Advertisement
E-Paper

মেঘভাঙা বৃষ্টি থেকে হড়পা বান, উত্তরাখণ্ডের পর হিমাচলেও! উদ্ধার ৪০০ পর্যটক, জারি লাল সতর্কতা

মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানের জোড়া ফলায় মঙ্গলবার বিধ্বস্ত হয়েছিল উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর কিছু এলাকা। বুধবার একই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় আঘাত হানল হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌরে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৫ ২৩:২৬
আচমকা মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে হড়পা বানের সৃষ্টি হল হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌরে।

আচমকা মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে হড়পা বানের সৃষ্টি হল হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌরে। ছবি: পিটিআই।

মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানের জোড়া ফলায় মঙ্গলবার বিধ্বস্ত হয়েছিল উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর কয়েকটি এলাকা। বুধবার একই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় আঘাত হানল হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌরে। আচমকা মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে হড়পা বানের সৃষ্টি হল! জলের তোড়ে ভেসে গেল টাংলিং নালার উপরের অস্থায়ী সেতু। ফলে আটকে পড়েন বহু পুণ্যার্থী। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তৎপরতায় শেষমেশ জ়িপলাইনের সাহায্যে উদ্ধার করা হয় চারশোরও বেশি পুণ্যার্থীকে।

বুধবারও বৃষ্টি থামার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি উত্তর ভারতের হিমালয় ঘেরা দুই রাজ্যে। ফলে জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। উত্তরকাশীর জেলাশাসক প্রশান্ত আর্য জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত চার জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। কিন্তু হড়পা বানে ঠিক কত জন ভেসে গিয়েছেন, সেই সংখ্যা মেলেনি। প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে, হিমাচল প্রদেশের সোলান জেলা মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত হয়েছে। চক্কী মোড়ে হাইওয়ে বন্ধ। বুধবার সকালে ভূমিধসের কারণে চণ্ডীগড়-শিমলা জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। যদিও রাতে সেই রাস্তায় যান চলাচল শুরু হয়েছে। অন্য দিকে, ধসের কারণে বন্ধ রয়েছে চণ্ডীগড়-মনালী হাইওয়ে।

মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে হঠাৎ করেই মঙ্গলবার উত্তরকাশীর ধরালী গ্রামে সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত হয়ে পাহাড় থেকে নেমে এসেছিল হড়পা বান। ক্ষীরগঙ্গা নদীর অববাহিকায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসে বিশাল বিশাল পাথর, বোল্ডার আর কাদার স্রোত। প্রথমে তা আছড়ে পড়েছিল ধরালী গ্রামের উপর। তার পর জলের তোড় নেমে আসে সুক্খী-সহ আশপাশের গ্রামগুলির উপরে। পাথর, কাদা আর জলের স্রোতে ধরালী কার্যত পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। বুধবার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সচিব বিনোদকুমার সুমন জানান, আপাতত উত্তরকাশী জুড়ে লাল সতর্কতা জারি থাকবে। উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে এয়ারলিফ্‌ট করে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে উত্তরাখণ্ডে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামীকে ফোন করে পরিস্থিতির খবরাখবর নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

নিখোঁজ ২৮ তীর্থযাত্রী, ১১ সেনা

দক্ষিণের রাজ্য কেরল থেকে দেবভূমি উত্তরাখণ্ডে গিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন অন্তত ২৮ জন পুণ্যার্থী। কেরল সরকার বুধবার জানিয়েছে, উত্তরাখণ্ড প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। অন্য দিকে, মেঘভাঙা বৃষ্টির পর হরশিল সেনাছাউনি থেকে ১১ জন সেনাকর্মী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি জারি রেখেছে সেনা, ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি) এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা।

জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে বিখ্যাত ধরালীতে রয়েছে বহু রেস্তরাঁ, হোটেল, হোমস্টে। গঙ্গোত্রী যাওয়ার পথে এখানে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। মঙ্গলবারের পর থেকে সেই জায়গা যেন ‘মৃত্যুপুরী’তে পরিণত হয়েছে। বাড়িগুলি চাপা পড়েছে কাদা-পাথরের নীচে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। এখনও পর্যন্ত ধরালী এবং তার আশপাশের এলাকা থেকে অন্তত ৫০ জন নিখোঁজ। তাঁদের মধ্যে সেনা এবং পুণ্যার্থীরাও রয়েছেন। সরকারি ভাবে এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। কিন্তু হড়পা বানে ঠিক কত জন ভেসে গিয়েছেন, সেই পরিসংখ্যান মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দেহ খোঁজার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত কুকুরদের কাজে নামিয়েছে। উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৩৫ সদস্যের তিনটি উদ্ধারকারী দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাঠানো রয়েছে। আরও দু’টি দলকে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে রুদ্রপ্রয়াগের অলকানন্দা নদীর জল বিপদসীমার কাছে রয়েছে। যে কারণে কেদারনাথ তীর্থযাত্রা সাময়িক ভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

বিপর্যস্ত হিমাচলে জাতীয় সড়ক বন্ধ

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকেরা সন্ত্রাসের শিকার হওয়ার পরে হিমালয় প্রেমীদের ভিড় বেড়েছিল উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচলে। কিন্তু বাদ সাধল প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বুধবার সকালে হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌর জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বান নামে। ওই সময় কিন্নৌর কৈলাস ট্রেকিং রুটে ৪১৩ জন পুণ্যার্থী ছিলেন। তখনই আচমকা হড়পা বানের তোড়ে ভেসে যায় পথের দু’টি সেতু। আটকে পড়েন পুণ্যার্থীরা। টংলিং নালার একটি সেতুও ভেসে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, আইটিবিপি এবং জেলা প্রশাসনের উদ্ধারকারী দল। শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। পর্বতারোহণ এবং ‘রোপ রেসকিউ অ্যান্ড ক্লাইম্বিং’ (আরআরসি)-এর সরঞ্জাম নিয়ে আসেন প্রশিক্ষিত উদ্ধারকারীরা। পর্বতারোহণের বুট, ক্র্যাম্পন, আইস-অ্যাক্স, দড়ি, হারনেস প্রভৃতির সাহায্যে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। শেষমেশ জ়িপলাইনের সাহায্যে ফুঁসতে থাকা নদী পার করিয়ে পুণ্যার্থীদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

হড়পা বান আঘাত এনেছে পরিবহণ ব্যবস্থাতেও। জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাঁরা কুল্লু এবং মনালীর দিকে যাচ্ছিলেন, তাঁরা আটকে পড়েছেন। না পারছেন এগোতে, না পারছেন ফিরতে। ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে রাস্তায় পর্যটকদের গাড়ি আটকে রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, রাস্তা খালি করতে আপাতত একটি বিকল্প একমুখী পথ খুলে দেওয়ার ভাবনাচিন্তা চলছে। তাতে কেবল হালকা গাড়ি যেতে পারবে। প্রসঙ্গত, রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এসডিএমএ) একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরের ২০ জুন থেকে ৫ অগস্টের মধ্যে হিমাচল প্রদেশে নানা দুর্ঘটনায় ১৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Uttarakhand cloudburst Flash flood himachal pradesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy