বিহারের বিধানসভা ভোটে তাঁর দল এবং জোটের বিপর্যয়ের পরে শনিবার রাতে ‘মুখ খুলেছিলেন’ রাহুল গান্ধী। শনিবার সকালে তিনি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে। এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কেসি বেণুগোপাল, কোষাধ্যক্ষ অজয় মাকেন এবং ওই রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত নেতা কৃষ্ণ আল্লাভারুও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৭ অগস্ট থেকে দু’সপ্তাহ ধরে মোট ১,৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিহারে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ করেছিলেন রাহুল। ২০টি জেলা ছুঁয়ে যাওয়া ওই যাত্রায় বিভিন্ন সময়ে তাতে যোগ দিয়েছিলেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবও। ভোটের ফল বলছে, সেই যাত্রাপথের ৩১টি বিধানসভা আসনের মধ্যে মাত্র একটিতে (অরারিয়া) জিতেছে কংগ্রেস। তাদের সহযোগী আরজেডি এবং বামেদের ঝুলি শূন্য! অগস্টে ভোটার অধিকার যাত্রা করার পরে বিহারের নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ দু’মাস রাহুলকে বিহারে দেখা যায়নি। ওই সময় তিনি দক্ষিণ আমেরিকা সফরে চলে গিয়েছিলেন। ভোটের ফলে তার প্রভাব পড়েছে বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে মহাগঠবন্ধনের অন্দরে।
আরও পড়ুন:
বিহারে ২৪৩টি আসনের মধ্যে ২০২-টিতে জিতে আবার ক্ষমতায় ফিরেছে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ। বিরোধী মহাগঠবন্ধনের ঝুলিতে মাত্র ৩৫। এর মধ্যে কংগ্রেসের ছ’জন। বিহারে বিধানসভা ভোটের ইতিহাসে ২০১০ সালের পরে যা কংগ্রেসের সবচেয়ে খারাপ ফল। ২০২০ সালে বিহারে ১৯টি আসনে জিতেছিলেন রাহুলের দলের প্রার্থীরা। ২০১৫ সালে ২৭টিতে। ভোট বিপর্যয়ের পরে শনিবার রাতে রাহুল এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘বিহারে যারা আমাদের জোটকে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। এই নির্বাচন শুরু থেকে সুষ্ঠু ভাবে হয়নি বলেই আমরা জিততে পারিনি।’’ রাহুলের সংযোজন, ‘‘এই লড়াই গণতন্ত্র এবং সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। কংগ্রেস এই ফলাফল পর্যালোচনা করবে এবং গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই আরও জোরদার করবে।’’
রাহুলের তোলা ‘ভোট চুরি’ ও ‘সামাজিক ন্যায়ের রণনীতির ব্যর্থতা’ যুক্তির প্রেক্ষিতে বিজেপির কটাক্ষ— ‘রাহুল গান্ধী ৯৫-তম নির্বাচনী হারের রেকর্ড করলেন! হারের জন্য ট্রফি থাকলে তাঁর আলমারি ভর্তি হয়ে যেত!’ সন্ধ্যায় বিজেপি সদর দফতরে বিজয় ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী কংগ্রেসকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘‘আমার ভয় যে, এর পরে কংগ্রেসে একটা বড় ভাঙন ধরবে।’’ সূত্রের খবর এই পরিস্থিতিতে শনিবারের পর্যালোচনা বৈঠকে মেরুকরণের পাশাপাশি উঠে এসেছে প্রচারের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব এবং গাফিলতির প্রসঙ্গও। ঘরোয়া ভাবে একাধিক প্রার্থী বলছেন, তাঁদের কেন্দ্রে প্রচারের জন্য রাজ্য স্তরের বড় নেতাদের ধারাবাহিক উপস্থিতি ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে ভোটে হারের পরেও ‘ময়নাতদন্ত’-বৈঠক করেছিলেন রাহুল। কিন্তু তার কোনও প্রভাব কংগ্রেস সংগঠনে দেখা যায়নি।