‘বিতর্কিত সৌধ’ ঘোষণা করা হয়েছিল আগেই। উত্তরপ্রদেশের সম্ভলের ‘শাহি জামা মসজিদ বনাম হরিহর মন্দির মামলা’য় সোমবার পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষার নির্দেশ দিয়ে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। মসজিদ কমিটির দাবি উড়িয়ে এ বিষয়ে হাই কোর্ট নিম্ন আদালতে রায় বহাল রেখেছে।
সম্ভলের নিম্ন আদালতে একটি মামলায় দাবি করা হয়েছিল, সেখানকার শাহি মসজিদ মোগল সম্রাট বাবরের আমলে হরিহর মন্দির ভেঙে তৈরি হয়েছিল। গত ১৯ নভেম্বর মামলা দায়েরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিম্ন আদালতের বিচারক আদিত্য গোস্বামী কমিশনার নিয়োগ করে মসজিদে সেই দিনই সমীক্ষার নির্দেশ দেন। কোট গারভী এলাকায় প্রথম দিনের সমীক্ষা নির্বিঘ্নেই করা হয়েছিল। কিন্তু এর পর ২৪ নভেম্বর দ্বিতীয় বার সমীক্ষার সময়ে উত্তেজনা ছড়ায়। তাতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়।
সে দিনের গোষ্ঠীসংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে মেরুকরণের রাজনীতির অভিযোগ তুলে সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এই ঘটনায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে সমাজবাদী পার্টির স্থানীয় সাংসদ জ়িয়াউর রহমান বার্কের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে।
এই পরিস্থিতিতে শাহি মসজিদ চত্বরে সমীক্ষার নির্দেশের বিরোধিতা করে মসজিদ কমিটি সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সম্ভল-কাণ্ডে নিম্ন আদালত আর কোনও হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এর পরে আবেদনের শুনানির ভার পেয়েছিল ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। গত ৪ মার্চ পর্যবেক্ষণে সম্ভলের জামা মসজিদকে ‘বিতর্কিত সৌধ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। সোমবার বিচারপতি রোহিতরঞ্জন আগরওয়াল মসজিদ কমিটির আবেদন খারিজ করে নিম্ন আদালতর দেওয়া সমীক্ষার নির্দেশ বহাল রাখেন।
শাহি মসজিদ কমিটির দাবি, ১৯৯১ সালের ধর্মীয় উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে কোনও মন্দির-মসজিদ বা গির্জার চরিত্র পাল্টানো যাবে না। ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার সময় যেখানে যা ছিল, তেমনটাই রাখতে হবে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখতে তৈরি আইনে শুধুমাত্র অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদকে এই আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ, স্বাধীনতার আগে কোনও মন্দির ভেঙে মসজিদ হয়ে থাকলেও এখন যেখানে মসজিদ রয়েছে, সেখানে মসজিদই থাকবে।
এই নীতি মেনে চললে, কোনও মসজিদ আগে মন্দির ছিল বলে দাবি উঠলেও সেখানে আর সমীক্ষা করা যায় না। কিন্তু প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় পদে থাকাকালীন বারাণসীর জ্ঞানবাপী বিতর্কে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণকে সমীক্ষার অনুমতি দিয়েছিলেন। শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, ধর্মীয় উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইনে কোনও ধর্মস্থানের ‘চরিত্র বদলের’ উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ‘চরিত্র নির্ধারণে’ কোনও বাধা নেই। সম্ভলে সমীক্ষা নিয়ে নির্দেশ ঘোষণার আগে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট এ বিষয়ে এএসআইয়ের মত চেয়েছিল। এএসআই-এর তরফে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে হাই কোর্টকে দেওয়া হয়েছিল।