Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রত্যাশাহীন প্রেম হারিয়ে যেতে দেননি সানি

সানির প্রেমিকা আরতি ২০০৬ সালে এক দুর্ঘটনার পর কোমায় চলে যান। মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলেছিল তাঁর। তার পর চার বছর আরতি বেঁচে থাকলেও ছিলেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত।

দু’জনে: আরতির সঙ্গে সানি। নিজস্ব চিত্র

দু’জনে: আরতির সঙ্গে সানি। নিজস্ব চিত্র

সুজিষ্ণু মাহাতো
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:১৪
Share: Save:

প্রত্যাশা, কামনা নেই। আছে শুধু সমর্পণ। কোনও চাহিদা ছাড়াই। এমনই ব্যতিক্রমী সম্পর্ক ছিল মুম্বইয়ের সানি পওয়ার ও আরতি মকওয়ানার।

সানির প্রেমিকা আরতি ২০০৬ সালে এক দুর্ঘটনার পর কোমায় চলে যান। মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলেছিল তাঁর। তার পর চার বছর আরতি বেঁচে থাকলেও ছিলেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তিনি সানি, এমনকি, নিজের মাকেও চিনতে পারতেন না। এই চার বছর টানা আরতির পাশে ছিলেন সানি। ছেড়ে দিয়েছিলেন নিজের সব কাজ, প়ড়াশোনাও। আরতি বুঝতেন না। সানি কিন্তু কথা বলে যেতেন। অবিরাম।

এই লড়াই সফল হয়নি। ২০১০ সালে মারা যান আরতি। তবে সানির এই ‘প্লেটোনিক’ প্রেমকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন তাঁর দিদি, মরাঠী পরিচালক সারিকা নেনে। এই ঘটনা অবলম্বনেই তৈরি তাঁর ‘আরতি’। সদ্যমুক্তিপ্রাপ্ত ‘অক্টোবর’ ছবিতে পরিচালক সুজিত সরকারও পর্দায় বুনেছেন ‘প্লেটোনিক’ ভালবাসার এক সম্পর্ক। ‘আরতি’র সঙ্গে ছবিটির মিল রয়েছে বলে দাবি করেছেন সারিকা। বেধেছে বিতর্ক।

তবে বিতর্কে না গিয়ে ‘অক্টোবর’ দেখে অনেকেই বলছেন, এখনকার দেনাপাওনা-সর্বস্ব সমাজে এমন প্রত্যাশাহীন সম্পর্ক বিরল। কারও ভালবাসার জোর যে এতটা হতে পারে, সেটাই অবিশ্বাস্য! সানি নিজে অবশ্য বলছেন, যে কেউই এমন লড়াইয়ের শক্তি পেতে পারেন। পরিস্থিতিই সেই শক্তি তৈরি করে। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের অবস্থায় দু’টো জিনিস হয়। ভাগ লো অউর ভাগ লো। ভাগ লো, মানে যোগ দাও। পরিস্থিতির মোকাবিলা করো। অথবা ভেগে যাও। পরিস্থিতির মোকাবিলা করলে ভিতর থেকেই শক্তি আসে।’’

ফোনে সানি বারবারই বলেন, তিনি ব্যতিক্রমী কিছু করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘সবার মধ্যেই অন্য মানুষ আছে। অন্য শক্তি আছে। পরিস্থিতি অনুসারে কোনও সম্পর্ক তা বার করে নেয়।’’ তবে শুধুমাত্র একটা নাম দিয়ে যে এমন সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করা যায় না, তা মানছেন সানি। তিনি বলছেন, ‘‘দুর্ঘটনার আগে যে আরতিকে আমি চিনতাম, দুর্ঘটনার পরে তাকেই যেন অন্য ভাবে আবিষ্কার করি। সে তখন আমার সন্তান। যে কিছু বলতে, বুঝতে পারে না। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করছি তাকে আমার কথা বোঝাতে।’’

প্লেটোনিক ভালবাসার এমন উদাহরণ রয়েছে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘মানবজমিন’ উপন্যাসে। সেখানে দীপনাথ ও মণিদীপার পরস্পরনির্ভর, ভালবাসার সম্পর্ক প্রথাগত পরিণতি পায়নি। শীর্ষেন্দুবাবু বলছেন, ‘‘মনের গভীরতা থেকেই এমন ভালবাসা আসে। যাঁদের সেই গভীরতা নেই, তাঁরা বুঝতেই পারবেন না যে ভালবাসা দিয়ে তৃপ্ত হওয়া যায়, নিয়ে নয়। মনের গভীরতা থাকলে তবেই এমন ভালবাসাকে অনুভব করা সম্ভব।’’ শীর্ষেন্দুবাবু মনে করিয়ে দেন সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কথা। জানা যায়, যিনি এক নারীকে ভালবেসেছিলেন দূর থেকে। সেই নারীকে তিনি কাছে পাননি। কিন্তু ভালবাসা রয়ে গিয়েছে। মনে করিয়ে দিয়েছেন আর কে নারায়ণনের কথা। বিয়ের মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে স্ত্রীকে হারিয়েও স্ত্রী-র স্মৃতি তিনি বহন করেছেন সারাজীবন।

তবে এখনকার ‘অগভীর’ সময়েও এমন উদাহরণ বিরল নয়, বলছেন শীর্ষেন্দুবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘পৃথিবী থেকে যে সব ভাল জিনিস বিদায় নিয়েছে, তা নয়। এখনও এমন ভালবাসা আছে। অনেকের মধ্যেই রয়েছে। এ জন্যই পৃথিবীটা এখনও সুন্দর বলে মনে হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Love Story Sarika Mene Marathi Film Aarti
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE