নাটকের শুরু দুপুর দেড়টায়। তাতে যখন ইতি পড়ল, ঘড়ির কাঁটা তখন রাত দু’টো ছুঁয়ে ফেলেছে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে গুজরাত থেকে রাজ্যসভা ভোটে জিতে গেলেন কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল। সরকারি ভাবে ফল ঘোষণা না হলেও টুইট করে জয়ের দাবি করেছেন আহমেদ। লিখেছ্ন ‘সত্যমেব জয়তে’। উল্লাসে মেতেছেন কংগ্রেস কর্মীরা।
আগামিকাল সংসদে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের হাত থেকে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তার আগের রাতে তিনি ধাক্কা খেলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর রাজ্যে।
গুজরাত মোদীরও রাজ্য। সেখানে রাজ্যসভার একটি বাড়তি আসন ছিনিয়ে নিতে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন অমিত শাহ। একে একে দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে শুরু করেছিলেন কংগ্রেস বিধায়কেরা। তবে রণে ভঙ্গ না দিয়ে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন আহমেদ পটেলও। আরও ভাঙন ঠেকাতে দলীয় বিধায়কদের নিয়ে ঘাঁটি গেড়েছিলেন কংগ্রেস শাসিত কর্নাটকে। সেই টানাপড়েন তুঙ্গে ওঠে আজ, ভোটগ্রহণের দিন দুপুরে।
আরও পড়ুন: বর্ণিকা-কাণ্ডে মুখ পুড়ছে বিজেপির
এ দিন দুই বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস বিধায়ক ভোলাভাই গোহিল ও রাঘবজি ভাই পটেল ভোট দেন বিজেপি প্রার্থী বলবন্তসিন রাজপুতকে। রাজ্যসভা ভোটের নিয়ম অনুযায়ী দলীয় প্রতিনিধিকে ব্যালট দেখাতে হয়। ওই দুই বিধায়ক কংগ্রেস প্রতিনিধির সঙ্গে বিজেপির প্রতিনিধিকেও ব্যালট দেখান। তৎক্ষণাৎ আপত্তি জানান কংগ্রেস প্রতিনিধি শক্তিসিন গাহিল। দাবি তোলেন, বাতিল করতে হবে ওই দু’টি ভোট। রিটার্নিং অফিসার সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় বল গড়ায় দিল্লিতে, নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে।
ভোট দেওয়ার পরে অমিত শাহ। মঙ্গলবার গুজরাতে। ছবি: পিটিআই।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই নির্বাচন সদনে দফায় দফায় আনাগোনা শুরু হয় কংগ্রেস এবং বিজেপির তাবড় নেতাদের। অমিত ও মোদীর নির্দেশে কেন্দ্রের ওজনদার সাত মন্ত্রী ছুটে যান কমিশনে। অরুণ জেটলির নেতৃত্বে আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, পীযূষ গয়াল, নির্মলা সীতারমন, ধর্মেন্দ্র প্রধান, মুখতার আব্বাস নকভি ও পি পি চৌধরি। এআইসিসি দফতরে তখন চলছিল দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। সেখান থেকেই পি চিদম্বরমের নেতৃত্বে আরও ওজনদার টিম পাঠান সনিয়া। ভোট গণনা স্থগিত রেখে চলে ভিডিও ফুটেজ দেখা, অতীতে ঘটা এমন ঘটনার নজির টেনে আনা আর আইনের চুলচেরা বিশ্লেষণ।
রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ নির্বাচন কমিশন জানায়, ওই দুই কংগ্রেস বিধায়কের ভোট অবৈধ। তার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সব ব্যালটের পিছনে নির্দিষ্ট ক্রমিক নম্বর থাকে। কোন বিধায়ককে কোন ক্রমিক নম্বরের ব্যালট দেওয়া হয়েছে, তাও নথিভুক্ত থাকে। ওই নম্বর মিলিয়ে ভোট দু’টি বাতিল করে ভোট গণনা শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
কিন্তু তাতেও নাটকের শেষ হয়নি। বিজেপি দাবি করে, ভিডিও রেকর্ডিংয়ে কোনও অনিয়ম ধরা পড়েনি। কমিশন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে তাদের অভিযোগ, আহমেদকে ভোট দেওয়া কয়েক জন কংগ্রেস বিধায়কও ব্যালট দেখিয়েছেন বিজেপি প্রতিনিধিকে। অতএব তাঁদের ভোটও বাতিল করা হোক। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেই অভিযোগ খারিজ করে শুরু হয় ভোট গণনা। জিতে যান আহমেদ।
এ দফায় গুজরাতে ভোট হয়েছে রাজ্যসভার তিনটি আসনের জন্য। দু’টি আসনে অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির জয় একপ্রকার নিশ্চিত। কিন্তু কংগ্রেসের শিবির ভাঙনের ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে আহমেদ পটেলের জয়। তাঁর দরকার ছিল ৪৫টি ভোট। কর্নাটকে নজরবন্দি ৪৪ জন বিধায়কের মধ্যে এক জন আজ ভোট দেন বিজেপি প্রার্থীকে।
তার পরেও আহমেদের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, বাকি ৪৩ বিধায়ক ও এনসিপি-র দু’জনের মধ্যে এক জন আর জেডিইউ-এর এক জনের সমর্থন নিয়ে জয় তাঁর মুঠোয়। কিন্তু সংশয় ছিল সেখানেও। কারণ, জেডিইউ বিধায়ক আহমেদকে ভোট দেয়েছেন বলে জানালেও দিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতার দাবি, ভোট পড়েছে বিজেপির বাক্সেই। রাতে নাটক আরও বাড়িয়ে বিজেপির সমর্থক জিপিপি-র বিধায়ক নলিনভাই কোটাডিয়া আবার জানান, তিনি ভোট দিয়েছেন কংগ্রেসকে।
শেষ পর্যন্ত আহমেদ পেয়েছেন ৪৪টি ভোট। সুতরাং দুই বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস বিধায়কের ভোট বাতিল হয়ে প্রয়োজনীয় ভোটের সংখ্যা কমে না এলে নিরাশই হতে হতো তাঁকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy