E-Paper

বিজেপির ‘ই-টু’ নীতি, অভিযোগে সরব অভিষেক

সোমবার থেকে সংসদে বাদল অধিবেশন শুরু হবে। তার আগে রবিবার লোকসভার স্পিকারের ডাকে সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধীরা জানাবেন, তাঁরা কোন কোন বিষয়ে আলোচনা চাইছেন।

প্রেমাংশু চৌধুরী, রবিশঙ্কর দত্ত

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ০৬:৩০
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

এক দিকে ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী নেতাদের দমন করার চেষ্টা হচ্ছে। অন্য দিকে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ভোটার তালিকা পরিমার্জনের নামে ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে বলে আজ ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হয়েছেন বলে সূত্রের খবর। বিরোধীদের জন্য ইডি আর ভোটারের জন্য ইসি-কে কাজে লাগানোকে ‘ই-টু’ নীতি বলে আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

সংসদের বাদল অধিবেশনে বিরোধীদের তূণে এই দুই তির থাকা উচিত বলে জানিয়ে অভিষেক জানিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষীদের যে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে, তৃণমূল কংগ্রেস সংসদে তাকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখছে।

সোমবার থেকে সংসদে বাদল অধিবেশন শুরু হবে। তার আগে রবিবার লোকসভার স্পিকারের ডাকে সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধীরা জানাবেন, তাঁরা কোন কোন বিষয়ে আলোচনা চাইছেন। এ নিয়ে বিরোধীদের সম্মিলিত রণনীতি তৈরি করতেই শনিবার ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক ডাকা হয়েছিল। যাতে দলের শীর্ষনেতারা হাজির থাকতে পারেন, সে জন্যই ভার্চুয়াল বৈঠক ডাকা হয়। ফলে সনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধীর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তেজস্বী যাদব, উদ্ধব ঠাকরে, ওমর আবদুল্লা-সহ ২৪টি বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা হাজির ছিলেন। মোট আটটি বিষয় ঠিক হয়েছে, যা নিয়ে বিরোধীরা একজোট হয়ে সরব হবেন।

বিরোধীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা, জড়িত সন্ত্রাসবাদীদের ধরতে না পারা নিয়ে সরকারের জবাবদিহি চাওয়া হবে। অপারেশন সিঁদুর, তা নিয়ে যে সব প্রশ্ন উঠেছে, সংঘর্ষবিরতি, আমেরিকার মধ্যস্থতায় সংঘর্ষবিরতি হয়েছে বলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি— এই সব নিয়েও সরকারের জবাবদিহি চাওয়া হবে। এ নিয়ে আলোচনায় খোদ প্রধানমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে বলে বিরোধীরা দাবি তুলবেন। প্রশ্ন তোলা হবে, কেন ট্রাম্প বারবার সংঘর্ষবিরতি করিয়েছেন বলে দাবি করার পরেও প্রধানমন্ত্রী নীরব? জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী, এনসি নেতা ওমর আবদুল্লা বলেন, ‘নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে মোদী সরকার জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যের তকমা কেড়ে নিয়েছিল। এখন কেন্দ্রই কাশ্মীরে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।’ সে ক্ষেত্রে জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের তকমা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলা হোক সংসদে। অভিষেক বলেন, ‘পহেলগাম গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপালও মেনে নেওয়ার পরে কোন বাধ্যবাধকতায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের মেয়াদ বাড়ানো হল?’

বিরোধীদের দাবির তালিকায় এর পরেই থাকছে বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন। বিহারের পরে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে এই ভোটার তালিকায় বিশেষ পরিমার্জন হবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। বৈঠকের পরে কংগ্রেসের রাজ্যসভার উপদলনেতা প্রমোদ তিওয়ারি বলেন, ‘রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি নিজের লোকদের ভোটার তালিকায় ঢুকিয়ে বিরোধীদের ভোটারদের বাদ দিতে চাইছে।’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে বলেন, ‘বিজেপি ও কমিশন পিছনের দরজা দিয়ে এনআরসি চালু করতে চাইছে। মহারাষ্ট্রে ভোটের চার মাস পরে বিজেপি ৪০ লক্ষ ভোটার যোগ করে জিতেছে। একই কাজ বিহার ও বাংলায় করতে চাইছে। তৃণমূল সেটা ধরে ফেলেছে।’

গত দু’দিনে ইডি-র রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে চার্জশিট এবং ভূপেশ বঘেলের ছেলেকে গ্রেফতারের পরে রাহুল-প্রিয়ঙ্কাও ইডি-র অপব্যবহার নিয়ে সরব হয়েছেন। অভিষেক আজ বৈঠকে ইডি-র অপব্যবহারের কথা বলেছেন। অভিযোগ তুলেছেন, সন্ত্রাসদমনের বদলে বিরোধী দলকে হেনস্থা করতে ফোনে আড়ি পাতার ‘পেগাসাস’ ব্যবহার করা হচ্ছে। রাহুল ও তাঁর ফোনে ‘পেগাসাস’ দিয়ে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছিল। এর সঙ্গে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক, বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি বলে হেনস্থা নিয়ে তৃণমূলের ক্ষোভ জানিয়ে দেন তিনি। দিল্লির জয় হিন্দ কলোনি-সহ বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থার উদাহরণ তুলে ধরেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক জি দেবরাজনও জয় হিন্দ কলোনির বাংলাভাষীদের হেনস্থা নিয়ে সরব হন। এই কলোনির নামকরণেও ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতাদের ভূমিকা ছিল। দেবরাজন বলেন, গত ৯ জুলাই শ্রমিক সংগঠনগুলি শ্রম বিধির বিরুদ্ধে যে ধর্মঘট করেছে, সেই বার্তা সংসদে পৌঁছে দেওয়া দরকার।

বিরোধীরা বিদেশ নীতি নিয়েও আলোচনা চাইবে বলে ঠিক হয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, ভারতের বিদেশনীতি এখন আমেরিকা নির্ধারণ করছে। ইজ়রায়েল প্রভাব খাটাচ্ছে। তাই বিদেশ নীতি নিয়ে বিরোধীরা আলোচনা চাইবেন। সেখানে গাজ়ায় প্রাণহানির প্রসঙ্গ তোলা হবে। অপারেশন সিঁদুরের পরে বিদেশে পাঠানো সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন অভিষেক। বৈঠকে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘এতে কী লাভ হয়েছে? কতগুলি দেশ আমাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে? দেশবাসীর কাছে পহেলগামের তথ্য তুলে ধরার বদলে প্রধানমন্ত্রী অন্য দেশে ঘুরেছেন।’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Abhishek Banerjee BJP TMC INDIA Alliance

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy