Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Abhishek Banerjee

Abhishek Banerjee: কংগ্রেস নিয়ে অভিষেকের তির্যক মন্তব্য কি কেড়ে নিল বিরোধী ঐক্যের পালের হাওয়া

সম্প্রতি বিরোধীদের মধ্যে চর্চা আরও বেড়েছে, শুধু ভবানীপুরের বিধানসভা উপনির্বাচনের দিনক্ষণ আলাদা করে ঘোষণা হওয়ায়।

ইডি-র দফতর থেকে বেরোনোর পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

ইডি-র দফতর থেকে বেরোনোর পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:০৬
Share: Save:

কংগ্রেস সম্পর্কে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা তির্যক মন্তব্য কি বিরোধী ঐক্যের হাওয়া কিছুটা কেড়ে নিল? আজ এই চর্চা চলেছে রাজধানীর অলিন্দে। কারণ, গতকাল অভিষেকের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সংস্থার চাপে ঘরে বসে গিয়েছে কংগ্রেস।

বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন, অভিষেক কংগ্রেসকে আলাদা করে আক্রমণ শানালেন কেন? গত বছরের গোড়ায় দিল্লি বিধানসভায় জিতে আসার পর থেকে মোদী তথা বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব সম্পর্কে নমনীয় অবস্থান নিয়ে চলতে দেখা যাচ্ছে অরবিন্দ কেজরীবালকে। একই ভাবে মায়াবতীর বিএসপি-ও কার্যত বিজেপি-র হয়ে বকলমে কাজ করছে বলেই অভিযোগ। কিন্তু তাদের নামোল্লেখ না করে অভিষেক এমন একটি দলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন, যাদের ছাড়া বিরোধী জোটের বাস্তবতাই থাকে না। এবং যে দলের নেতা মোদী এবং বিজেপির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে সরব। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী গতকালই পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম শীর্ষ নেতা পি চিদম্বরমকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কি সে জন্য বসে গিয়েছেন?

এর আগে রাহুল গাঁধীর ক্ষেত্রে তৃণমূলের ‘অ্যালার্জি’র কারণ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা যথেষ্টই হয়েছে। সংসদের বাদল অধিবেশনে বারবার দেখা গিয়েছে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর ডাকে তৃণমূল কংগ্রেসকে সাড়া না দিতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত মাসে ১০, জনপথে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক করলেও (যদিও সেখানে রাহুল উপস্থিত ছিলেন), রাহুলের ডাকা বিরোধী বৈঠকে পাঠানো হয়েছে মাঝারি সারির বা নতুন সাংসদকে। তখনও বিরোধীদের একাংশ বলেছিলেন যে এই ভাবে বিরোধী ঐক্যে কি জল ঢালা হচ্ছে না? যদিও এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সুখেন্দুশেখর রায়রা যে বার্তা দিয়েছেন তা হল, দেশে বিজেপি-বিরোধী সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মুখ মমতারই। কংগ্রেস আগে আলোচনা না করে ডাকলেই যে যেতে হবে, বিষয়টা এমন নয়।

সম্প্রতি বিরোধীদের মধ্যে চর্চা আরও বেড়েছে, শুধু ভবানীপুরের বিধানসভা উপনির্বাচনের দিনক্ষণ আলাদা করে ঘোষণা হওয়ায়। রাজ্যে কংগ্রেস এবং বামদলগুলি প্রশ্ন তুলেছিল, কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে কি কোনও ‘বোঝাপড়া’ হয়েছে। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য নীলোৎপল বসু বলেন, “যাহা বিজেপি, তাহাই তৃণমূল নয়। তেমনই এটাও ঠিক যে ২০১১-র পর থেকে বিজেপি-র বাংলায় উত্তরোত্তর ভোট এবং আসনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার পিছনে তৃণমূলের রাজনীতিও বড় কারণ।” ভবানীপুরের ভোট নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “যেখানে পশ্চিমবঙ্গে গণপরিবহণ চলছে না, সেখানে নির্বাচন কমিশন রাজ্য প্রশাসনের কথা শুনে বিশেষ একটি কেন্দ্রে ভোট ঘোষণা করে দিল। আবার বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য প্রশাসনের কথা না শুনে এই কমিশনই ৮ দফায় ভোট করিয়েছিল। এমন কিছু হওয়া উচিত নয় যাতে কমিশনের দ্বিচারিতা প্রকাশ পায়।”

এ দিকে, গতকাল বিজেপি-কে আক্রমণ করার সময় এক বারও নরেন্দ্র মোদীর নাম করেননি অভিষেক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল ইদানীং শাহকেই আক্রমণ করছে বিভিন্ন বিষয়ে। বিশেষ করে গত মাসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর তৃণমূল মোদীকে নিশানা করছেন না বলেই উল্লেখ করছেন বিরোধীদের একাংশ। বামেদের প্রশ্ন, এর পিছনে কি কোনও খেলা রয়েছে? গতকাল অভিষেকের কংগ্রেস-বিরোধী মন্তব্য সেই চর্চায় আরও ইন্ধন দিয়েছে। যদিও কংগ্রেস হাই কমান্ড ভবানীপুরে মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ায় সায় দেননি।

তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায় অবশ্য সাফ বলেন, “কংগ্রেস এবং বামেদের কাছে আমার অনুরোধ, তাঁরা আমাদের নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে দলের উন্নতির চেষ্টা করুন। বাংলায় তাঁরা জোড়া রসগোল্লা পেয়েছেন! রাজ্যের মানুষ তো তাঁদেরই প্রশ্ন করবেন, কেন এই আত্মঘাতী রাজনীতি তাঁরা করে চলেছেন? কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত আলোচনা হয়। বিজেপি-বিরোধী জোটের আবহ তৈরির চেষ্টাও চলছে। সে সব না জেনেই সেই দলকে নিয়ে ফালতু গবেষণা করছেন, যারা যাবতীয় আক্রমণ সত্ত্বেও বিজেপি-কে বিপুল ভাবে হারিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE