রাজ্যের ঋণের বোঝা মকুব করা সম্ভব নয় বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। গত পাঁচ বছর লাগাতার আর্জির পরে কেন্দ্রের এ হেন সিদ্ধান্তে ‘মর্মাহত’ রাজ্য সরকার। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র শুক্রবার নবান্নে বলেন, ‘‘বাম সরকার আমাদের ঘাড়ে ঋণের জগদ্দল পাথর চাপিয়ে দিয়েছে। সেই ঋণের ফাঁদে পড়ে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। কেন্দ্র সমস্তটাই জানে। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এমন লঘু মন্তব্যে আমরা নিতান্তই মর্মাহত।’’
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের অবশ্য ব্যাখ্যা, পশ্চিমবঙ্গের ঋণের খুব সামান্যই কেন্দ্রের থেকে নেওয়া। বেশির ভাগই বাজার থেকে। সেই ঋণ মাফ করে দেওয়া কেন্দ্রের পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থমন্ত্রী সে কথাই বলেছেন।
কিন্তু রাজ্যের শাসক দলের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এ ভাবে দায় এড়াতে পারেন না। বাম আমলে কেন্দ্রের অনুমোদন নিয়েই লাগামছাড়া ঋণ নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আগের ইউপিএ ও বর্তমান এনডিএ সরকার, দু’জনকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন অমিত। তিনি বলেন ‘‘আমরা ইউপিএ সরকারের কাছে ঋণ মকুবের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কিছুই করেনি। এর পরে (এনডিএ-র কাছে) মুখ্যমন্ত্রী একাধিক বার ঋণ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু তারা আমাদের কোনও কথা কানে তো নেয়ইনি, উল্টে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সংসদে এ সম্পর্কে হালকা মন্তব্য করছেন।’’ অমিতবাবুর কটাক্ষ, ‘‘কেন্দ্র ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড (আইএমএফ) থেকে ৬৬ হাজার কোটি ধার নিয়ে তা গ্রিসের আর্থিক পুনর্গঠনে দিতে পারে। নিজের দেশের রাজ্যের দিকে তাকাতে পারে না!’’
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের ঋণের পরিমাণ ৩ লক্ষ ৪ হাজার ৯৪০ কোটি। ২০১১ সালে বামেরা ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় যা ছিল ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা। বিরোধীদের অভিযোগ, বাম জমানাকে দুষলেও নিজেদের পাঁচ বছরে বেনজির ঋণ নিয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের শাসক দলের পাল্টা জবাব, এই ঋণের অধিকাংশই খরচ হয়েছে আগের আমলের দেনা শুধতে। তারা পাঁচ বছরে ধার নিয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো। অমিতবাবুর আক্ষেপ, ‘‘যদি বকেয়া ঋণ বইতে না হতো, তা হলে রাজ্যের উৎপাদন (জিডিপি) চার গুণ বাড়ত।’’
এই অবস্থায় কেন্দ্রের উপরে চাপ বাড়াতে রাজ্যসভায় বেসরকারি বিল বা প্রাইভেট মেম্বার্স বিল নিয়ে এসেছেন তৃণমূল সাংসদ বিবেক গুপ্ত। ‘স্পেশ্যাল ফিনান্সিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স টু দ্য স্টেট অব ওয়েস্ট বেঙ্গল’ নামে ওই বিলটি এ দিনই পেশ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির উন্নয়নে কেন্দ্র বিশেষ আর্থিক সাহায্য দেবে। রাজ্য যাতে নিজেদের আর্থিক ক্ষমতা বাড়িয়ে উন্নয়নে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারে, তা দেখা হবে।’
মাস ছয়েক আগে বিবেকবাবু প্রথম এ বিষয়ে বেসরকারি বিল নিয়ে আসেন। তাতে বলা ছিল, ‘কেন্দ্র আইন করে পশ্চিমবঙ্গের ঋণের বোঝা কমাতে সাহায্য করবে।’ কিন্তু সেই বিলে কেন্দ্রের কোষাগার থেকে পশ্চিমবঙ্গকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব থাকায় সেটি অর্থ বিলের পর্যায়ে পড়ে যায়। কিন্তু কোনও বেসরকারি বিল অর্থ বিল হতে পারে না। তাই এ বার নতুন কলেবরে বিল পেশ করা হয়েছে। সাধারণ ভাবে কোনও আইন তৈরি করার জন্য সরকারই সংসদে বিল আনে। কিন্তু কোনও সাংসদ যদি মনে করেন যে কোনও আইন তৈরি করা উচিত, অথচ সরকার তা করছে না, তা হলে তিনি বেসরকারি বিল আনতে পারেন। সংসদের দুই কক্ষে পাশ হলে তা আইনে পরিণত হয়। যদিও এই ধরনের বিল পাশের নজির প্রায় নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy