Advertisement
E-Paper

জোট নিয়ে আলিমুদ্দিনের পাশে অচ্যুতানন্দন, রুখতে মরিয়া বিজয়ন লবি

আলিমুদ্দিনের পাশে এবার অচ্যুতানন্দন। সিপিএমের ‘কেরল লবি’-কে জোর ধাক্কা দিয়ে আজ প্রবীণ নেতা ভিএস অচ্যুতানন্দন পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোটের পক্ষে মুখ খুললেন। কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতার যুক্তি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নেতৃত্ব মানুষের মনোবাঞ্ছার কথাই বলছেন।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১৯:৩৮

আলিমুদ্দিনের পাশে এবার অচ্যুতানন্দন।

সিপিএমের ‘কেরল লবি’-কে জোর ধাক্কা দিয়ে আজ প্রবীণ নেতা ভিএস অচ্যুতানন্দন পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোটের পক্ষে মুখ খুললেন। কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতার যুক্তি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নেতৃত্ব মানুষের মনোবাঞ্ছার কথাই বলছেন।’’ জোটের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে তাঁর যুক্তি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিটলার-মুসোলিনির থেকেও বেশি স্বৈরাচারী।’’

আগামী সপ্তাহে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের আগে অচ্যুতানন্দনের এই সমর্থন অবশ্যই সূর্যকান্ত মিশ্র-বিমান বসুদের জন্য বড় প্রাপ্তি। কারণ অচ্যুতানন্দন দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম। কেরলের পিনারাই বিজয়ন-কোডিয়েরি বালকৃষ্ণনের মতো যে সব নেতারা পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোটের ঘোর বিরোধী তিনি তাঁদের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। প্রকাশ কারাটের অনুগামী এই কেরলের নেতারা যুক্তি দিচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে কেরলে তাঁদের অসুবিধায় পড়তে হবে। কারণ কেরলে তাঁরা কংগ্রেস সরকারকে হঠিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাইছেন। কংগ্রেস সরকারের দুর্নীতি ও আর্থিক নীতিই সেখানে তাঁদের বড় হাতিয়ার। এখন পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে কেরলে তাঁদের কংগ্রেস বিরোধী আক্রমণ ভোঁতা হয়ে যাবে। আজ কার্যত সেই যুক্তির বেলুন ফুটো করে দিয়েছেন অচ্যুতানন্দন। যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিষয়ে এক এক রাজ্যে এক এক ধরনের মতামত থাকতেই পারে।’’

সমস্যা হল, অচ্যুতানন্দন সিপিএমের পলিটব্যুরোতে নেই। সেখানে পিনারাই-কোডিয়েরিরা রয়েছেন। তাঁরা যে আলিমুদ্দিনের জোটের পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন, এ দিন তা ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র যখন বলছেন, দলের নিচু তলায় ও সাধারণ মানুষের মধ্যে যে জোটের আবহ তৈরি হয়েছে, তার পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়ালে ইতিহাস ক্ষমা করবে না, তখন তাঁর কেরলের কমরেডদের গলায় সম্পূর্ণ ভিন্ন সুর। কেরলের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়েরি বালকৃষ্ণন কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্ন শুনে উত্তর দিয়েছেন, ‘‘সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোর কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওই দলের সঙ্গে জোট করার কোনওরকম ভাবনাচিন্তা এখন আমাদের আলোচ্য সূচিতে নেই।’’

কংগ্রেসের সঙ্গে এই জোট নিয়ে সিপিএমের মধ্যে বিভাজন কতখানি তীব্র, তা স্পষ্ট প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়নের কথাতেও। শনিবার কোল্লামে তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য কমিটি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে সায় দিয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমই বিভ্রান্তি তৈরি করছে। এ সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পার্টি কংগ্রেসই সর্বোচ্চ। সেখানে এ বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। এখন কংগ্রেসের বিরোধিতায় যে লাইন নিয়ে আমরা চলছি, তাতে কোনও বদল হতে পারে না।’’

কেরলের রাজনীতিতে অচ্যুতানন্দনের সঙ্গে পিনারাইয়ের বরাবরই ‘সাপে-নেউলে’ সম্পর্ক। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা হলেও দলের মধ্যে পিনারাইরা তাঁকে একপ্রকার কোণঠাসা করে রেখেছেন। কিন্তু ৯২ বছরের অচ্যুতানন্দনের তুমুল জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখেই তাঁকে একেবারে ঝেড়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকী রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াইতেও তাঁকে সামনে রেখেই চলতে হচ্ছে। আলমুদ্দিনের জোটপন্থী নেতাদের বক্তব্য, অচ্যুতানন্দন জননেতা। তিনি মানুষের মনোভাবকে সম্মান জানিয়ে চলেন। মানুষ কী চাইছেন, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেন। তাত্ত্বিক অবস্থান আঁকড়ে বসে থাকেন না। সেই কারণেই পিনারাই বিজয়নের থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা হাজার গুণে বেশি। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বাস্তব পরিস্থিতির কথা বুঝতে পেরেছেন। তাই আগাম আলিমুদ্দিনের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

পলিটব্যুরোতে না থাকলেও অচ্যুতানন্দন কেন্দ্রীয় কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য। আগামী সপ্তাহের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তিনি হাজির থাকবেন, সেই ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন। অতীতে পিনারাইয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাদকে কেন্দ্র করে পলিটব্যুরো-কেন্দ্রীয় কমিটিতে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। পিনারাই গোষ্ঠী দলবিরোধী কাজের জন্য অচ্যুতানন্দনের শাস্তি চেয়েছে। তখন কিছু ক্ষেত্রে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অচ্যুতানন্দনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যখন জোটের পক্ষে, তখন কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফের তাঁর পাশে দাঁড়ালেন।

পিনারাই অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি বিনা যুদ্ধে এক চুলও জমি ছাড়বেন না। কংগ্রেসের ওমেন চাণ্ডি সরকারকে সরিয়ে সিপিএম ক্ষমতায় এলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসার স্বপ্ন দেখছেন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম নেতারা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে সেই রাস্তায় বাধা হয়ে দাঁড়ান, তা পিনারাই চান না। তাঁর স্পষ্ট যুক্তি, ‘‘আমরা সাম্প্রদায়িকতাকে সমাজের বিপদ হিসেবে দেখি। তা-ই বলে আমরা জনবিরোধী উদার অর্থনীতির প্রবক্তাদের সঙ্গে হাত মেলানোর পক্ষে নই।’’

সূর্যকান্ত মিশ্রর সামনে এখন পরীক্ষা হল, কেরলের এই বাধা এড়িয়ে দলের শীর্ষ কমিটিতে জোটের পক্ষে সওয়াল করে তাতে সিলমোহর আদায় করে নেওয়া। প্রকাশ কারাট-এস আর পিল্লাইরা দেখতে চান, তিনি জোট বিরোধী যুক্তি খণ্ডন করতে পারছেন কি না। মুখে কিছু না বললেও সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি যে জোটের পক্ষে, আজ তিনি জেএনইউ-তে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে হাজির হয়ে ফের সেই বার্তা দিয়ে রেখেছেন।

achuthanandan alimuddin alliance election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy