভৎসতা দেখতে পারিনি। তাই বাড়ি ফিরে গিয়েছিলাম।
আমাদের বাহানাগা গ্রামের নাম বাইরে আর কত জন জানত! বালেশ্বর থেকে কিছু দূরে, একটি অনামী জনপদ। রোজ কত না ট্রেন এই লাইন দিয়ে ছুটে যায়। বেশিরভাগই দাঁড়ায় না স্টেশনটায়। এখন এই ট্রেন দুর্ঘটনার ফলে সবাই বাহানাগার নাম জেনে গেল।
কিন্তু এই ভাবে তো আমরা পরিচিত হতে চাইনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy