চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি। নেতাজি মুলায়ম সিংহ যাদব তাঁকে রাজ্যসভায় প্রার্থী করার পরের দিনই অমর সিংহ বললেন, ‘‘সমাজবাদী নই, আমি মুলায়মবাদী!’’
সমাজবাদী পার্টির নেতা-কর্মীরা জানেন, অমরের এই বক্তব্যের ওজন কতটা। আর এর মর্মার্থই বা কী? আর নেতাজির ঘনিষ্ঠরা বলছেন, শুধু সময়ের অপেক্ষা। কয়েক দিনের মধ্যেই অমর সিংহের মুখে শোনা যাবে, ‘‘আমি অখিলেশবাদী।’’ সেটাই লক্ষ্য নেতাজির। ছেলের চার পাশের কাঁটা অমর সিংহকে দিয়েই উপড়ে ফেলে অখিলেশের সিংহাসন আরও পোক্ত করতে চান নেতাজি। অনেকে বলছেন, সেই জন্যই অমর সিংহকে ফিরিয়ে আনা।
উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি জিতে আসার পর মুলায়ম যখন পুত্র অখিলেশেকে মুখ্যমন্ত্রী বাছলেন, সেই সময় তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছিল। অখিলেশের অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে রামগোপাল যাদব-আজম খানেরা ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে নেতাজির সঙ্গেও নানা বিষয়ে মতবিরোধ বাড়তে থাকে অখিলেশের। এ বারে অখিলেশের চার পাশের সেই কাঁটাই অমর সিংহকে দিয়ে তুলতে চাইছেন মুলায়ম। এ দিন অমর বলেছেন, ‘‘অখিলেশ আমার ছেলের মতো। আমি তাকে আমার ভালবাসা ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সে আমার ওপর রাগ করলে করতে পারে, পাল্টা রাগ করার কোনও অধিকারই আমার নেই।’’
এর আগে ১৮ বছর রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন অমর। কিন্তু এ বার ফিরে আসার পরের দিনই এক রকম হইহই করেই বাজারে নেমে পড়লেন এই ঝানু রাজনীতিবিদ। অমর বিপাকে পড়ার পরে জয়া বচ্চন তাঁর বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছিলেন। সেই ঘটনার ছ’বছর পরে একটি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আজ অমর দাবি করেছেন, জয়া বচ্চন ও বচ্চন পরিবারের সঙ্গে তাঁর কোনও বিরোধই নেই। তিনি বলেন, ‘‘চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চে রেখা আর জয়া এখন একে অপরকে আলিঙ্গন করছেন। রেখা সবার সামনেই দিদিভাই বলে ডাকছেন জয়াকে। দিন কয়েক আগে আমার বৌমা ঐশ্বর্যা তো একটি অনুষ্ঠানের মঞ্চে রেখাকে মা বলেও ডেকেছে! বদলই জীবন।’’
মুলায়ম তাঁকে ফের রাজ্যসভায় প্রার্থী করায় কেমন লাগছে? এই প্রশ্নের জবাবে অমর বলেন, ‘‘কিছুটা তো বিস্মিত বটেই। নেতাজির এই ভালবাসা ও আশীর্বাদ পেয়ে আমি অভিভূত।’’ এর পরেই কূটচালের জন্য পরিচিত বর্ষীয়ান এই নেতা বলেন, ‘‘আগের দিন সন্ধ্যায় আহমেদ পটেল ফোন করে আমাকে অভিনন্দন জানানোয় আমি অবাক হই। চব্বিশ ঘণ্টা পরে বুঝতে পারি কেন তিনি
এত উচ্ছ্বসিত!’’
মুলায়ম তাঁকে ফেরাচ্ছেন, সে খবর আগাম জানাচ্ছেন সনিয়া গাঁধীর সেনাপতি আহমেদ পটেল—প্রকাশ্যে এমন একটা ছক্কা মেরে অনেককে কি সমঝে দিতে চাইলেন অমর? তাঁর ঘনিষ্ঠরা কিন্তু সেটাই মনে করছেন। কিন্তু দলের যে সব নেতা তাঁর নাম ওঠার পরে বিরোধিতায় সরব হয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবছেন অমর? তুরন্ত জবাব— ‘‘তাদের পরোয়া করি না আমি। শুধু নেতাজি যদি আঘাত পান আমি লজ্জিত হব।’’
সমাজবাদী পার্টির এক নেতার কথায়, সামনে উত্তরপ্রদেশে ভোট। কিন্তু অমর সিংহকে দিয়ে ভোট টানা নেতাজির লক্ষ নয়। কারণ অমর জননেতা নন। বড়জোর নেতাজির মনে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যে সুপ্ত বাসনা রয়েছে, ২০১৯-এ অমরকে দিয়ে সেটা মেটানোর একটি চেষ্টা করতে পারেন তিনি। কারণ, সব দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার এক অনবদ্য কৌশল রয়েছে অমরের। কিন্তু গত ছ’বছর দলের বাইরে থাকার পর অমর সিংহও বুঝে গিয়েছেন, অন্য দলের নেতারা সম্পর্ক যতই ভাল রাখুক, কোনও দল তাঁকে ছুঁয়েও দেখেনি। এই অবস্থায় নেতাজি যখন তাঁকে ফের আশ্রয় দিলেন, তিনি যে ‘মুলায়মবাদী’ বলে নিজেকে জাহির করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। আর অখিলেশের পথ মসৃণ করতেও তিনি সচেষ্ট হবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy