ভুবনেশ্বর এমসে ভর্তি হওয়ার পর থেকে শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি ওড়িশার কলেজের সেই নির্যাতিতার। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, তন্ত্র পুড়ে গিয়েছে। কিডনিও পুড়ে যাওয়ার কারণে তা এখন কাজ করছে না। তরুণীর ডায়ালিসিস চলছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসায় পরামর্শ দিচ্ছেন দিল্লি এমসের বিশেষজ্ঞেরাও। হেনস্থার কারণে শনিবার কলেজচত্বরেই গায়ে আগুন দিয়েছিলেন বালেশ্বরের ফকির মোহন কলেজের ওই ছাত্রী। শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে চিকিৎসকদের একাংশের মধ্যে।
হাসপাতালের একটি সূত্র বলছে, নির্যাতিতার শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রাও কমে গিয়েছে। সে কারণে তাঁকে বেশ কিছু ভিটামিন দেওয়া হচ্ছে। এমসের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘আমরা ওঁর রক্তে শর্করার মাত্রা লক্ষ রাখছি। ওঁর তন্ত্রগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব রকমের পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’ রবিবার ওই ছাত্রীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তাতে কার্ডিয়োলজি, মেডিসিন, প্লাস্টিক সার্জারি-সহ বেশ কয়েকটি বিভাগের চিকিৎসকেরা রয়েছেন। তাঁরা সব সময় নির্যাতিতার শারীরিক অবস্থা নজরে রাখছেন।
রবিবার এমসের ডিরেক্টর আশুতোষ বিশ্বাস জানান, নির্যাতিতার শরীরের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। কিডনি, শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি হয়েছে। লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাঁকে। পরের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই আবহে রবিবার দিল্লি থেকে ফিরে ভুবনেশ্বর এমসে নির্যাতিতাকে দেখতে যান ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী ভুবনচরণ মাঝি। তিনি নির্যাতিতাকে সব রকম চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। উচ্চশিক্ষা দফতরের রিপোর্ট এলে এই ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ করার কথাও জানিয়েছেন। এই ঘটনায় বিরোধী দলনেতা বিজেডির নবীন পট্টনায়ক রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। সোমবার ওড়িশা সফরে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। বিজেডি এবং কংগ্রেসের নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখার করার জন্য সময় চেয়েছেন।
ওড়িশার বালেশ্বরের এক কলেজে তাঁর বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তুলেছিলেন ওই ছাত্রী। কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি। শনিবার এই নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গেও দেখা করতে যান তিনি। সেখান থেকে বেরিয়ে কিছু ক্ষণের মধ্যেই ক্যাম্পাসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নির্যাতিতা। ছাত্রীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন কলেজেরই এক ছাত্র। নির্যাতিতার গায়ের আগুন নেভাতে গিয়ে তিনিও দগ্ধ হয়েছেন। ঘটনার পরে তড়িঘড়ি দু’জনকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্যাতিতার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভুবনেশ্বর এমসে স্থানান্তর করা হয়।