ইলাহাবাদের নাম বদলে এই সিদ্ধান্ত নিছকই যোগী সরকারের গেরুয়া রাজনীতি বলে সরব বিরোধীরা। —ফাইল চিত্র।
কথা চলছিল ক’দিন ধরেই। আজ অবশেষে সরকারি ভাবে ইলাহাবাদের নাম বদলে প্রয়াগরাজ রাখার সিদ্ধান্ত নিল যোগী আদিত্যনাথের সরকার। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নাম বদলের প্রস্তাব পাশ করানো হয়েছে। আগামী বছরের গোড়ায় অর্ধ কুম্ভ এবং লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সিদ্ধান্ত নিছকই গেরুয়া রাজনীতি বলে সরব বিরোধীরা। যোগী সরকার যে ভাবে তড়িঘড়ি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা দেখে বিরোধীদের বক্তব্য, ভোটের আগে হিন্দু আবেগ উস্কে দিতেই এটা করেছে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার। একই সঙ্গে ভোটের অঙ্কে রাম মন্দির নিয়ে হাওয়া তুলে দিতে চাইছে তারা।
গঙ্গা-যমুনা এবং সরস্বতী— এই তিন নদীর সঙ্গম প্রয়াগে। প্রাচীন যুগ থেকেই ওই এলাকাকে প্রয়াগ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও মুঘল আমলে আকবর নাম করেন ইলাহাবাদ বা আল্লার হাতে গড়া শহর। প্রয়াগ নামটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই সরব ছিলেন স্থানীয় হিন্দুদের একাংশ। যোগী আদিত্যনাথের কথায়, ‘‘এ বছর ইলাহাবাদে শাহি স্নানের দিনক্ষণ ঘোষণার সময়ে অখিল ভারতীয় আখাড়া পরিষদ ওই নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন জানায়।’’ স্থানীয় সঙ্ঘ নেতারাও দীর্ঘ দিন ধরে ওই নাম বদলের দাবি তুলছিলেন।
নাম বদলের বিষয়টি নিয়ে ক’দিন ধরেই দলীয় স্তরে আলোচনা চলছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। গত শনিবার স্থানীয় সন্ত শিবিরে গিয়ে তাঁদের আশ্বাসও দিয়ে আসেন আদিত্যনাথ। আজ বিষয়টি মন্ত্রিসভায় আলোচনার জন্য উঠলে তাতে দ্রুত ছাড়পত্র দেয় সরকার। যোগী প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সঙ্ঘ পরিবার-সহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি।
কংগ্রেস নেতা প্রমোদ তিওয়ারি কথায়, ‘‘ভোটের কথা মাথায় রেখে জেনেবুঝেই হিন্দুত্বের তাস খেলতে চেয়েছে সরকার। কারণ সরকার বুঝতে পারছে, তারা কাজের মাধ্যমে জিততে পারবে না। তাই হিন্দুত্বই এখন ভরসা বিজেপির।’’ একই সুরে সপা নেতা অনুরাগ ভাদোরিয়া বলেন, ‘‘সরকারের উচিত হল, জনগণের জন্য কাজ করা। কাজ করলে নাম এমনিতেই হবে। তখন আলাদা করে নাম বদলের খেলায় নামতে হবে না।’’ বিরোধীদের বক্তব্য, যোগীর আমলে অপরাধ বেড়েছে, সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতরে হার লাফিয়ে বেড়েছে। এমনকি শিশুমৃত্যুর ঘটনাও আখছাড় ঘটছে। এই অবস্থায় নাম বদলের নাটক করে নজর ঘোরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি সরকার। এই সমালোচনার জবাবে বিজেপি নেতা তথা যোগী সরকারের মন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, ‘‘যাঁরা নাম পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছেন।’’
তবে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিলেই যে তৎক্ষণাৎ নাম পরিবর্তন হবে, তা নয়। বিষয়টি নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ছাড়পত্রের উপরে। সাধারণত রাজ্য সরকারের মাধ্যমে কোনও গ্রাম, শহর বা রেলওয়ে স্টেশনের নাম পরিবর্তনের আবেদন প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আসে। এর পর কেন্দ্র নাম পরিবর্তনের যৌক্তিকতা, পরিবর্তন করা হলে তার কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা তা নিয়ে গোয়েন্দা বিভাগ, ডাক বিভাগ, টেলিকম মন্ত্রক, সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ও রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে। যদি সব পক্ষ নাম পরিবর্তনে সায় দেয়, তা হলে সেই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যকে। তবে এ ক্ষেত্রে যেহেতু কেন্দ্র ও রাজ্য দু’জায়গাতেই বিজেপি সরকার রয়েছে, তাই দ্রুত নাম পরিবর্তন হয়ে যাবে বলেই মনে করছে যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy