E-Paper

কামাখ্যায় বলিই দেওয়া হয়েছিল হুগলির মহিলাকে! চার বছর পর তদন্ত শেষে জানাল পুলিশ

অসমের কামাখ্যা মন্দিরের ফাঁড়িতে ২০১৯ সালের ১৯ জুন সন্ধ্যায় খবর এসেছিল, জয় দুর্গা মন্দিরে নামার রাস্তায় এক মহিলার মুণ্ডহীন দেহ পড়ে আছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:০৭
Kamakhya Temple.

অসমের কামাখ্যা মন্দির। ফাইল চিত্র।

চার বছর আগে অসমের কামাখ্যায় নরবলি দেওয়া হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের এক মহিলাকে। গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দিগন্ত বরা জানিয়েছেন, নিহতের নাম শান্তি সাউ (৬৪)। বাড়ি হুগলি জেলার তাঁতিপাড়ায়। পুলিশ এই ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনায় জড়িত বাকিদের খোঁজ চলছে।

অসমের কামাখ্যা মন্দিরের ফাঁড়িতে ২০১৯ সালের ১৯ জুন সন্ধ্যায় খবর এসেছিল, জয় দুর্গা মন্দিরে নামার রাস্তায় এক মহিলার মুণ্ডহীন দেহ পড়ে আছে। পাশে রয়েছে পুজোর সামগ্রী। প্রথম থেকেই পুলিশ সন্দেহ করছিল, নরবলি দেওয়া হয়েছে ওই মহিলাকে। দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়লেও মহিলার পরিচয় কিছুতেই জানতে পারছিল না পুলিশ। হত্যাকারীদেরও ধরা যাচ্ছিল না। এত দিনে সেই হত্যারহস্যে যবনিকা পড়ল। পুলিশ জানিয়েছে, অম্বুবাচীর সময়ে কামাখ্যায় নরবলি দিলে বিশেষ ক্ষমতা মিলবে, এমন অন্ধবিশ্বাসের বশবর্তী হয়েই মথুরার এক ব্যক্তি ও এক সাধু মিলে ছক কষে হত্যা করে শান্তিকে।

পুলিশ কমিশনার জানান, এক সাধু ও অন্য দুই মহিলার সঙ্গে কামাখ্যায় অম্বুবাচী মেলা দেখতে এসেছিলেন শান্তি। তাঁদের সঙ্গে আলাপ হয় মথুরার প্রদীপ পাঠকের। শান্তিদের প্রদীপ বলেছিল, তার ভাই নাগা সাধু হয়ে গিয়েছিলেন ও ১১ বছর আগে ১৮ জুন মারা যান। ভাইয়ের ‘স্মৃতিতে’ ১৮ জুন ভূতনাথ শ্মশানের মন্দিরে কপালি, কাল ভৈরব ও শান্তিপুজোর আয়োজন করে প্রদীপ। শান্তি-সহ ১২ জন সেই পুজোয় হাজির ছিলেন। প্রদীপ সকলকে ১০ হাজার করে টাকাও দেয়। শান্তি জানতেন না, আসলে তাঁকে বলি দেওয়ার গোপন পরিকল্পনা চালাচ্ছিল প্রদীপ। সেই মতো দা কিনেও রাখা হয়েছিল। সেই রাতে কপালি পুজোর পরে সকলে মদ্যপান করেছিলেন। শান্তিকে জোর করে আকণ্ঠ মদ খাওয়ানো হয়। শ্মশানে পুজো দিয়ে সবাই রওনা হন কামাখ্যার উদ্দেশে। সেখানে জয় দুর্গা মন্দিরে ফের পুজো দেওয়া হয়। আবার চলে মদ্যপান। এর পরে শান্তিকে সাদা শাড়ি পরিয়ে আগে থেকে কেনা কম্বলে শোয়ানো হয়। কয়েক জন তাঁর হাত-পা চেপে ধরে, এক জন মুণ্ডচ্ছেদ করে। দেহ সেখানেই কম্বলে মুড়ে রেখে কাটা মাথাটি নিয়ে ব্রহ্মপুত্রে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

শান্তির ছেলে সুরেশ পরে মায়ের সন্ধানে কামাখ্যায় এলে নিহতের পরিচয় জানা যায়। পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল একটি সূত্রে খবর পেয়ে কোচবিহারে জনৈক কৈলাশ বর্মনের বাড়িতে হানা দেয়। উদ্ধার হয় শান্তির মোবাইল, আধার কার্ড ইত্যাদি। জানা যায়, মাতাপ্রসাদ পাণ্ডে নামে এক সাধু সেগুলি রেখে গিয়েছিল। অসম পুলিশ দীর্ঘ অভিযানের পরে এ বছরের ২৫ মার্চ জবলপুরে মাতাপ্রসাদকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করেই ১ এপ্রিল মথুরার বাড়ি থেকে ধরা হয় প্রদীপ পাঠককে। মনে করা হচ্ছে, মূলত এই দু’জনই গোটা ঘটনার চক্রী।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Human sacrifice Assam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy