মায়ের সঙ্গে গালিব গুরু। ছবি: পিটিআই
বছর তিনেক আগে আফজল গুরুর ফাঁসির সময়ে এই বাড়ির ধারেকাছে কাউকে ঘেঁষতে দিচ্ছিলেন না নিরাপত্তা রক্ষীরা।
আর আজ বারামুলা জেলার সিজাগির সোপোরের সেই বাড়িতেই উপচে পড়ছে ভিড়। অতিথিদের হাতে নানা রকমের উপহার। আফজল গুরুর ছেলে গালিব গুরুকে অভিনন্দন জানাতে এই ভিড়। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৫০০-র মধ্যে ৪৭৪ পেয়ে রাজ্যে ১৯তম স্থান অধিকার করেছে সে। রবিবারই ঘোষণা হয়েছে ফল। তার পর থেকেই এক মুহূর্ত ফুরসত পাচ্ছেন না আফজল-পত্নী তবস্সুম। অতিথিদের কাশ্মীরি ‘খেওয়া’ আর ‘শিরমল’ খাওয়াতে ব্যস্ত গালিবের গর্বিত মা।
গালিবের লড়াইটা যে সহজ ছিল না সে কথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সামনের মাসে যে ছেলে পনেরোয় পা দেবে তার পক্ষে কতটা সহজ ছিল ২০০১ সালে সংসদে হামলার মূল ষড়যন্ত্রী আফজল গুরুর ছেলের পরিচয় নিয়ে বেঁচে থাকাটা?
গালিবের কথায়, ‘‘দেখুন, সবাই জানে আমার বাবার সঙ্গে কী হয়েছে। আমি বাবার নাম উজ্জ্বল করতে চাই। তার জন্য আমাকে এখনও অনেক পরিশ্রম করতে হবে। যারা আমাদের জীবন থেকে সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে, তাদের আমি আমার সাফল্য দিয়েই জবাব দিতে চাই।’’ মা কতটা খুশি? গালিবই উত্তর দিল, ‘‘মায়ের জন্যই তো এখন সব করা। মা-ই আমার সব। মাকে খুশি রাখাই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য। যে দিন মা আর আমাকে নিয়ে গর্ব অনুভব করবে না, সে দিন যেন আমার মৃত্যু হয়।’’
ছেলের কথা শুনে তবস্সুম আঁকড়ে ধরেন ছেলেকে। ছলছল চোখে বলেন, ‘‘গালিবের সাফল্যের খবর পাওয়ার পর থেকে অনেকে আসছেন। শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। উপহার দিচ্ছেন। অনেকে তো ওর উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থ সাহায্যও দিতে চাইছেন। এসব দেখে ভাল লাগছে।’’ আরও বললেন, ‘‘ওর বাবার মতোই উচ্চশিক্ষিত হোক, এটাই শুধু চাই। ও নিজের পথ বেছে নিয়েছে। আমি জানি গালিব সফল হবেই। তাই আর দুশ্চিন্তা করি না।’’ মুখে বললেও বাস্তবে দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না পেশায় নার্স তবস্সুমের। আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘কিন্তু এর মধ্যেও কিছু লোক ওকে জঙ্গির ছেলে বলছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় খারাপ কথা লিখছে। হয়তো উস্কাতে চাইছে। চাইছে আমার ছেলেকে এমন ভাবে উস্কে দেবে যাতে ওর পড়াশোনা লাটে ওঠে। কিন্তু আমার ছেলে কোনও উস্কানিতে পা দেবে না।’’
গালিব অবশ্য এত শক্ত কথার মধ্যে না গিয়ে আপাতত বিভোর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে। পড়তে চায় দিল্লির এইমসে। আপাতত সেই লক্ষ্যেই এগোতে চায় গালিব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy