ফাইল চিত্র।
একদিকে ভারত অন্য দিকে পাকিস্তান। মাঝে হুরিয়ত। এই তিন জাঁতাকলে গত দু’মাস ধরে পিষ্ট হচ্ছেন ভূস্বর্গের বাসিন্দারা। বিক্ষোভে দীর্ণ কাশ্মীরের মন বুঝতে আগামিকাল শ্রীনগর পৌঁছবে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল। কিন্তু সেই সফরে বিশেষ লাভ হবে বলে মনে করছেন না উপত্যকার মানুষই। কেন? কারণ এই আলোচনায় নেই হুরিয়ত। অথচ সব পক্ষই জানে, হুরিয়ত ছাড়া আলোচনায় বসে কোনও লাভ নেই। প্রতিনিধি দলের সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি বা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মতো বিরোধী নেতাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এনডিএ শরিক রামবিলাস পাসোয়ান পর্যন্ত আজ বলেছেন, ‘‘হুরিয়তের সঙ্গে আলোচনায় না বসলে শুধু ফোটো তোলার জন্য কাশ্মীরে গিয়ে কোনও লাভ নেই।’’
উপত্যকার বাসিন্দা থেকে রাজনৈতিক দল— সকলেই চাইছেন আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীরের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আলোচনাকে সাংবিধানিক গণ্ডির মধ্যে বেঁধে দিয়ে ব্রাত্য করে দিয়েছেন হুরিয়তকে। এই অবস্থায় বিরোধী নেতাদের যুক্তি, অন্তত হুরিয়তের কাছে বৈঠকে বসার আমন্ত্রণ তো পাঠানো হোক। যদি তারা না বসে, সে ক্ষেত্রে তাদের দোষারোপ করা যাবে। কিন্তু পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসার যে শর্ত হুরিয়ত দিয়েছে, তা কিছুতেই মানবে না দিল্লি। আর সেটাকেই কাজে লাগিয়ে হুরিয়ত কাশ্মীরিদের বোঝাচ্ছে, সমস্যা মেটাতে ভারত মোটেই আন্তরিক নয়।
কেন্দ্র অবশ্য শেষ চেষ্টা করে দেখতে চাইছে। আজ দিল্লিতে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানিয়েছেন, অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সকলের সঙ্গেই কথা বলতে পারেন। সরকারের তাতে আপত্তি নেই। অর্থাৎ হুরিয়তের সঙ্গে ট্র্যাক-টু আলোচনার রাস্তা খোলা রাখতে চাইছে কেন্দ্র। একই পথে হেঁটে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এ দিন হুরিয়তকে কোনও পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। যা নিয়ে রাত পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া মেলেনি হুরিয়তের।
উপত্যকার মন পেতে গত রবিবারই কার্ফু তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মুফতি প্রশাসন। কিন্তু আজ থেকে হুরিয়ত বিমানবন্দরমুখী রাস্তা অবরোধ করার ডাক দেওয়ায় সকাল থেকে ফের শুরু হয়ে গিয়েছে অনির্দিষ্টকালীন কার্ফু। বিমানবন্দর থেকে হোটেলে আসার পথে দেখেছি নিস্তব্ধ এক শহর। বাড়ি-দোকান, ব্যাঙ্ক, স্কুল, মায় ওষুধের দোকানও বন্ধ! শুধু মোড়ে মোড়ে সশস্ত্র আধা সেনার ভারী বুটের শব্দ।
টানা অশান্তির কারণে এ বছর আর পর্যটক আসার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন শিকারা-হোটেল মালিক থেকে ট্যাক্সি চালকেরা।
প্রায় দু’মাস ধরে টানা কার্ফু, অশান্তি-উত্তেজনা, ৭৩ জনের মৃত্যু, আর হাজার খানেক লোকের আহত হওয়া— এই ক্ষত নিয়েই এখন ধুঁকছে গোটা ভূস্বর্গ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy